বিশ্বের সবচেয়ে ওজনদার ১০ পাখি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রজাতির প্রাণীর কথা বললে আমাদের মাথায় আসে স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম। যেমন জিরাফ, হাতি বা নীল তিমি। সে তুলনায় পাখি বেশ ছোট প্রাণী। বিশেষ করে বাংলাদেশে। আমাদের দেশে চড়ুই বা টুনটুনি পাখি থেকে শুরু করে বড় ইগল বা শকুন দেখা যায়। কিন্তু জেনে অবাক হবে যে বিশ্বে এমন কিছু পাখি আছে, যেগুলো মানুষের চেয়েও লম্বা হতে পারে। এমনকি আগে পৃথিবীতে দৈত্যাকার পাখিও ছিল। এক হাজার বছর আগে মাদাগাস্কারে বাস করত ভ্রোম্বে টাইটান নামের একটি পাখি। এদের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৮০০ কেজি। কালের বিবর্তনে সেসব পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজও বিশ্বব্যাপী এমন কিছু পাখি আছে, যেগুলোর ওজন দেড় শ কেজির বেশি। বড় পাখি বিভিন্ন রকম হতে পারে। কোনোটা লম্বায়, কোনোটা আবার ওজনের দিক থেকে বড়। আবার ডানা বড় এ রকম পাখিও আছে। আজকে দেখব ওজনের দিকে সবচেয়ে বড় ১০টি পাখি। বিবিসি সায়েন্স ফোকাস অবলম্বনে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
১০. ছোট ক্যাসোয়ারি
সর্বোচ্চ ওজন: ১৭.৬ কেজি
পাওয়া যায়: নিউ গিনিতে
ক্যাসোয়ারি পাখির তিনটি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ক্যাসোয়ারি বেনেটি। ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু পাহাড় ও পর্বতমালার জঙ্গলে বাস করে এই পাখি। পাখিটি প্রায় ১ মিটারের বেশি লম্বা হয়। ছত্রাক, ফল ও ছোট্ট প্রাণীদের খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Casuarius bennetti। বর্তমানে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখির তালিকায় আছে ছোট ক্যাসোয়ারি। অর্থাৎ, এদের বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৯. মিউট সোয়ান
সর্বোচ্চ ওজন: ২২.৫ কেজি
পাওয়া যায়: উত্তর ও মধ্য ইউরোপ এবং পূর্ব ও মধ্য এশিয়ায়
পাখিটি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের রাজহাঁসের মতো। সাধারণত মিঠাপানির জলাভূমি ও নদীতে বাস করে মিউট সোয়ান। বেশ বুদ্ধিমান এবং কিছুটা আক্রমণাত্মক পাখি এরা। ডিম বা বাচ্চাদের ধরতে এলে কামড়ে দেয়। পাখিটিও আছে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখির তালিকায়। মিউট সোয়ানের বৈজ্ঞানিক নাম Cygnus olor।
৮. ছোট রিয়া
সর্বোচ্চ ওজন: ২৫ কেজি
পাওয়া যায়: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি ও পেরুতে
রিয়া প্রজাতির দুটি পাখির মধ্যে এটি ছোট। নাম দেখেই অবশ্য তা বোঝা যায়। ডারউইনের রিয়া নামেও পরিচিত এই পাখি। ১৮৩৩ সালে বিগল জাহাজে করে যাওয়ার সময় পাখিটি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ডারউইন। পাখিটি ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অন্য পাখিদের তুলনায় রিয়ার ডানা বেশ লম্বা। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এরা। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Rhea pennata।
৭. বড় রিয়া
সর্বোচ্চ ওজন: ২৭ কেজি
পাওয়া যায়: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েতে
সাধারণত তৃণভূমিতে বাস করে। গাছের পাতার পাশাপাশি ঘাস, টিকিটিকি, ব্যাঙ, ছোট পাখি ও সাপ খেতে পছন্দ করে। বড় রিয়া প্রায় ১১ বছর বেঁচে থাকে। এই পাখিটিও মোটামুটি বিলুপ্তির পথে আছে। এখনই সচেতন না হলে আগামী শতকে আর বড় রিয়ার দেখা পাওয়া যাবে না। পাখিটি লম্বায় ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ছুটতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Rhea americana।
৬. এম্পেরর পেঙ্গুইন
সর্বোচ্চ ওজন: ৪৬ কেজি
পাওয়া যায়: অ্যান্টার্কটিকায়
আইকনিক এই প্রজাতি ১১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বরফের ওপর দিয়ে ছুটতে পারে ১২০ কিলোমিটার গতিতে। বিশ্বব্যাপী ১৮ প্রজাতির পেঙ্গুইনের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইন সবচেয়ে বড়। ওজনও সবচেয়ে বেশি। নিজেদের শরীরের চর্বি ব্যবহার করে তীব্র ঠান্ডায়ও অ্যান্টার্কটিকায় বাস করতে পারে এরা। পানিতে একবার ডুব দিয়ে পৌঁছে যেতে পারে পানির ১ হাজার ৭৫৫ ফুট গভীরে। পানির নিচে থাকতে পারে টানা ১৮ মিনিট। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Aptenodytes forsteri। আগামী শতকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এম্পেরর পেঙ্গুইনের।
৫. ইমু
সর্বোচ্চ ওজন: ৫৫ কেজি
পাওয়া যায়: অস্ট্রেলিয়ায়
ক্যাসোয়ারিডাই পরিবারের বেঁচে থাকা চার সদস্যের মধ্যে তিনটি ক্যাসোয়ারি পাখির প্রজাতি। আরেকটি হলো ইমু পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক ইমু প্রায় ১৯০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গড়ে এদের ওজন ৩০-৪৫ কেজির মধ্যে। তবে সবচেয়ে বড় ইমু পাখির ওজন হয় ৫৫ কেজি পর্যন্ত। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Dromaius novaehollandiae। আপাতত এদের বিলুপ্তি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
৪. নর্দার্ন ক্যাসোয়ারি
সর্বোচ্চ ওজন: ৫৮ কেজি
পাওয়া যায়: নিউ গিনিতে
অন্যান্য ক্যাসোয়ারির মতো নর্দার্ন ক্যাসোয়ারিও আক্রমণাত্মক পাখি। এরা উড়তে পারে। নারী ক্যাসোয়ারি ডিম পাড়ার পরে পুরুষ ক্যাসোয়ারি ৯ মাস ধরে ডিমে তা দেয়। সাধারণত পুরুষ পাখির তুলনায় মহিলা পাখির ওজন প্রায় দ্বিগুণ হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Casuarius unappendiculatus। এই পাখির গলা সোনালি রঙের ও মাথায় হালকা নীল ঝুঁটি আছে। পাখিটি লম্বায় প্রায় ১৪৯ সেন্টিমিটার। আপাতত বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কামুক্ত।
৩. সাউদার্ন ক্যাসওয়ারি
সর্বোচ্চ ওজন: ৮৫ কেজি
পাওয়া যায়: নিউ গিনি, কুইসল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়
নর্দার্ন ক্যাসোয়ারি থেকে সামান্য বড় এই প্রজাতি। সাধারণত রেইনফরেস্ট, জলাভূমি এবং সাভানা উডল্যান্ডে বাস করে সাউদার্ন ক্যাসোয়ারি। ১৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে পাখিটি। আপাতত বিলুপ্ত হওয়ার ভয় নেই। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Casuarius casuarius। পাখিটির মুখ নীল এবং ঘাড় লম্বা। মহিলা ক্যাসোয়ারির গড় ওজন প্রায় ৫৯ কেজি হলেও পুরুষদের গড় ওজন ৩৪ কেজি।
২. সোমালি অস্ট্রিচ বা সোমালি উটপাখি
সর্বোচ্চ ওজন: ১০৫ কেজি
পাওয়া যায়: হর্ন অব আফ্রিকা
উটপাখির দুটি জীবন্ত প্রজাতির মধ্যে একটি হলো সোমালি অস্ট্রিচ। এদের নীল গলার উটপাখি বলা হয়। আগে এদের উটপাখির একটি উপপ্রজাতি ভাবা হতো। ২০১৪ সালে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সোমালি অস্ট্রিচকে। নারী অস্ট্রিচের তুলনায় পুরুষ অস্ট্রিচ বড় হয়। এদের পূর্ব ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ও কেনিয়ায় পাওয়া যায়। এই অঞ্চলগুলো হর্ন অব আফ্রিকা নামে পরিচিত। পাখিগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Struthio molybdophanes।
১. সাধারণ অস্ট্রিচ বা উটপাখি
সর্বোচ্চ ওজন: ১৫৬ কেজি
পাওয়া যায়: অফ্রিকার সাভানায়
দুর্দান্ত গতির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত উটপাখি। ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। উটপাখি ডানা মেলে দৌড়ায় এবং হঠাৎ থামার জন্য ডানা ব্যবহার করে। উটপাখির এই আচরণ সিংহ বা শিয়ালের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। অনেক সময় উঠপাখি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এরা এদের শক্তিশালী নখযুক্ত পায়ের আঘাতে সিংহকেও কাবু করে ফেলতে পারে। জীবন্ত পাখির মধ্যে সবচেয়ে বড় উটপাখি। যেকোনো জীবন্ত পাখির তুলনায় সবচেয়ে বড় ডিম পাড়ে এরা। সাধারণত ঘাস, গাছের পাতা ও ছোট সরীসৃপ খায়। একসঙ্গে ৫ থেকে ৫০টি পাখি বাস করে দল বেঁধে। পুরুষ উটপাখির উচ্চতা ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম Struthio camelus।