মঙ্গোলিয়ার নাদাম উৎসব

মঙ্গোলিয়ার কথা উঠলেই চেঙ্গিস খানের নাম আসে সবার আগে। ‘রক্তপিপাসু’ ও ‘নির্মম’ শাসক হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে তাঁর। তবে মঙ্গোলিয়ার জনগোষ্ঠীর মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ঠিক চেঙ্গিস খান ঘরানার নয়। এই দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব দেখলে এ কথার সত্যতা বোঝা যায়। এর নাম ‘নাদাম উৎসব’। মঙ্গোলিয়া ছাড়াও চীনের মঙ্গোল অধ্যুষিত এলাকায় এই উৎসব হয়।

নাদাম উৎসবের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। প্রাচীনকালে মঙ্গোল রাজা ও যোদ্ধারা সারা বছর ধরে সৈন্য ও ঘোড়াগুলোকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতেন। সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে ও প্রশিক্ষণের একঘেয়েমি কাটাতে তাঁরা সেনাদের মধ্যে তিনটি খেলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করতেন। কুস্তি, তির নিক্ষেপ ও ঘোড়দৌড়। এই প্রতিযোগিতার সূত্র ধরে এখন হয় নাদাম উৎসব। ২০১০ সালে ইউনেসকো ‘সাংস্কৃতিক হেরিটেজ’ হিসেবে নাদাম উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরের জাতীয় স্টেডিয়ামে বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্যারেড এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তিন দিন ধরে চলে এই উৎসব।

নাদাম উৎসবের মূল আকর্ষণগুলোর একটি কুস্তি। যে কুস্তিগির জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হন, তাঁকে মঙ্গোলীয়রা বিশেষ মর্যাদা দেন। বলা হয়, চেঙ্গিস খান সেনাবাহিনীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য ঠিক রাখতে কুস্তি খেলায় জোর দিতেন।

১ / ৪
বিশেষ খেলা তির নিক্ষেপ। মঙ্গোলীয় নারী–পুরুষ এই প্রতিযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আরেকটি বিশেষ খেলা তির নিক্ষেপ। মঙ্গোলীয় নারী–পুরুষ এই প্রতিযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। নারী প্রতিযোগীরা ৬০ মিটার দূরের লক্ষ্যে ২০টি তির ছোড়ার সুযোগ পান। পুরুষ প্রতিযোগীরা ৭৫ মিটার দূরে ৪০টি তির ছুড়তে পারেন।

নাদাম উৎসবের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ঘোড়দৌড়। এখানে অংশগ্রহণ করে ৬-১২ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীরা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ঘোড়ার ঘামকে সুখের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর দর্শকেরা বিজয়ী ঘোড়ার পায়ের নিচে চাদর বিছিয়ে দেন এবং নিজেদের বাড়িতে সেই চাদর ব্যবহার করেন।

মঙ্গোলিয়ার জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় নাদাম উৎসবকে। গৌরবোজ্জ্বল অতীত স্মরণ করার উপায় এটি।