দেখতে মাছের মতো প্রাণীটি আদতে মাছ না। এই প্রাণীর পাখনা, কাঁটা, ফুলকা আছে। তবে স্বচ্ছতার কারণে বোঝা যায় না। নাম সালপস। বৈজ্ঞানিক নাম সালপা ফিউসিফর্মিস (Salpa fusiformis)।
অদ্ভুত দেখতে প্রাণীটি দেখা যায় প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে। এরা এত স্বচ্ছ যে বাইরে থেকে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়। শরীরের কোথায় হাড় বা কাঁটা আছে, পেটের ভেতর কী আছে—সবকিছু। এরা বাড়ে খুব দ্রুত। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা থেকে একদম পূর্ণবয়স্ক হয়ে যায়। অর্থাৎ ছোট থেকে বড় হতে এদের লাগে মাত্র দুই দিন। এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম বর্ধনশীল বহুকোষী প্রাণী। প্রতি ঘণ্টায় এদের দেহের দৈর্ঘ্য বাড়ে ১০ ভাগ।
সালপসের প্রধান খাবার ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। এ ছাড়া অন্যান্য ছোট মাছও এরা খায়। ওদের মুখের মধ্যে ঢুকতে পারে, এমন মাছ হলেই হলো। তবে মুখটা যত বড়, খাবার কিন্তু তত বড় খেতে পারে না। আসলে নীল তিমির মতো এদের মুখেও জালের মতো থাকে। সেই জালের ছোট ফুটো দিয়ে যে মাছ যেতে পারে, তা–ই ওরা খায়। এককথায় ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের পাশাপাশি যথেষ্ট ছোট মাছ খেতে পারে এরা।
তোমরা অনেকেই হয়তো এই প্রাণী কথা আজ প্রথম শুনলে। তবে সে জন্য ভেবো না, এরা সংখ্যায় খুব কম। বিশ্বব্যাপী এদের ৭০টির বেশি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের আজকের আলোচিত প্রজাতিটি সবচেয়ে সাধারণ। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ২ হাজার ৬০০ ফুট গভীর পর্যন্ত এদের পাওয়া যায়। জন্মের সময় এগুলো মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৮ ইঞ্চি থাকে। আর দুই দিন পরে এটা ৪ ইঞ্চিতে পরিণত হয়।
সালপসের চলাচল বেশ অদ্ভুত। মাছের মতো এরা লেজ নেড়ে পানিতে সাঁতার কাটে না; বরং পানির সঙ্গে ভেসে যায়। জোয়ার ও ভাটার সময় পানি যখন একদিক থেকে অন্যদিকে যায়, এরাও সেই পানির সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যায়। পানি বয়ে যায় এদের শরীরের ভেতর দিয়ে। আর এই সময় পানির সঙ্গে ছোট মাছ ঢুকে পরে পেটে। সেগুলোই ওরা খায়। অর্থাৎ খবারের জন্য এদের তেমন কষ্ট করতে হয় না। চলতে চলতেই পর্যাপ্ত খাবার পেটে চালান হয়ে যায়।
তবে এই সুবিধার মধ্যে একটু অসুবিধাও আছে। পানির সঙ্গে ছোট মাছ যেমন চলে যায়, একইভাবে অনেক ময়লা–আবর্জনাও যায়। সেগুলো ওরা ফিল্টার করতে পারে। এদের পেটের মধ্যে আঠালো জাল রয়েছে। খাবার ছাড়া বাকি সবকিছু ওই জালে আটকে থাকে।
যেহেতু এদের পেটের মধ্য দিয়ে পানিবাহিত হয়, সেহেতু এরা প্রচুর পানি ফিল্টার করতে পারে। তার মানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রাণীটি ছোট হলেও এদের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ কোরো না। ভেবো না, এই সামান্য প্রাণী জলবায়ু পরিবর্তনে আর কী ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রায় ১ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত একটা সালপসের ঝাঁক এক রাতে চার হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং, ছোট হলেও এদের গুরুত্ব অনেক।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স