অনেকের শীতকাল ভালো লাগে। এই সময়টা উপভোগ করে তারা। শীতকাল যাদের ভালো লাগে, তাদের কাছে প্রশ্ন, কতটুকু ঠান্ডা তুমি সহ্য করতে পারো? রাশিয়ার ইয়াকুতস্ক শহরে যে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা পড়ে, তা নিশ্চয়ই তোমার সহ্যের বাইরে। কারণ, রাশিয়ার ইয়াকুতস্ক এমন একটি শহর, যেখানে চরম ঠান্ডা অনুভূত হয়। ইয়াকুতস্ক বিশ্বের শীতলতম শহর!
২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি একটি নতুন রেকর্ড গড়ে ইয়াকুতস্ক। এখানে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট-এ (মাইনাস ৬২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস!)। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানি বরফ হয়। তাহলে ভেবে দেখো, মাইনাস ৬২ দশমিক ২ ডিগ্রিতে কী অবস্থা হবে। প্রায় দুই দশকের মধ্যে তাপমাত্রা এর চেয়ে কমেনি। শহরটি আর্কটিক অঞ্চল (সবচেয়ে শীতলতম অঞ্চল) থেকে ২৮০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।
অন্যান্য জায়গার চেয়ে ইয়াকুতস্ক আলাদা। ঠান্ডায় স্থায়ীভাবে জমে গেছে এখানকার মাটি। দুই বছর বা এর বেশি সময় ধরে মাটি জমে থাকলে বলে পারমাফ্রস্ট। এখানকার মাটি সারা বছর ধরে হিমায়িত থাকে। ১৮৯১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইয়াকুতস্কে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৮৩.৯২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ৬৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
শীতকালে বরফের ঘন কুয়াশায় আবৃত থাকে ইয়াকুতস্ক। বাতাস খুব শীতল থাকে। বাড়ি, মানুষ এবং গাড়ি থেকে গরম বাতাস ওপরে উঠতে পারে না। পরিবেশ থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন। বরফে ছেয়ে যায় সবকিছু।
ইয়াকুতস্কে উষ্ণ থাকার জন্য একটি সহজ কৌশল ব্যবহার করে স্থানীয়রা। বহু স্তরের পোশাক পরে তারা। গায়ের জামাকাপড়ের স্তর শরীরের উত্তাপকে আটকে রাখে এবং শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। পরতে পরতে মোড়ানো কাপড়কে তুলনা দেওয়া যায় আরামদায়ক বাঁধাকপির সঙ্গে! শুধু ধরে নিতে হবে বাঁধাকপির পোশাকে একজন মানুষ শীত দূর করছে। বাসার বাইরে সব সময় এই কৌশল কাজ করে না। সবচেয়ে ভালো উপায় নিজ বাসায় থাকা।
হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রায় কীভাবে দিন পার করতে হয়, শীত কীভাবে সহ্য করতে হয়, তা জানে ইয়াকুতস্কের মানুষ। এ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তারা, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। রাস্তায় সারিবদ্ধ গাছ থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি হওয়া মাছ পর্যন্ত এই শহরের সবকিছুই বরফে ঢাকা থাকে। এগুলো ঠান্ডায় এত জমে যায়, এগুলো দিয়ে হাতুড়ি হিসেবে কাঠে পেরেক ঠোকা যাবে। এখানে বাইরে থাকা কলাও পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। ১০ মিনিটের বেশি খোলা জায়গায় রেখে দিলে সব জিনিস খুব দ্রুত জমে যায়। যেখানে আমরা তাপমাত্রা স্বাভাবিক থেকে একটু বেড়ে গেলে বিরক্ত বা হতাশ হই, ইয়াকুতস্কে উল্টো, যেখানে রাস্তা, বাজার, গণপরিবহন, সুপারমার্কেট, হোটেল, কফির দোকান, রেস্তোরাঁ এবং প্রাথমিক অবকাঠামোর অন্যান্য সাধারণ পরিবর্তন বুঝতে পেরে আনন্দ করে সবাই।
ইয়াকুতস্কে শীতকালে বাতাস এত ঠান্ডা যে খোলা জায়গায় থাকলে ত্বককে জমিয়ে ফেলতে পারে। ফলে ফ্রস্টবাইট হতে পারে। এই শহরে হাতের গ্লাভস ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হওয়ার কথা চিন্তাও করে না। এমনকি পাঁচ মিনিটের জন্য হাত বের করলে হতে পারে ফ্রস্টবাইট। লোহা বা অ্যালুমিনিয়ামের কোনো কিছু স্পর্শ করলে সেটার সঙ্গে লেগে যায় গায়ের ত্বক।
এই শীতল আবহাওয়ার কারণে সাধারণত কেউ ইয়াকুতস্কে বেড়াতে যায় না। তবে কিছু দুঃসাহসী মানুষ আছেন, যাঁরা পৃথিবীর শীতলতম স্থান উপভোগ করতে আসেন এই শহরে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাইবেরিয়ান আর্কটিক অঞ্চলে ঘন ঘন চরম আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। তীব্র শীত যার উদাহরণ।