পৃথিবীতে সবচেয়ে কম সূর্যের আলো পায় যে ১০ দেশ
আমাদের দৈনন্দিন জীবন ২৪ ঘণ্টার চক্রে বাঁধা। যেখানে ঋতুভেদে সামান্য পরিবর্তন দিন ও রাতের দেখা মেলে। তবে, পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান আছে, যেখানে সূর্যের আলো খুব দুর্লভ। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি কারণে সেখানে সূর্যের আলোর দেখা মেলে না তেমন। এসব স্থানের মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা ভিন্ন। সূর্যের আলোর স্বল্পতার কারণে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দেয়। এছাড়াও শরীরে অতিরিক্ত মেলাটোনিন (melatonin) হরমোন তৈরি হয়। এতে ঘুম, ক্লান্তি, অলসবোধ, বিষণ্নতার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলেও এর প্রভাব পরে। সূর্যের আলো সবচেয়ে কম পায়, এমন ১০ দেশের কথা নিয়ে এই লেখা।
১. ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ
ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ ডেনমার্কের অংশ। দেশটি আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে আর্কটিক সার্কেলের কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে এখানে গ্রীষ্মকালে রাতে হালকা আলো থাকে। যাকে ‘গোধূলি’ বলা হয়। আর শীতকালে দিনের বেলা সারাক্ষণই গোধূলি থাকে। সরাসরি সূর্যালোকের দেখা মেলে না। রাজধানী শহর তোরশাভন কে বিশ্বের সবচেয়ে কম সূর্যালোক পাওয়া দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বছরে গড়ে মাত্র ৮৪০ ঘণ্টা সূর্যালোক সেখানে পাওয়া যায়। ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জে মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা বেশি।
২. আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ড উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় আইসল্যান্ড। রাজধানী রেইকইয়াভিক শহরে সূর্যালোক বছরে সময় এক একরকম পাওয়া যায়। এখানে সবচেয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল মাস মে। গড়ে ২০২ ঘণ্টা সূর্যালোক থাকে মে মাসে। জানুয়ারিকে বলা হয় অন্ধকার মাস, মাত্র ২০ ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। বছরে গড়ে মোট ১ হাজার ৩২৭ ঘণ্টা সূর্যালোকের দেখা পাওয়া যায় আইসল্যান্ডে।
৩. সন্ত পিয়ের অ্যান্ড মিকেলন
সন্ত পিয়ের এন্ড মিকেলন উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফ্রান্সের একটি স্ব-শাসিত দেশ। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে তৃতীয় সন্ত পিয়ের অ্যান্ড মিকেলন। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১ হাজার ৪২৭ ঘণ্টা সূর্যালোক পায়। গ্রীষ্মকালে এখানে সবচেয়ে বেশি সূর্যালোক দেখা যায়। তবে, শীতকালে দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সূর্যালোক দেখা যায়।
৪. আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে। আয়ারল্যান্ডে সাধারণত বছরে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ ঘণ্টার মধ্যে সূর্যালোক পাওয়া যায়। মে ও জুন মাসে সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এই মাসগুলোতে, দেশের বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫ ঘণ্টা সূর্যালোক থাকে। এ ছাড়াও আয়ারল্যান্ডে প্রায়ই মেঘলা আবহাওয়া থাকে, যা সূর্যের আলো আরও কমিয়ে দেয়।
৫. যুক্তরাজ্য
কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে পঞ্চম দেশ যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য বছরে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৩০ ঘণ্টা সূর্যালোক পায়, যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ দশমিক ১৯ ঘণ্টা। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৮০ ঘণ্টা সূর্যালোক রেকর্ড করা হয়েছিল, যা ১৯৩০ সাল থেকে সর্বোচ্চ।
৬. বেলজিয়াম
বেলজিয়াম পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দেশ। এর উত্তরে নেদারল্যান্ডস, পূর্বে জার্মানি ও লুক্সেমবার্গ এবং দক্ষিণে ফ্রান্স অবস্থিত। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বছরে গড়ে ১ হাজার ৫৪৬ ঘণ্টা সূর্য আলো থাকে। যা প্রতিদিন প্রায় ৪ দশমিক ২ ঘণ্টা সূর্যালোকের সমান। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে বেলজিয়াম ষষ্ঠ স্থানে।
৭. ইকোয়েটরিয়াল গিনি
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ ইকোয়েটরিয়াল গিনি। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে ইকোয়েটরিয়াল গিনি সপ্তম স্থানে। বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৪৯ ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। এখানে বসন্তের শেষ দিকে সবচেয়ে বেশি সূর্যালোকের দেখা মেলে।
৮. সুইজারল্যান্ড
ছবির মতো সুন্দর দেশ সুইজারল্যান্ড। প্রতি বছর সুইজারল্যান্ডে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৬৬ ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। তবে কিছু গ্রামে সূর্যালোক কিছুটা কম বেশি দেখা যায়। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে সুইজারল্যান্ডের অবস্থান অষ্টম।
৯. পোল্যান্ড
কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে পোল্যান্ড নবম। এখানে বছরে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৭১ ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। এখানে জুনে সবচেয়ে বেশি সূর্যালোকের দেখা মেলে। পোল্যান্ডের দীর্ঘতম দিনে সূর্যের আলোর দেখা মেলে ১৬ ঘণ্টা ৩১ মিনিট আর সবচেয়ে ছোট দিনে ৭ ঘণ্টা ২৮ মিনিট।
১০. লিথুয়ানিয়া
উত্তর ইউরোপের একটি রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া। কম সূর্যের আলো পাওয়ার দিক থেকে দশম লিথুয়ানিয়া। এখানে বছরে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৮৮ ঘণ্টা সূর্যের আলোর দেখা মেলে। এই তো গেল পৃথিবীতে সবচেয়ে কম সূর্যের আলো পাওয়া ১০ দেশের কথা।
বাংলাদেশ এসব দেশের তুলনায় সূর্যের আলো পায় প্রায় দ্বিগুণ। ঢাকাতে বছরে গড়ে ২ হাজার ৪৩৬ ঘণ্টা সূর্যালোক থাকে।
সূত্র: সিক্রেটলডিএন, পাবলিক ডট ট্যাবলো, এক্সপাটরিয়া হেলথ কেয়ার, উইকিপিডিয়া, ওয়েদার এন্ড ক্লাইমেট