কচ্ছপ এত ধীরে হাঁটে কেন

কচ্ছপ আর খরগোশের গল্পটা তো তোমরা পড়েছ। কচ্ছপ খুব ধীরে চলে বলে খরগোশ ওকে উপহাস করত। একদিন কচ্ছপ আর খরগোশ বনের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করে। খরগোশ ওর বোকামির জন্য হেরে যায়। আর কচ্ছপ ধীরে ধীরে হেঁটেও জিতে যায় দৌড়ে। এ গল্প থেকে আমরা মোটামুটি সবাই জানি, কচ্ছপ ধীর গতির প্রাণী। আসলেও তাই। কচ্ছপ ঘণ্টায় মাত্র ১৩০ থেকে ৩০০ মিটার যায়। এই দূরত্ব তুমি এক মিনিটের কম সময়ে দৌড়ে অতিক্রম করতে পারবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কচ্ছপ এত ধীর গতিতে কেন চলে?

কচ্ছপের ধীর গতিতে চলার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এরমধ্যে একটা ওদের শারীরিক গঠন। কচ্ছপের শরীরের মূল অংশ গঠিত হয় শক্ত খোলস দিয়ে। ওদের পিঠে যে শক্ত আবরণটা দেখা যায়, ওটাই খোলস। এই খোলসের আছে দুটি স্তর। ক্যারাপেস হলো ওপরের অংশ আর প্লাস্ট্রন নীচের অংশ। এই খোলসটি ওদের রক্ষা করলেও চলাফেরার সময় বাঁধা সৃষ্টি করে। খোলস এত ভারী যে দৌড়াতেও পারে না। তোমার পিঠে একটা বড় বাক্স চাপিয়ে দিলে যেমন হাঁটতে কষ্ট হবে, কচ্ছপের অবস্থাও অনেকটা সেরকম। তবে খোলসই ওদের ধীরগতির একমাত্র কারণ নয়।

আরও পড়ুন

কচ্ছপের পায়ের পাতা বিশেষ ধরনের। আকারে বড় এবং গোলাকার। ওদের পায়ের গঠন এমন যে একই সঙ্গে পানিতে ও স্থলে সমানভাবে কাজ করে। বড় পায়ের পাতার জন্য পানিতে সহজে সাঁতার কাটতে পারে। কিন্তু স্থলে হাঁটতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। এদের পায়ের ওজন বেশি হওয়ায় দ্রুত পা চালাতে পারে না। আবার পায়ের পেশি বড় না হলে এত বড় শরীর টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজেদের প্রয়োজনেই এরা ধীরে হাঁটতে বাধ্য হয়।

কচ্ছপ ধীর গতির প্রাণী হলেও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলজ উদ্ভিদ, মৃত প্রাণী এবং ছোট প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। জলাশয়ের তলা পরিষ্কার রাখতেও এদের ভূমিকা রয়েছে।

কচ্ছপের খাবারের কারণেও এরা ধীরে হাটে। এরা সাধারণত শাকসবজি, ফল ও ছোট ছোট প্রাণী খায়। ফলে ওদের বিপাকীয় হারও কম। মানে ওরা যদি অনেক ছোটাছুটি করত, তাহলে দ্রুত খাদ্য হজম হতো। তাছাড়া কচ্ছপ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। তাই শরীরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয় না। এ জন্য পানি বা খাবার ছাড়া এরা অনেক সময় থাকতে পারে। মোট কথা, খাবার যেহেতু বেশি লাগে না, তাই শিকার করারও কোনো তাড়া থাকে না। এ জন্য ওরা অলস সময় পার করতে পারে, চলে ধীরে। যদি খাবারের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হতো, তাহলে হয়ত আরও দ্রুত চলার সামর্থ্য অর্জন করত। এদের ধীরে চলার এটাও একটা কারণ।

শিকারের হাত থেকে বাঁচার জন্য কচ্ছপের এই ধীর গতি শাপে বর হয়েছে। শিকারি প্রাণী তো দ্রুত দৌড়ে আসে। কিন্তু কচ্ছপ তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে না। কারণ, ও জানে যে দৌড়ে পার পাওয়া যাবে না। তাই চুপ মেরে একজায়গায় বসে থাকে। শিকারি প্রাণী এলেই মাথাটা খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। তাছাড়া ওদের যে শক্ত খোলস, তা দেখতে অনেকটা পাথরের মতো। ফলে সহজেই ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। আর ওই খোলস ভেঙে ওদের শিকার করবে, এমন প্রাণীই বা কোথায়। এমনিতেও কচ্ছপকে শিকার করার মতো প্রাণীও খুব কম। সাধারণত কুমিরই ওদের বড় শত্রু। এছাড়া কিছু বড় পাখিও কচ্ছপ শিকার করে। মাঝেমধ্যে শেয়াল কচ্ছপের ডিম খেয়ে ফেলে বটে।

কচ্ছপ আর খরগোশ বনের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করছে

তবে কচ্ছপ ধীর গতির প্রাণী হলেও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলজ উদ্ভিদ, মৃত প্রাণী এবং ছোট প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। জলাশয়ের তলা পরিষ্কার রাখতেও এদের ভূমিকা রয়েছে।

আরও পড়ুন

ধীরে চলার কারণে এরা শান্ত থাকে। ওদের চাপ থাকে কম। তাই বেঁচে থাকে দীর্ঘকাল। অনেক কচ্ছপই ১০০ বছরের বেশি বাঁচে।

কচ্ছপের জীবন ব্যবস্থা থেকেও আমাদের শেখার আছে। ওরা ধীর গতিতে চললেও নিজেদের পরিবেশে খুব সফল। জীবনে তাড়াহুড়া করে সবকিছু হয় না। কোনো চাপের মুখে পড়লে ধীরেসুস্থে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধীর গতির কারণে কচ্ছপ শান্ত, নিরাপদ ও দীর্ঘায়ুজীবী প্রাণী।

সূত্র: এভরিথিং রেপটাইল ডট কম ও টরটয়েজ নলেজ ডট কম

আরও পড়ুন