মেয়ে ব্রুক গ্রিনবার্গের যখন জন্ম হয়, স্বাভাবিকভাবেই হাওয়ার্ড ও মেলানি স্বর্গসুখে ভাসছিলেন। ফুটফুটে একটা দেবশিশু যেন এসেছিল তাঁদের ঘর আলো করে। আকৃতিগত একটু সমস্যা ছিল। এটা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত থাকলেও সেই চিন্তা দ্রুতই দূর করে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান কী না পারে!
কিন্তু যতই দিন যেতে থাকল, বাড়তেই থাকল হাওয়ার্ড-মেলানির কপালে চিন্তার ভাঁজ। একসময় জানা গেল, ব্রুক এমনই এক রহস্যজনক জিনগত অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত, সারা পৃথিবীতে সম্ভবত কারোরই আর এ রোগ হয়নি। এ রোগ-রহস্যের সমাধান সূত্র জানা নেই আধুনিকতম চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও। রোগটার নামই তাই দেওয়া হলো ‘এক্স সিনড্রম’। বয়সের ঘড়ির কাঁটা যেন আটকে রইল ব্রুকের। এক এক করে বছর এগোল। কিন্তু ব্রুকের বয়স আটকে রইল এক বছরের মধ্যে!
২০১৩ সালের অক্টোবরে ব্রুক মারা গেছে। সে সময় তার বয়স ছিল ২০ বছর। কিন্তু এটি নিতান্তই ক্যালেন্ডারের হিসাবে বয়স। ব্রুকের মানসিক বয়স তো বটেই, দেখতেও এক বছর বয়সী একটা শিশুর মতো ছিল সে। এক বছর বয়সীর মতোই সে হাঁটতে পারত না। মাড়িতে দাঁতও গজিয়েছিল অল্প কটা। পাঁচ বছরের পর থেকে একটুও বয়স বাড়েনি ব্রুকের!
আমাদের জৈবিক ঘড়িটা ক্রমাগত এগিয়ে চলে। তাতেই আমরা বড় হই, বুড়ো হই। কিন্তু কোনো কারণে যদি সেই ঘড়ি আটকে ফেলা যায়, তাহলে আমাদের বয়স বাড়বে না। আমরা বুড়ো হব না এবং যুক্তি বলছে, সেটা করতে পারলে আমরা অমরত্বও হয়তো পেতে পারি!
শুনতে অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে। মনে হতে পারে পাগুলে প্রলাপ। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, ব্রুকের জীবনের রহস্যটার মীমাংসা করতে পারলে অমরত্ব যদি নাও পাওয়া সম্ভব হয়, অন্তত বয়সের কারণে আলঝেইমার, পারকিনসন্স, হৃদরোগসহ যেসব জটিলতা দেখা দেয়, সেসব থেকে মুক্তির পথ জানা সম্ভব হবে।
এ নিয়ে গবেষণা করছেন—এমন একজন ড. এরিক শাড ব্রুকের মৃত্যুর পর বলেছিলেন, ‘ব্রুকের মারা যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক, তবে ও হয়তো মানবজীববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রহস্যগুলোর একটির উত্তর দিতে পারবে: আমাদের বয়স কেন বাড়ে, সেই বয়স বাড়ার গতিটাকে ধীর করা কিংবা থামিয়ে ফেলার উপায় কি আছে?’
ব্রুকের অজানা অসুখের সঙ্গে কাছাকাছি মিল আছে—এমন রোগে ভোগা আরও দুজনের সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাব্রিয়েল উইলিয়ামস, জন্মেছে ২০০৪ সালে। আরেকজন অস্ট্রেলিয়ার নিকি ফ্রিম্যান। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া ফ্রিম্যানকে ৪৩ বছর বয়সেও নিতান্তই একজন বালকের মতো দেখায়। তবে ২০ বছর বয়সী ব্রুকের মধ্যেই বয়স না বাড়ার লক্ষণগুলো ছিল আরও বেশি স্পষ্ট। বয়স বাড়ানোর জন্য গ্রোথ হরমোন দেওয়া হয়েছিল তাকে। তাতেও কাজ হয়নি।
শাড এবং তাঁর গবেষক দল গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রুকের জিনের মানচিত্র তৈরির কাজ চলছে। চলছে ব্রুকের ত্বক থেকে নমুনা হিসেবে নেওয়া স্টেম সেলের গবেষণা। বয়স না বাড়ার জিনগত ও জৈবিক কারণটাই খুঁজে বের করতে চান বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বিজ্ঞান কি শেষ পর্যন্ত পারবে ‘মোহিনী’ রূপে আবির্ভূত হয়ে আমাদের অমৃতের সন্ধান দিতে?