বিচিত্র
আমরা স্বপ্ন দেখি কোন ভাষায়
কোন ভাষায় স্বপ্ন দেখো তুমি? নিজের ভাষাতেই তো! কিন্তু অন্য ভাষা কিছুটা জানা থাকলে সেই ভাষাতেও তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো। হতে পারে তোমার নিজের ভাষা বাংলা; কিন্তু ইংরেজি, জার্মান বা অন্য কোনো ভাষা জানলে ঘুমের ভেতর নিজের ভাষার সঙ্গে তা সমন্বয় করে মস্তিষ্ক বহুভাষিক স্বপ্ন নিয়ে আসে। আর এই স্বপ্ন কিন্তু মানুষের বাস্তব জীবনের ভাষাদক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বপ্নে আসা ভাষার অনুবাদ
অনেকেই আছেন, যাঁরা দিনে বিভিন্ন ভাষায় কাজ করেন বা যাঁরা শুধু একটি বিদেশি ভাষা শিখছেন, তাঁরাও স্বপ্নে সেই ভাষাগুলোই ব্যবহার করেন। আমরা দিনে যে ভাষায় কথা বলি, রাতের বেলায় তার রেশ থাকে। বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাঁরা জেগে থাকার সময় যেমন ইশারা ভাষায় যোগাযোগ করেন, স্বপ্নেও ঠিক তেমন ইশারা ভাষাতেই যোগাযোগ করেছিলেন।
বহুভাষিক স্বপ্ন মূলত একটি জটিল ব্যাপার। দিনে ব্যবহার করা ভাষার টুকরা টুকরা অংশ এলোমেলোভাবে আবারও আনার পরিবর্তে মস্তিষ্ক দিনের বেলার সব ধরনের উদ্বেগ, স্মৃতি ও সমস্যার সঙ্গে সেগুলোকে সমন্বয় করে ফেলে বলে মনে হচ্ছে। এমনকি এটি একটি অচেনা ভাষায় সম্পূর্ণ সংলাপও তৈরি করতে পারে।
স্বপ্নের এই ভাষাগুলোকে অনেকেই নির্দিষ্ট উপায়ে ব্যক্তি, অবস্থান বা জীবনের স্তর অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করেন বলে মনে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মানুষ বাস্তব জীবনে যে ভাষায় কথা বলেন, স্বপ্নেও মূলত একই ভাষায় কথা বলেন। হোক সে স্বপ্ন শৈশবের বাড়ি কিংবা শৈশবে শেখা ভাষা। স্বপ্নের ভাষাগুলো সংস্কৃতিগত প্রশ্নের সঙ্গে স্তরীভূত হতে পারে। যেমন একজন থাই-আমেরিকান নারী তাঁর মৃত বোনের জন্য পোশাক কেনার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ ছাড়া থাই ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর ভাতিজির সঙ্গে পছন্দ নিয়ে বিতর্ক করেছিলেন। স্বপ্নেই কিন্তু ঘটেছিল এসব।
এ ছাড়া ভাষাগত উদ্বেগ নিয়েও স্বপ্ন আছে। এমন স্বপ্নে বক্তা নিজে একটি বিদেশি ভাষা বোঝার জন্য লড়াই চালিয়ে যান। এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় চলে যেতে হয়। আর স্বপ্নের ভেতরেই এসব শব্দের সন্ধান করতে হয়।
একটি পোলিশ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন একটি ইংরেজি শব্দের স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু শব্দটি তিনি কিছুতেই তখন বুঝতে পারেননি। পরে ঘুম ভাঙলে তিনি বুঝতে পারেন, শব্দটি ছিল ‘haphazard’। ক্রোয়েশিয়ার একজন অংশগ্রহণকারী ইতালীয়, জার্মান ও ইংরেজিতে একজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অথচ তাঁরা উভয়ই পোলিশ ভাষায় কথা বলেন।
ঘুমগবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের স্বপ্নের সঠিক কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিন। স্বপ্ন সাধারণত এখনো একটি রহস্যময় ঘটনা। আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে ও কেন ভাষাগুলোকে প্রক্রিয়া করে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও নতুন শব্দ শেখে, তা জানতে হবে।
ঘুমের ভেতর শব্দ শেখা
ঘুম ও ভাষার মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে হলে আগে নিজের ভাষার বিষয়গুলো জানতে হবে। অনেকেই ভাবতে পারেন, তিনি মাতৃভাষা অনেক আগেই রপ্ত করেছেন, কিন্তু তিনি আসলে এখনো তা শিখেই যাচ্ছেন। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাও তাঁদের মাতৃভাষায় প্রতি দুই দিনে একটি করে নতুন শব্দ শেখেন।
ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং স্লিপ, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড মেমোরি ল্যাবের প্রধান গ্যারেথ গাসকেল বলেছেন, ‘অবশ্যই আমরা যখন শিশু থাকি, তখন অনেক নতুন শব্দ শেখা হয়, বিশেষ করে প্রথম ১০ বছরে। কিন্তু আমরা লক্ষ করি না যে এটি আমরা সব সময়ই করে থাকি।’
গ্যারেথ গাসকেল বলেন, যখন কেউ একটি নতুন শব্দ শেখেন, তখন তাঁরা ক্রমাগত সেই শব্দের চারপাশে নিজেদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ‘ব্রেকফাস্ট’ শব্দটির উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, এই একটি শব্দ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন আরেকটি একই ধরনের শব্দ আসে, তখন তা সেই বিদ্যমান শব্দের চারপাশে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দেয়।
‘পাঁচ বছর ধরে এই ঘটনা ঘটছে। আপনি “ব্রেক্সিট” শব্দটি শিখেছেন (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া), আর এই শব্দটিই “ব্রেকফাস্ট” শব্দের একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে এসেছে’—বলেছেন গ্যারেথ।
নতুন শব্দ ‘ব্রেক্সিট’ মানুষের মনে আগে থেকে থাকা শব্দ ‘ব্রেকফাস্ট’–এর সঙ্গে যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তখন শব্দ দুটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অনেকে একটি শব্দ বলতে গিয়ে উচ্চারণ কাছাকাছি হওয়ায় অন্য শব্দ বলে ফেলতেন। নতুন শব্দটি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে ও অন্য শব্দটি থেকে এটিকে আলাদা করতে বিদ্যমান জ্ঞানের সঙ্গে এটার যোগাযোগ ঘটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাসকেল ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ঘুমের সময় পুরোনো ও নতুন জ্ঞানের সমন্বয় ঘটে। মানুষের মস্তিস্কের একটি অংশ হলো হিপোক্যাম্পাস। এটি মানুষের স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী। হিপোক্যাম্পাস আসলে মস্তিষ্কে নতুন স্মৃতির রেশ তৈরি করে, যদিও সেই রেশগুলো হিপোক্যাম্পাসে তৈরি হয় না (হলে হিপোক্যাম্পাসের সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিও নষ্ট হয়ে যেত)। দিনে হিপোক্যাম্পাস দ্রুত তথ্য শোষণ করে, নতুন শব্দ ধারণ করে। আর রাতে এটি মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে (যেখানে সংরক্ষণ করা যায় ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়) নতুন তথ্যগুলো পাঠিয়ে দেয়। এটি যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক শব্দ বাছাই করতে এবং প্রতিযোগী শব্দগুলো দমন করতে সহায়তা করে।
ঘুম ও ভাষার সম্পর্ক
গাসকেলের মতে, শব্দটি প্রথম বা দ্বিতীয় যে ভাষাতেই হোক না কেন, সেই বাছাই ও দমনের প্রক্রিয়া মূলত একই। বহুভাষী মানুষের ক্ষেত্রেও বিদেশি শব্দগুলো মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে থাকে, সেগুলো একইভাবে বেছে নেওয়া বা দমন করা হয়।
গ্যারেথ গাসকেল বলেন, ‘আপনি কল্পনা করতে পারেন, আপনার স্মৃতিতে বিভিন্ন ধরনের ট্যাগ রয়েছে। আপনি যদি জার্মান ও ইংরেজি শব্দের জন্য মানসিক অভিধান পেয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিটি শব্দের ভাষার জন্য ট্যাগও হয়ে আছে। আপনি কেবল কথা বলার জন্য সেসব শব্দ বাছাই করবেন, আর বাকি অর্ধেক দমন করে রাখবেন।’
তাহলে দুই ভাষায় কথা বলা মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ক্ষেত্রে কী ঘটে? তাঁরা কি স্মৃতির ভেতর থেকে রক্ষিত ভাষার মাধ্যমে অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেন?
