পৃথিবীতে ঠিক কতগুলো মাছ, তা সংখ্যায় বলা কঠিন। কারণ, প্রতিনিয়ত মাছের সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীতে ঠিক কতজন মানুষ আছে, এটা যেমন কাঁটায় কাঁটায় বলা সম্ভব নয়, মাছের ব্যাপারটাও তেমনি। তবে গবেষকদের একটা অনুমান আছে। সেই অনুমান অনুসারে পৃথিবীতে কত মাছ থাকতে পারে, তা ধারণা করা যায়। মাছের সংখ্যাটা জানার আগে জানতে হবে, গবেষকেরা মাছের হিসাব করেন কীভাবে?
মাছ গণনার নানাবিধ পদ্ধতি আছে। যেমন সাবমেরিন, স্যাটেলাইট, ড্রোন ও জিপিএস সেন্সরের ব্যবহার। এগুলোর পাশাপাশি মাছশুমারি করা হয়। গবেষকেরা সমুদ্রের নিচে ক্যামেরা নিয়ে বসে থাকেন। মাছের ঝাঁকের ছবি তোলেন। একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ে কতগুলো মাছ দেখা যায়, সে হিসাবে ওই সমুদ্রের মাছের আনুমানিক হিসাব বের করেন। এভাবে সম্পূর্ণ পৃথিবীতে কী পরিমাণ মাছ থাকতে পারে, তা অনুমান করেন।
তবে এ হিসেব যে সম্পূর্ণ ঠিক নয়, তা বুঝতেই পারছ। কারণ, সব অঞ্চলে সব সময় সমান হারে মাছ থাকে না। ফলে বিজ্ঞানীদের কাছে মাছের যে হিসাব আছে, তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কিন্তু বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। মানে একেবারে কিছু না জানার চেয়ে কাছাকাছি একটা অনুমান অন্তত থাকা ভালো। সেই অনুমানটাই করেন বিজ্ঞানীরা। এখানে সেটাই বলার চেষ্টা করছি।
পৃথিবীতে প্রায় ৩৪ হাজার ৯০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এটাও একদম সঠিক নয়। কারণ, প্রতিবছর গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ নতুন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। ফলে তুমি যখন লেখাটি পড়ছ, তখন হয়ত আরও দুটি নতুন প্রজাতির মাছ খুঁজে পাওয়া গেছে। এত নতুন নতুন প্রজাতি কেন খুঁজে পাওয়া যায়?
কারণ, বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর জলরাশির মাত্র ২০ ভাগ খুঁজে দেখেছেন। আরও ৮০ ভাগে এখনো মানুষের পা পড়েনি। সেখানে যে আরও কত লাখ লাখ প্রজাতির মাছ আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এই অনাবিষ্কৃত অংশ থেকেই প্রতিবছর বিজ্ঞানীরা নতুন মাছের প্রজাতি খুঁজে পান। এই খুঁজে পাওয়া ২০ শতাংশের হিসাবে অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মাছ আছে। ট্রিলিয়ন কী জানো?
১-এর পরে ১২টা শূন্য বসালে হয় ১ ট্রিলিয়ন। ১০০ লাখে হয় ১ কোটি। সেরকম এক লাখ কোটিতে হয় এক ট্রিলিয়ন। তুমি এটাকে এক হাজার বিলিয়নও বলতে পার। এক বিলিয়নে হয় ১০০ কোটি। সে হিসেবে পৃথিবী প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিলিয়ন বা সাড়ে তিন হাজার লাখ কোটি মাছ আছে।
বাংলাদেশে কত প্রজাতির মাছ আছে জানো? প্রথম আলোর তথ্যমতে, দেশে এখন মোট ১ হাজার ৬ প্রজাতির মাছ আছে। এরমধ্যে সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি ৭৪০টি এবং স্বাদুপানির প্রজাতি ২৬৪টি।
এত্ত মাছের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় হোয়েল শার্ক। প্রায় ৪০ ফুট লম্বা এ মাছের ওজন প্রায় ১৫ টন। এক টনে ১ হাজার কেজি। দেখতে তিমির মতো হলেও এরা আসলে তিমি নয়। তবে তিমির মতো শিকারকে গিলে খায় এরা। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় হোয়েল শার্কের ওজন রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক ৫ টন।
আর বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মাছের খেতাব পেয়েছে অ্যাঙ্গেলফিশ। এগুলোর আকার মাত্র কয়েক মিলিমিটার। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো অ্যাঙ্গেলফিশটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার।
সূত্র: এ-জেড-অ্যানিমেলস ডট কম ও ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস ডট কম