তোমরা কি লক্ষ করেছ বিড়াল যখন কোনো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে তখন সব সময় সে তার চার পায়ের ওপরই পড়ে। মাথা নিচে থাকলে তো চুরমার হয়ে যেত। চার পায়ের ওপর পড়াটাই বিড়ালের বিশেষ কৌশল। এটাই তাকে বাঁচায়। প্রশ্ন হলো শরীরটা সে কীভাবে সামলায়, যেন সব সময় ঠিক চার পায়ের ওপরই পড়ে? সেটা বলছি। তার আগে আরও কিছু সুবিধার কথা বলি, যা বিড়ালের আছে।
একটা তো আমরা সবাই বুঝি তার পায়ের নিচে খুব নরম কার্পেটের মতো পেশি আছে। ফলে আঘাতটা কম পায়। আবার এটাও ঠিক যে ওজনের তুলনায় বিড়ালের শরীরের বিস্তৃতি বেশি। প্রয়োজনে সে গা ফুলিয়ে শরীরের আয়তন একটু বাড়িয়ে নিতে পারে। উঁচু থেকে নিচে পড়ার সময় এভাবে সে বাতাসের বাধা একটু বাড়িয়ে নেয়। ফলে মাটিতে পড়ার সময় আঘাত একটু কমিয়ে নিতে পারে। নিচে পড়ার সময় প্রথমে সে তার চার পা ছড়িয়ে দিয়ে বাতাসের বাধা আরও কমায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে চার পা শরীরের ভেতরের দিকে নিয়ে আসে। এভাবে না হয় বিড়াল কিছুটা ধাক্কা সামলায়। কিন্তু চার পায়ে মাটিতে পড়ে কীভাবে?
এটা হলো তার প্রাগৈতিহাসিক যুগের কৌশল। তখন সে গাছে গাছে থাকত। খাবারের সন্ধানে এক গাছ থেকে আরেক গাছের ডালে লাফিয়ে যেতে হতো এবং প্রায়ই পা ফসকে মাটিতে পড়ে যেত। এ জন্য বিড়ালের একধরনের সূক্ষ্ম অনুভূতি বা রিফ্লেকস অ্যাকশন কাজ করে। পড়ার সময় সে বুঝতে পারে কোনটা নিচ আর কোনটা ওপরের দিক। এই বোধই তাকে বাঁচায়। মাটিতে পড়ার পূর্বমুহূর্তে সে তার চার পায়ের ওপর পড়ার ব্যবস্থা করতে পারে এবং এ জন্যই সে টিকে গেছে। আজ বনে থাকলে সে অবশ্য গাছে গাছেই লাফিয়ে বেড়াত। এরপর একসময় সে আমাদের আদর পেল। বাসায় এল। কিন্তু তার সেই পুরোনো কৌশলটি ভুলে গেল না। এখনো যদি কোনো উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যায়, তাহলে সে নিচ-ওপরের জ্ঞানটা কাজে লাগায়। তা ছাড়া তার শরীরের অঙ্গগুলো খুব শিথিল বন্ধনে থাকে। তার পাগুলো বেশ লম্বা, নরম পেশিবহুল এবং পা চারটি শরীরের নিচের দিকে ভেতর পর্যন্ত অনেকটা প্রসারিত। এগুলো অনেকটা ধকল সহনীয় ব্যবস্থা (শক অ্যাবজরবার) হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে ওপর থেকে পড়ার সময় সে তার শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এদিক-ওদিক করে ঠিক চার পায়ের ওপর যেন পড়ে, সে ব্যবস্থা করতে পারে। এটুকু করতে পারলেই তার আর চিন্তা নেই। মাটিতে ঝুপ করে পড়েই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে। যেন কিছুই হয়নি। তারপরই মধুর কণ্ঠে ম্যাঁয়াও বলে হাঁটা শুরু করে। তবে খুব বেশি উঁচু থেকে পড়লে বিড়াল ব্যথা পায়। তাহলে তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।