দাবানলেরও আছে উপকার
এবার ৮-৯ জানুয়ারি লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী সান্তা মনিকা ও মালিবু এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। প্যাসাডেনা ও সান ফার্নান্দো উপত্যকার বেশ কয়েকটি অঞ্চলেও আগুনের প্রকোপ দেখা গেছে।
এই দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ‘প্যালিসেডস ফায়ার’ নামে পরিচিত একটি দাবানল ২১ হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। ১০ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত এর মাত্র ৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। আরেকটি বড় দাবানল ‘ইটন ফায়ার’ সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালায় ছড়িয়ে পড়ে ১৪ হাজার একরের বেশি এলাকা ধ্বংস করেছে।
ছোট আকারের দাবানলের মধ্যে ‘লিডিয়া ফায়ার’ ৪০০ একর এলাকা ধ্বংস করেছে এবং এটি ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সিলমার ও সান ফার্নান্দো ভ্যালির দাবানলগুলোও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে।
এই দাবানলে প্যালিসেডস ও ইটন এলাকায় প্রায় ১২ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং অন্তত ২৪ জন মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও বাতাসের তীব্র গতি এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এটি সম্ভব হয়নি। দাবানলের এই মৌসুমে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নতুন নয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে। শীতের বৃষ্টির আগমনে দাবানলের ঝুঁকি কমে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বৃষ্টির মৌসুম প্রায় এক মাস দেরিতে শুরু হচ্ছে। ফলে দাবানলের ঋতু আরও দীর্ঘ ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
এটি শুধু ক্যালিফোর্নিয়ায় নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাবানলের সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল পর্যবেক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে তা অনেক সময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দাবানলের প্রবণতা কেবল বাড়তেই থাকবে।
দাবানলের উপকারিতা
দাবানলের উপকারিতাদাবানল প্রাকৃতিকভাবে কিছু গাছের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন কিছু গাছ রয়েছে, যাদের বীজ থেকে অঙ্কুর গজানোর জন্য আগুনের উত্তাপ প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ চ্যাপারেল অঞ্চলের উদ্ভিদ, যেমন ম্যানজানিটা, চামিস (Adenostoma fasciculatum) এবং স্ক্রাব ওক (Quercus berberidifolia)। এদের বীজ আগুনের পরই অঙ্কুরিত হতে সক্ষম। এসব উদ্ভিদের পাতায় দাহ্য পদার্থ বেশি থাকে, যা আগুন ছড়াতে সহায়তা করে। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই দাবানল তাদের পুনর্জন্মের প্রক্রিয়ার অংশ। কিছু গাছের জন্য কয়েক বছরের ব্যবধানে, আবার কিছু প্রজাতির জন্য কয়েক দশকের ব্যবধানে দাবানলের প্রয়োজন হয়।
দাবানল প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর হলেও এটি প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ঝোপঝাড় ও আগাছা পরিষ্কার করে নতুন ঘাস, ভেষজ উদ্ভিদ এবং ঝোপের জন্মের সুযোগ তৈরি করে। পাশাপাশি ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগজীবাণু ধ্বংস করে। হালকা আগুন মাটির পুষ্টি বাড়ায় এবং সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছানোর জায়গা তৈরি করে, যা গাছপালার বৃদ্ধিতে সহায়ক। তবে মানুষের কার্যকলাপজনিত দাবানল কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়।
সূত্র: ট্রিহাগার, নিউইয়র্ক টাইমস ও হিস্ট্রি ডটকম