সমন্বয় ও একত্রকরণ প্রক্রিয়াটি গভীর ঘুম বা অল্প ঘুমের পর্যায়ে ঘটে। পর্যায়টি ধীর মস্তিষ্কের তরঙ্গ এবং উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি স্পিন্ডলের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। আর জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় দেখা ওই স্বপ্ন একটি ভিন্ন পর্যায়ে ঘটতে থাকে। এটি র৵াপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) পর্যায় নামে পরিচিত।
গাসকেল বলেন, কেউ কেউ যুক্তি দেন যে সমন্বিতকরণের পুরো প্রক্রিয়ায় আরইএম ঘুমের একটি ভূমিকা আছে। এর ভূমিকা হলো বিষয়গুলোকে পরিপাটি ও মসৃণ করা। আমরা জানি, দিনে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ও নতুন শব্দ শিখতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের বার্ন ইউনিভার্সিটির হসপিটাল অব ওল্ড এজ সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোথেরাপি–বিষয়ক গবেষক দলের প্রধান মার্ক জাস্ট। তিনি বার্ধক্য, ঘুম ও স্মৃতিশক্তিবিশেষজ্ঞ। সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ‘টোফার’–এর মতো ছদ্ম শব্দ তৈরি করেছেন। এসব শব্দের সঙ্গে ‘বাউম’ (বৃক্ষ)–এর মতো জার্মান শব্দের জোড়া যুক্ত করেছেন। এলোমেলো ও দুর্ঘটনাজনিত শব্দ সংযোগ থেকে মুক্ত ছিল কি না, তা নিশ্চিত করতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এরপর ঘুমিয়ে থাকার সময় অংশগ্রহণকারীদের কাছে শব্দজোড়া বাজানো হয়।
পরদিন সকালে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—‘টোফার’ শব্দটি জুতার বাক্সের সঙ্গে যায় কি না। অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে মার্ক জাস্ট বলেন, তাঁরা সচেতনভাবে সেই জ্ঞান পুনরোত্পাদন করতে পারেননি। বলতেও পারেননি যে টোফার অর্থ গাছ। এটি একটি বড় বা ছোট কোনো বস্তু হতে পারে, এ বিষয়ে তাঁরা জোর দিয়েছিলেন। আর প্রায় ৬০ শতাংশ সঠিক উত্তর দিয়েছেন যে টোফার শব্দটি জুতার বাক্সের সঙ্গে যায় না।
মূলত শব্দ দুটি ধীর তরঙ্গের ঘুমের সময় বিশেষত ধীর মস্তিষ্কের তরঙ্গ যখন শীর্ষে, তখন বাজানো হয়েছিল। গবেষকেরা শীর্ষ পর্যায়টি এড়িয়ে গেলে ওই শব্দজুটি তাঁদের শেখা হয়নি।
দিনে শেখা শব্দ সাজিয়ে রাখে ঘুম
তাহলে কি আমরা ঘুমের মধ্যে অনায়াসে সব সময় বিদেশি ভাষা শিখতে পারি? ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ম্যাথিউ কোরোমা বলেছেন, বিশ্রামে বাধার সৃষ্টি হলে এটি আসলে বিপরীতমুখীও হতে পারে। তবে গবেষণায় তিনি এ–ও বলেছেন, অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ঘুমিয়ে থাকার চেয়ে জেগে থাকার সময় শব্দগুলো অনেক দ্রুত শিখেছিলেন।
ম্যাথিউ বলেন, জেগে থাকা শেখার জন্য ভালো। আর ঘুম শেখা বিষয় আবারও শেখার জন্য, একেবারে নতুন ভাষা শেখার নয়। এটি একটি মিথস্ক্রিয়া, পরিপূরক। এর অর্থ আপনি দিনে শেখেন আর ঘুমের সময় আপনি এসব তথ্য সাজিয়ে নেন, কিছু স্মৃতি নতুনভাবে একত্র করেন।
ভাষা শেখার জন্য ঘুমকে ব্যবহার করার অন্য কোনো উপায় আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ বলেন, এটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় সম্ভবত ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি নতুন ভাষা শেখা। এরপর ঘুমানোর সময় একটু আগে শেখা কিছু শব্দ ধীরে কানের কাছে বাজিয়ে রাখুন। এই প্রক্রিয়া শেখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে। তবে শব্দগুলো উচ্চ শব্দে বাজানো হলে শেখার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কিছু সূক্ষ্ম টিউনিং আছে।
সুইজারল্যান্ডের বার্ন ইউনিভার্সিটির মার্ক জাস্ট দিনের বেলায় নতুন নতুন শব্দ শেখার পরামর্শ দিয়েছেন। আর রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে মনোনিবেশ করতে বলেছেন। এতে মস্তিষ্কের যা করতে হবে, তা নিজে থেকেই করবে।
বেলজিয়ামের লিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল গবেষক ম্যাথিউ কোরোমা একজন ঘুম ও চেতনাবিশেষজ্ঞ। কীভাবে ও কখন ঘুমের মধ্যে ভাষার সঙ্গে জড়িত থাকি, তা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণার সহলেখক তিনি।
ম্যাথিউ কোরোমা বলেন, মূলত ঘুমের সময় আপনি (অন্যান্য ভাষায়) ভাষা শিখতে পারেন, এমনকি নতুন ভাষা, যা আপনি আগে কখনো শোনেননি, তা–ও শিখতে পারেন। তবে জেগে থাকার চেয়ে ভিন্ন উপায়ে এটি হয়ে থাকে।
