বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনসার্ট কোনটি
অলিম্পিক কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ উপস্থিত হন। সেখানেও থাকে গানের আয়োজন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কনসার্টগুলোর মধ্যে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কনসার্ট জায়গা পেয়েছে বেশ কয়েকবার। কারণ, অলিম্পিকের কনসার্টে মাঝেমধ্যে লাখ লাখ মানুষ একত্র হন। আজ ইতিহাসের বৃহত্তম কনসার্টের কথা জানব। পাশাপাশি বলব আরও চারটি কনসার্টের কথা। এই তালিকাটি নেওয়া হয়েছে হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ওয়েবসাইট থেকে। এর বাইরে বৃহত্তম কনসার্টের অন্যান্য তালিকাও পাওয়া যায়।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনসার্ট হিসেবে স্বীকৃত মস্কোর জিন-মিশেল জারের কনসার্ট। সাধারণত বিশ্বের বেশির ভাগ বড় কনসার্টের রেকর্ড দখল করে জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো। কিন্তু ব্যান্ডের সদস্য না হয়েও জার এই কীর্তি করতে পেরেছেন। জিন-মিশেল জার একজন সুরকার। ফরাসি এই সুরকার গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। এখনো ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী তিনি। ফ্রান্সের প্যারিস ও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে তিনি একাধিক শো করেছেন, যেখানে ১০ লাখের বেশি শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় কনসার্টটি করেন ১৯৯৭ সালে। রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের সামনে তিনি গান গেয়ে শোনান। এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় ওপেন-এয়ার কনসার্ট।
জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম কনসার্টেও প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের সমাগম ছিল। এই কনসার্ট আয়োজিত হয় ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয়। ব্রাজিলের কোপাকাবানা সৈকতে এই কনসার্ট আয়োজিত হয়েছিল বলে এর নাম হয়ে যায় কোপাকাবানা বিচ কনসার্ট। এই কনসার্টে এত মানুষ এসেছিলেন মূলত রড স্টুয়ার্টের জন্য। যাহোক, দর্শক যেহেতু সমানসংখ্যক ছিল, তাই স্টুয়ার্টের ভক্তরা দাবি করতেই পারেন যে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনসার্ট। সে দাবি করলেও যে খুব ভুল হবে, তা নয়। কারণ, এত মানুষ নিশ্চয়ই কেউ ঠিকভাবে গুনে দেখেননি। তবে আমরা দুটি কারণে রডের এই কনসার্টকে দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছি। প্রথমত, এই কনসার্ট হয়েছিল সমুদ্রের তীরে। ফলে সেখানকার গণনা ঠিকভাবে হয়নি। কিছুটা অনুমাননির্ভর ছিল, হতে পারে সেখানে জনসংখ্যা ৪০ লাখ ছিল। আবার ৩০ লাখ হওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু জারের কনসার্টে মানুষ এসেছিলেন টিকিট কেটে। তাই যেহেতু জারের কনসার্টের হিসাব ব্রাজিলের কনসার্টের চেয়ে বেশি সঠিক, তাই ওটাকে প্রথম স্থানে রেখেছি। দ্বিতীয় কারণটা হলো, জারের কনসার্ট হয়েছে রডের কনসার্টের পরে। ক্রিকেটে এমন একটা নিয়ম আছে। ধরো, টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মুশফিকুর রহিম, ২১৯। এখন লিটন দাসও যদি কোনো টেস্টে এক ইনিংসে ২১৯ রান করে আউট হয়ে যান, তাহলে লিটন দাস থাকবেন সিরিয়ালের ওপরে। কারণ, লিটন দাস পরে এসে মুশফিকুর রহিমের সমান রান করেছেন। সেই বিবেচনায়ও জারের কনসার্টকে প্রথমে রাখা যায়।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কনসার্টটি মস্কোয় হয়েছে। এই কনসার্টের নাম ‘মনস্টার অব রক’। গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে অনেক কনসার্ট আয়োজিত হয়েছে। এটিও তেমন একটি কনসার্ট, যা আয়োজিত হয়েছিল রাশিয়ার মস্কোর তুশিনো এয়ারফিল্ডে। এই কনসার্টকে ঐতিহাসিক কনসার্টও বলা যায়। কারণ, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঠিক পরে আয়োজিত হয়েছিল এই কনসার্ট। তখনকার সময়ের বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যান্ড, যেমন এসি/ডিসি, মোটলি ক্রু, দ্য ব্ল্যাক ক্রোজ ও প্যান্টেরার মতো ব্যান্ড এই কনসার্টে গান গেয়েছিল। এখানে মোট ১৬ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।
জারের কনসার্টে মানুষ এসেছিলেন টিকিট কেটে। তাই যেহেতু জারের কনসার্টের হিসাব ব্রাজিলের কনসার্টের চেয়ে বেশি সঠিক, তাই ওটাকে প্রথম স্থানে রেখেছি। দ্বিতীয় কারণটা হলো, জারের কনসার্ট হয়েছে রডের কনসার্টের পরে।
১৯৯০ ও ২০০০ সালের দিকে লাভ প্যারেড ইউরোপজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। লাভ প্যারেড হলো ইলেকট্রনিক ড্যান্স মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। ১৯৮৯ সালে জার্মানির পশ্চিম বার্লিনে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালে জার্মানির ডর্টমুন্ড ইভেন্টে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ এই ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম কনসার্টও ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর কোপাকাবানা বিচে হয়েছে। ২০০৬ সালে রোলিং স্টোন ব্রাজিলের রিও-তে এসেছিলেন। তখন তাঁর প্রায় ১৫ লাখ ভক্ত তাঁদের গান শুনতে সেখানে গিয়েছিলেন। রোলিং স্টোনের জীবনের সবচেয়ে বড় শো এটিই। তবে ২০২৪ সালের ৪ মে একই জায়গায় সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা পারফর্ম করেন। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী সেখানে অংশগ্রহণ করে ১৬ লাখ মানুষ। এই দিক থেকে এটিকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম কনসার্টও বলা যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাঁচটি শোর দুটি রাশিয়ার মস্কোয় আয়োজিত হয়েছে, দুটি আয়োজিত হয়েছে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয়, আর একটি জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে। অলিম্পিকে অনেক মানুষ একসঙ্গে হলেও এসব রেকর্ড এখনো ছাড়িয়ে যায়নি। এর একটা বড় কারণ, মানুষ এখন ঘরে বসেই এই উৎসব দেখতে পারেন। যেমন সদ্য শেষ হওয়া প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছেন প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। তবে এর মধ্যে মাত্র তিন লাখ মানুষ সরাসরি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা দেখেছেন টেলিভিশনে। তবে হতে পারে ভবিষ্যতে কোনো একদিন কনসার্টে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। যদিও এ আধুনিক যুগে সে সম্ভাবনা খুবই কম।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস