অ্যাক্রোফোবিয়া উচ্চতাভীতি নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। কী, কেন ও কীভাবে উচ্চতাভীতি তৈরি হয়, কীভাবে দূর করা যায়—এসব নিয়ে তুমি অনেক লেখা খুঁজে পাবে। এ লেখায় তুমি যাচাই করে নাও তোমার উচ্চতাভীতি আছে কি না।
বলে রাখি, উচ্চতাভীতি একটি মানসিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা। সাধারণভাবে কেউ উচ্চতা বিষয়ে তীব্র ভয় অনুভব করলে বলা যায় তার উচ্চতাভীতি আছে। এখানেই অনেকেই ভুল করে। তীব্র ভয় আর মৃদু ভয়ের পার্থক্য না করেই বলে দেয়, তোমার উচ্চতাভীতি আছে। তুমি প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নাও তোমার যদি উঁচু জায়গা নিয়ে ভয় থাকে, তবে সেটা কতটা তীব্র? মৃদু ভয় বা খারাপ লাগা উচ্চতাভীতি নয়। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে প্রায় প্রতি তিনজনের একজন উচ্চতা নিয়ে মৃদু ভয়ে আক্রান্ত হতে পারে। তাদের সামান্য ভয় বা খারাপ লাগা কাজ করতে পারে। তারা উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত নয়।
কোনটি উচ্চতাভীতি?
উচ্চতাভীতি একটি উদ্বেগজনিত অসুস্থতা। আক্রান্ত কেউ উচ্চতার কথা ভাবলে বা অবস্থান করলে তীব্র ভয় ও উদ্বেগ অনুভব করে। সাধারণত উঁচু জায়গা বা পরিস্থিতি তাঁরা এড়িয়ে চলেন। তাঁরা উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত। একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উদ্বেগ অনুভব করা মানুষের জন্য স্বাভাবিক। বেশির ভাগ মানুষ মোটামুটি উচ্চতায় অবস্থান করার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সতর্ক থাকে। উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়লে মনে হতে পারে, সে হয়তো নিচে পড়ে যাবে বা উঁচু জায়গাটি নিরাপদ নয়। যেমন সেতুর ওপর থেকে নিচে তাকালে মনে হতে পারে, সেতুটি যদি ভেঙে পড়ে? অস্বস্তি লাগা এবং সেতুটি যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এমন মনে হওয়া মানুষের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত মানুষেরা সেতুর ওপর থেকে নিচে তাকালে তীব্র এবং অযৌক্তিক ভয় অনুভব করে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, বারান্দার কাছে দাঁড়ানো, বহুতল ভবনের পার্কিং গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করা বা এমন সব অবস্থায় উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত মানুষেরা তীব্র ভয় পেতে পারে।
উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত মানুষ শুধু এমন জায়গায় ভয় পায় এমন নয়, কিছু পরিস্থিতিতেও তাঁদের তীব্র ভয় লাগতে পারে। উচ্চতার সঙ্গে জড়িত বিষয় যুক্ত আছে এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা ভয় পান। যেমন বিমানে ওড়া। বিমানে চড়া কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। বিমান নিচে পড়ে যাবে এমন ভয় বা উদ্বেগ তাঁদের মধ্যে তীব্রভাবে কাজ করবে। বিমানে উঠলেও স্বাভাবিকভাবে নেমে আসা তাঁদের জন্য কষ্টকর হবে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মৃত্যুভয় কাজ করা—এমন লক্ষণও তাঁদের মধ্যে দেখা দিতে পারে।
বিবর্তনমূলক ও আচরণমূলক ভীতি
উচ্চতাভীতি দুভাবে গড়ে ওঠে। বিবর্তনমূলক মনোবিজ্ঞান বলে, ভয় মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। স্বাভাবিকভাবে মানুষ উচ্চতা সম্পর্কে মৃদু ভয় পেতে পারে। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে এবং বেঁচে থেকে বংশবিস্তার করার সুযোগ পাওয়ার জন্য জিনগতভাবে মানুষের এই প্রতিরোধমূলক অনুভূতি তৈরি হয়।
আর আচরণগত দিক থেকে উচ্চতাভীতিকে সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে মনে করা হয় না। ধরা হয়, মানুষ ভয় পেতে শেখে। দুর্ঘটনায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা হতে দেখার ফলে ভয় তৈরি হয়। ক্ষতিকর পরিস্থিতির অভিজ্ঞতার ফলে উচ্চতার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। তাই লোকে উঁচু জায়গা এড়িয়ে চলে। তাই উচ্চতাভীতি যেমনই হোক, তীব্র ভয়কে জয় করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মনস্তাত্ত্বিক যে লক্ষণ দেখে উচ্চতাভীতি চেনা যায়
উঁচু জায়গার দিকে তাকানো, নিজেকে উঁচু জায়গায় কল্পনা করার সময় তীব্র ভয় এবং উদ্বেগ অনুভব করা
উঁচু জায়গায় নেতিবাচক বা ভয়ংকর কিছু ঘটবে মনে করা। যেমন পড়ে যাব বা উঁচু জায়গায় আটকে পড়ব
উঁচু স্থান থেকে পালানোর তীব্র ইচ্ছা অনুভব করা
উচ্চতাভীতিতে শারীরিক যে পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায়
উচ্চতার কথা ভাবার সময় বা উঁচু জায়গা দেখলে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
মাথা ঘোরানো
তীব্র অস্বস্তি বোধ করা
কাঁপুনি ওঠা
শ্বাসকষ্ট হওয়া
এই শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক লক্ষণগুলো কি তোমার মধ্যে বেশির ভাগ সময় বা সব সময়ের জন্য আছে? যদি থাকে, তবে তুমি উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত। যদি না থাকে, তবে তোমার উচ্চতাভীতি নেই। উচ্চতাভীতির লক্ষণের সঙ্গে নিজের অবস্থার মিল পেলে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে ভীতির তীব্রতা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। চিকিত্সা নিয়ে সারিয়ে তুলতে হবে ভীতি।