প্রথমে কোরোমা ও তাঁর দল আবিষ্কার করেন যে আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনো আমরা আসল ভাষা থেকে নকল বলতে পারি। ঘুমিয়ে থাকা অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের এক কানে তাঁদের মাতৃভাষার শব্দ বা বক্তব্যের রেকর্ডিং এবং অন্য কানে অর্থহীন শব্দের রেকর্ডিং চালানো হয়েছিল। এরপর গবেষকেরা তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফির (ইইজি) মাধ্যমে রেকর্ড করেন।
ইইজির রিপোর্টে দেখা গেছে, ঘুমিয়ে থাকা অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের ফোকাস ছিল অর্থপূর্ণ ও আসল বক্তব্যের প্রতি। গভীর স্বপ্নের আরইএম পর্বে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ভেসে আসা বক্তব্য বা শব্দ দমন করা থামিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখায়। ম্যাথিউ কোরোমা বলেন, ‘এমন হতে পারে, কারণ, মস্তিষ্ক তখন অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ফোকাস করছিল। আমরা যখন গভীর স্বপ্নে নিমগ্ন থাকি, তখন এমন কিছু থেকে বিরত থাকি, যা আমাদের স্বপ্নকে বিঘ্নিত করতে পারে।’
ম্যাথিউর দলের আরেকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ঘুমের মধ্যে জাপানি শব্দ বাজানো হয়েছিল। পাশাপাশি এসব শব্দের নানা অর্থের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে ‘ইনু’ (কুকুর) শব্দটি ঘেউ ঘেউ শব্দের সঙ্গে বাজানো হয়েছিল এবং ‘কানে’ (ঘণ্টা) শব্দটি বেল বাজানোর শব্দের সঙ্গে বাজানো হয়েছিল। ঘুমের দুটি ভিন্ন পর্যায় হালকা ঘুম ও গভীর স্বপ্নের আরইএম পর্যায়ে বিভিন্ন শব্দ বাজানো হয়েছিল। গবেষকেরা আবারও ইইজির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করেন।
ঘুম ভাঙার পরে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা হালকা ঘুমের সময় শোনা শব্দগুলোকে সংশ্লিষ্ট ছবির সঙ্গে (যেমন কুকুরের ছবির সঙ্গে ইনু শব্দ যুক্ত করা) সঠিকভাবে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর আরইএম পর্যায়ে বাজানো শব্দ ছবির সঙ্গে যুক্ত করার ফল খুব একটা সন্তোষজনক ছিল না।
ম্যাথিউ কোরোমা বলেন, ‘আমরা আরইএম ঘুমের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, যে ধাপে আমরা গভীর স্বপ্নে ডুবে যাই, সেখানে শেখার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাইনি। তবে এর অর্থ এটা নয় যে আমরা ওই পর্যায়ে শিখতে পারি না। এটা সম্ভব কি না, তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা করতে হবে।’
ঘুমের মধ্যে সমস্যার সমাধান
রাতের এই শেখার প্রক্রিয়ায় যখন বহুভাষিক স্বপ্নের সম্ভাব্য ভূমিকার প্রসঙ্গ আসে, সে সময় গবেষকেরা সতর্ক হন। মার্ক জাস্ট বলেন, বহুভাষিক স্বপ্নগুলো কীভাবে এর সঙ্গে মানানসই হতে পারে, তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন।
তবে স্বপ্নের বিস্তৃত উদ্দেশ্য কী, তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। মার্ক জাস্টের মতে, একটি ধারণা হলো, মস্তিষ্কের সক্রিয় থাকা এবং স্মৃতির মাধ্যমে সাজানো বিষয়ে একটি উপজাত। এর অর্থ এই নয় যে স্বপ্ন ভাষা শিক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়।
জাস্ট বলেন, বহুভাষিক স্বপ্নের সময় মস্তিষ্কের দুটি ভাষাকেই সংযুক্ত করতে চেষ্টা করার সম্ভাবনা অনেক। তবে বিশৃঙ্খল সময়, স্বপ্নের স্বতন্ত্র প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ভাষা বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন করে তোলে।
আবার ম্যাথিউ কোরোমা বলেন, ‘আরইএম ঘুম সমস্যা সমাধান ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একইভাবে স্বপ্ন আমাদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নতুন শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করার অনুমতিও দিতে পারে অথবা আমরা যে ভাষায় কথা বলি, তার চারপাশে আবেগগুলো প্রকাশ করতে সহায়তা করতে পারে।’
পোল্যান্ডের সিলেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক দানুতা গ্যাব্রিস-বার্কার বহুভাষী মানুষের স্বপ্নের বিশ্লেষণে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তিনি বলেছেন, এ রকম স্বপ্ন বিদেশি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ‘ভয় ও আকাঙ্ক্ষা’ প্রকাশ করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি