বিশ্বের বিরলতম রক্তের গ্রুপ কোনটি
কোন গ্রুপের রক্ত পাওয়া সবচেয়ে কঠিন—প্রশ্নটা লিখে গুগলে সার্চ করলে হয়তো উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন বেশি পাবে। সংক্ষেপে বা সহজভাবে বললে, রক্তের প্রধান গ্রুপগুলোর মধ্যে এবি নেগেটিভ রক্ত পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। বিশ্বের সব দেশের মানুষের মধ্যেই নেগেটিভ রক্তের চেয়ে পজিটিভ রক্ত বেশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে এবি নেগেটিভ রক্ত পাওয়া যায় সবচেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্রের রেডক্রসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিনদের মধ্যে ১ শতাংশের কম মানুষের এবি নেগেটিভ রক্ত রয়েছে। যেকোনো দেশের মানুষের মধ্যে শূন্য দশমিক শূন্য ৬ থেকে ৩ শতাংশ মানুষের এবি নেগেটিভ রক্ত থাকতে পারে। মার্কিনদের এই হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
আরএইচ পজিটিভ হবে, নয়তো আরএইচ নেগেটিভ। এই ফ্যাক্টরও লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে পাওয়া যায়। যাদের রক্তে এই আরএইচ ফ্যাক্টর থাকে, তারা আরএইচ পজিটিভ। আর যাদের থাকে না, তারা আরএইচ নেগেটিভ।
তবে এবি নেগেটিভ রক্তের চেয়ে কয়েক ডজন বিরল রক্তের গ্রুপ পৃথিবীতে আছে। এমন অনেক গ্রুপ আছে, যেগুলো সম্প্রতি আবিষ্কার করা হয়েছে। আবার কিছু গ্রুপ আছে, যা ভবিষ্যতে আবিষ্কার হতে পারে। তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে বিরল রক্তের গ্রুপ কোনটি?
বিরলতম রক্তের গ্রুপে যাওয়ার আগে তোমাদের একটুখানি রক্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। মানে রক্ত তো সবাই চেনো, কিন্তু এই পরিচয় একটু ভিন্নভাবে। একটু সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের আলোকে পরিচিত হওয়া যাক।
শুরুতেই রক্তের উপাদানগুলোর সঙ্গে একটু পরিচিত হওয়া দরকার। তোমার রক্তের গ্রুপ যা-ই হোক না কেন, রক্তে অবশ্যই প্লাজমা আছে। রক্তের তরল অংশকেই বলে প্লাজমা। আমাদের শরীরের যতটুকু রক্ত আছে, তার প্রায় ৫৫ শতাংশই এই প্লাজমা। মূলত প্লাজমা তৈরি হয় পানি দিয়ে। প্লাজমার মধ্যে ৯২ শতাংশই পানি। প্লাজমায় বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, লবণ, শর্করাসহ অন্যান্য পদার্থ মিশে থাকে, যা দেহের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে।
প্লাজমার মধ্যে আবার থাকে শ্বেতরক্তকণিকা, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া রয়েছে প্লেটলেটস ও লোহিত রক্তকণিকা। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে প্লেটলেটস। আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড দূর করার দায়িত্ব পালন করে লোহিত রক্তকণিকা।
এই লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে আবার কিছু প্রোটিন ও শর্করা থাকে। এগুলো অনেকটা মার্কারের মতো কাজ করে। মানে প্রোটিন ও শর্করা চিহ্নিত করে রাখে প্রতিটি রক্তকণিকাকে। একেই আমরা বলি অ্যান্টিজেন। মূলত চার ধরনের অ্যান্টিজেন থাকে। সেগুলো হলো ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’এবং ‘ও’।
‘এ’ রক্তের গ্রুপে ‘এ’ অ্যান্টিজেন থাকে, আবার ‘বি’ রক্তের গ্রুপে থাকে ‘বি’ অ্যান্টিজেন। ‘এবি’ রক্তের গ্রুপে ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় এন্টিজেন থাকে। কিন্তু ‘ও’ রক্তের গ্রুপে ‘এ’ বা ‘বি’—কোনো অ্যান্টিজেনই থাকে না। এই রক্তের গ্রুপগুলোকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—আরএইচ ফ্যাক্টর; হয় আরএইচ পজিটিভ হবে, নয়তো আরএইচ নেগেটিভ। এই ফ্যাক্টরও লোহিত রক্তকণিকার পৃষ্ঠে পাওয়া যায়। যাদের রক্তে এই আরএইচ ফ্যাক্টর থাকে, তারা আরএইচ পজিটিভ। আর যাদের থাকে না, তারা আরএইচ নেগেটিভ।
এই আরএইচ ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে প্রধান চারটি রক্তের গ্রুপকে আট ভাগে ভাগ করা হয়। নিচের ছকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার রক্তের গ্রুপের তথ্য দেওয়া হলো। এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে বেবিমেড ডটকম থেকে।
সব মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা অতিজরুরি। কারণ, রক্তের গ্রুপ না জানলে প্রয়োজনে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে না। চাইলেই তোমাকে যেকোনো একটা গ্রুপের রক্ত দেওয়া যাবে না। ভুল রক্তের গ্রুপ গ্রহণ করলে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ পজিটিভ, তারা নিজেদের গ্রুপ ছাড়া বাকি সব ধরনের রক্ত গ্রহণ করতে পারে। আর যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ নেগেটিভ, নিজেদের গ্রুপ ছাড়া বাকি সবাইকে রক্ত দিতে পারে।
যে রক্তের গ্রুপের অ্যান্টিজেন পাওয়া যত মুশকিল, সে রক্তের গ্রুপ তত বিরল।
এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের রক্তে কোনো আরএইচ অ্যান্টিজেন থাকে না। এ ধরনের রক্তকে বলে আরএইচনাল (Rhnull)। প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের মধ্যে প্রথম এ রক্তের গ্রুপ দেখা গেছে। তবে এটা খুব বিরল। সারা পৃথিবীতে মাত্র ৫০ জন বা তার চেয়ে কম মানুষ এই বিরল রক্তের মালিক। এ জন্য এই গ্রুপের রক্তকে বলে গোল্ডেন ব্লাড। আসলে স্বর্ণের চেয়ে দামি এ রক্ত।
শেষ করার আগে আরেকটা কথা বলতে চাই। কোনো জিনিস যত কম পাওয়া যায়, সেই জিনিস তত বিরল হয়। এখন হয়তো সারা পৃথিবীতে মাত্র ৫০ জনের শরীরে আরএইচনাল রক্ত আছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অথবা এর চেয়ে বিরল কোনো রক্তের গ্রুপও আবিষ্কার হতে পারে। তাই যেকোনো সময় আরএইচনালের মুকুট অন্য কোনো গ্রুপের কাছে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ সব সময়ের জন্য সবচেয়ে বিরল রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, বেবিমেড ডটকম