প্রাণীর বেঁচে থাকা নির্ভর করে গাছের ওপর। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখে গাছ। পরিবেশ থেকে দূষণ শোষণ করে গাছ, বাতাসে ছাড়ে অক্সিজেন। শুধু তা-ই না, বন্যা আর ভূমিধসের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করে গাছ। ভূমি থেকে পানি শোষণ করে। মোটকথা, গাছের গুণাগুণ বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
অনেক প্রজাতির পোকামাকড়, ছত্রাক, শেওলা, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং উদ্ভিদ গাছে বসবাস করে। আমরা সব সময়ই শুনি, পৃথিবীতে গাছ কমে যাচ্ছে। নানা জায়গায় কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। আবার নতুন করে লাগানোও হচ্ছে অনেক গাছ। তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, পৃথিবীতে কত গাছ আছে? এই লেখায় পৃথিবীর গাছের সংখ্যা এবং গাছ পরিবেশকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা বলার চেষ্টা করব।
গাছ কেটে বন উজাড় করা পৃথিবীর একটি বড় সমস্যা। ১৯৫০ সালের পর থেকে এই সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠেছে। ব্যাপারটা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে এটি থামার কোনো লক্ষণও নেই। পৃথিবীতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঠিক কতটি গাছ আছে, তা জানা অসম্ভব। তবু সংখ্যাটি মোটামুটি নির্ভুলভাবে অনুমান করার উপায় আছে। স্যাটেলাইট ইমেজিং ব্যবহার করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীতে ৩.০৪ ট্রিলিয়ন গাছ আছে বলে অনুমান করা হয়েছে। তার মানে পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের বিপরীতে গাছ আছে ৪২২টি। শুনলে মনে হতে পারে, আরেব্বাহ! আমার জন্য এত্তগুলো গাছ আছে! কিন্তু আসল ঘটনা বিপরীত। আগে কত গাছ ছিল বিবেচনা করলে বোঝা যাবে, তেমন গাছ আর অবশিষ্ট নেই। প্রাচীনকালে ৬ ট্রিলিয়ন গাছ ছিল। বর্তমান গাছের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
১০০ বছর আগে পৃথিবীতে কত গাছ ছিল
পৃথিবীজুড়ে মানুষ ছড়িয়ে পড়ার আগে পৃথিবী ছিল গাছে ঢাকা। পুরো স্থলভাগে প্রচুর গাছ আর বন ছিল। বর্তমানে আনুমানিক ৩ বিলিয়ন হেক্টর বনভূমি টিকে আছে। যা একসময় পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বনের ভগ্নাংশ।
১৯২০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটে। ফলে প্রসার ঘটে কাঠশিল্পের। এ কারণে ব্যাপক বন উজাড় হতে থাকে। এ সময়ে বন ব্যবস্থাপনা আইন বা কর্মসূচি বলে কিছু ছিল না। তাই ধ্বংস হয়ে যায় অনেক বন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে এই মাত্রাটা বেশি। এই এলাকায় ক্ষতি কাটানোর জন্য নতুন করে তেমন গাছ লাগানো হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ মানুষ খেয়াল করছে, পৃথিবীতে কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। ফলে তাপ বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। ১৯৫০–এর দশকে পৃথিবীজুড়ে বৃক্ষ রোপণের চেষ্টা শুরু হয়। ফলে এক শ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে গাছের সংখ্যা বেড়েছে।
কোন দেশে কত গাছ আছে
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বনভূমি আছে মাত্র পাঁচটি দেশজুড়ে। এগুলো হলো ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। আবার প্রায় ২ ট্রিলিয়ন গাছ আছে মাত্র দশটি দেশে। এর মধ্যে আছে ইন্দোনেশিয়া, পেরু, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি দেশ যত বড়, তার গাছের সংখ্যা তত বেশি। সবচেয়ে বেশি গাছ আছে রাশিয়ায়। এ দেশে প্রায় ৬৪২ বিলিয়ন গাছ আছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কানাডা। প্রায় ৩১৮ বিলিয়ন গাছ আছে কানাডায়। এ দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ ভূমি বনভূমি। দেশীয় প্রজাতির গাছের সংখ্যার দিক থেকে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এগিয়ে আছে।
গাছের সংখ্যা পরিমাপ করার আরেকটি উপায় হলো গাছের ঘনত্ব। কতটুকু জমি গাছ দিয়ে ঢাকা, তাই দিয়ে গাছের ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। কিছু দেশ গাছের সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও গাছের ঘনত্বের দিক থেকে পিছিয়ে। আবার সুইডেন, তাইওয়ান, স্লোভেনিয়া, ফ্রেঞ্চ গুয়ানা, ফিনল্যান্ড এবং নিরক্ষীয় গিনির গাছের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
ঘনত্বের দিক থেকে এগিয়ে আছে ফিনল্যান্ড। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭২ হাজার ৬৪৪টি গাছ নিয়ে প্রথম স্থানে আছে তারা। গবেষণা বলছে, ফিনল্যান্ডের বন বিশ্বের বেশির ভাগ বনের চেয়ে ঘন। ফিনল্যান্ডের ৭০ শতাংশ ভূমি গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত। এরপরও ফিনল্যান্ড বছরে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন গাছ লাগায়। তাই প্রতিবছর গাছের ঘনত্ব বাড়বে। ইউরোপের আরেক দেশ স্লোভেনিয়ার ভূমির ৬০ শতাংশ গাছ দিয়ে আবৃত। এ দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭১ হাজার ১৩১টি গাছ আছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সমীক্ষা অনুসারে, পরিবেশনীতিতে পরিবর্তন না আনলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের এক মিলিয়ন বর্গমাইলের বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ২০২০ সালের হিসাবে বেশির ভাগ দেশে বন উজাড়ের হার বেশ কমেছে। তাই আশা আছে, গাছের সংখ্যা বাড়বে। গাছের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।