স্কিবিডি ওহাইও রিজলার বা ব্রেন রট

পাশে আছে অরণি। ১৩ বছর বয়স ওর। কিছু জানতে হলে ওকে জিজ্ঞেস করি। এবারও তা–ই করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ব্রেন রট কী? ও বলল, ‘স্কিবিডি ওহাইও রিজলার।’ তোমরা নিশ্চয়ই ওর ভাষাটা বুঝতে পেরেছ। ওর কাছেই প্রথম ‘স্কিবিডি টয়লেট’ সম্পর্কে জেনেছি। ও এটা জেনেছে স্কুলে বন্ধুদের মুখে। কেউ কেউ এটি ইউটিউব শর্টস দেখে শিখেছে। এটি খুব বেশি ব্যবহার করছে ওরা। মুখে মুখে শব্দটি ছড়িয়ে পড়েছে। ওরা নিজেই ব্রেন রট শব্দটিকে গ্রহণ করেছে। এটি ওদের নিজস্ব সময়ের প্রতীক। অনলাইন আসক্তি এবং কনটেন্টের নিম্নমান বোঝাতে ব্রেন রটের জুড়ি নেই।

অরণির ঘুম ভাঙলেই ফোন হাতে নিয়ে ইনস্টাগ্রাম রিলস বা ফেসবুকে চোখ বোলায়। তুমি যদি তেমন একটা অনলাইনে সময় ব্যয় না করো, বাস্তব জীবনে কাজ ও ঘোরাঘুরি করে তোমার দিন পার হয়, তবে লেখাটি তোমার জন্য নয়। এই লেখাটি অরণিদের জন্য, যারা সব সময় অনলাইনে থাকতে চায়।

অরণি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাটায়। বিভিন্ন স্ট্যাটাস, মিম দেখে যখন তখন হেসে কুটিকুটি হয়। কোনো পোস্ট দেখে রেগে যায়, আবার সঙ্গে সঙ্গে মুভ অন করে অন্য পোস্টে স্ক্রল করে চলে যায়। তোমার নিশ্চয়ই অরণিকে পরিচিত লাগছে। পরিচিত এই অরণিকে বোঝাতে এখন ডিকশনারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ব্রেন রট’। অরণির লক্ষণগুলো থাকলে তুমিও হয়তো ব্রেন রটের শিকার হচ্ছো।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০২৪ সালের শব্দ বা বাক্যাংশ হিসাবে ব্রেন রটকে নির্বাচন করেছে। এটি এমন একটি শব্দ, যা অনেক বেশি পরিমাণে নিম্নমানের অনলাইন কনটেন্ট গ্রহণের কারণে মানুষের মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থার অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শব্দটির ব্যবহার বেড়েছে ২৩০ শতাংশ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক অ্যান্ড্রু প্রিজবিলস্কি বলেন, শব্দটির জনপ্রিয়তা আমাদের সময়ের একটি প্রতিচ্ছবি। ব্রেন রট অন্য পাঁচটি শব্দ বা বাক্যাংশকে হারিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে। অন্য শব্দগুলো হলো ডিমিউর, রোমান্ট্যাসি, লোর, স্লোপ এবং ডায়নামিক প্রাইসিং।

আরও পড়ুন

ব্রেন রট হলো এমন একটি অবস্থা, যা মানুষের মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অবনতিকে নির্দেশ করে। বিশেষ করে অনেক পরিমাণে তুচ্ছ বা অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট গ্রহণের ফলাফল বলে ধরা হয়। ইন্টারনেটের জন্মের অনেক আগেই শব্দটি ব্যবহার হতো। ১৮৫৪ সালে হেনরি ডেভিড থরো তাঁর বই ‘ওয়ালডেন’–এ এই শব্দের উল্লেখ করেন। তিনি সমাজের জটিল ধারণাগুলোকে তুচ্ছ করার প্রবণতা এবং এটি কীভাবে মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার সাধারণ অবনতির অংশ, তা সমালোচনা করতে এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘যখন ইংল্যান্ড আলু পচা সারাতে চেষ্টা করছে, তখন কেউ কি ব্রেন রট সারানোর চেষ্টা করবে না—যা আরও বেশি ব্যাপক ও ক্ষতিকর?’

বর্তমান সময়ে এই শব্দ প্রথম ব্যবহার করেছে জেন–জি। পরে জেন আলফার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শব্দটি জনপ্রিয়তা পায়। এখন এই শব্দ সবখানে ব্যবহার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিম্নমানের কনটেন্ট বর্ণনা করতে ব্যবহার হচ্ছে এই শব্দ। অধ্যাপক প্রিজবিলস্কি অবশ্য বলেছেন, ‘ব্রেন রট আসলে কোনো বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা নয়। এটি বরং আমাদের অনলাইন জগৎ নিয়ে অসন্তুষ্টির প্রকাশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে আমাদের উদ্বেগের একটি প্রতীক।’

আরও পড়ুন

অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্রাথওল বলেছেন, ‘গত দুই দশকে অক্সফোর্ডের ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ারগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, আমাদের ভার্চ্যুয়াল জীবন কীভাবে বিকশিত হচ্ছে এবং ইন্টারনেট সংস্কৃতি কীভাবে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট সংস্কৃতি নিয়ে সমাজের ক্রমবর্ধমান চিন্তা স্পষ্ট হয় এই তালিকা থেকে।’ তিনি আরও বলেন, গত বছরের বিজয়ী শব্দ ‘রিজ’। এটি ছিল একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ। এই শব্দ থেকে বোঝায়, ভাষা কীভাবে অনলাইনে তৈরি হয়। ব্রেন রট ভার্চ্যুয়াল জীবনের বিপদের একটি প্রতিচ্ছবি। আমরা কীভাবে আমাদের অবসর সময় ব্যয় করছি, তা নিয়ে আলোচনা করে এটি।

অরণির বয়সীরা এখনো ব্রেন রট থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে না। ওদের অবশ্য দোষ নেই। ডিজিটাল আসক্তি আমাদের সব জেনারেশনের জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে।

সূত্র: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ও বিবিসি

আরও পড়ুন