দাবানল লাগে কেন
তোমরা তো জানো, পৃথিবীর বয়স মোটামুটি ৪০০ কোটি বছর। এর মধ্যে নিজে নিজে আগুন লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা বা পরিবেশ তৈরি হয়েছে গত ৪০-৬০ কোটি বছরে। এর আগে প্রাকৃতিকভাবে লাগা আগুন জ্বালানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান পৃথিবীতে ছিল না। যখন ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর বায়ুতে ধীরে ধীরে যখন অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, তখন গাছপালা বেড়ে যায়। জীবের জীবনমানে উন্নতি ঘটে। এ সময় থেকে প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে শুরু হয় প্রাকৃতিকভাবে লাগা আগুন তথা দাবানলের ঘটনাগুলো। মূলত প্যালিওজোয়িক যুগে আগুন লাগার শর্তগুলো দ্রুত বিকশিত হতে শুরু করে।
আগুন ধরার জন্য প্রয়োজন হয় জ্বালানি। অক্সিজেন ও তাপ আগুন ধরায়। যেখানে বন জন্মায়, সেখানে জ্বালানি সরবরাহ হয় মূলত উদ্ভিদের জীবাশ্ম থেকে। ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, যা আমাদের চারপাশে বায়ুতে থাকে। এরপর শুধু দরকার হয় তাপ। প্রাকৃতিক জ্বালানি, যেমন কাঠ, পাতা, ঝোপঝাড়ের তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন এগুলো অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জ্বলতে শুরু করে। এই শিখা আশপাশের জ্বালানিকে পূর্ব প্রস্তুত করে ও আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বনে আগুন লেগে যায়। যাকে বলে দাবানল।
বনাঞ্চলটা কোথায় অবস্থিত এবং এর জ্বালানি উপাদান কী কী আছে, তার ওপর নির্ভর করে এগুলোকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন ঝোপের আগুন, বনাঞ্চলের আগুন, ঘাসের আগুন, মাঠের আগুন ইত্যাদি।
দাবানল শুরু হয় কীভাবে
স্বাভাবিকভাবে লাগা বনাঞ্চলের দাবানল সাধারণত ‘শুষ্ক বজ্রপাত’ (Dry lightning) দিয়ে শুরু হয়। যে এলাকায় ঝড়ের সময় বৃষ্টি হয় না বা অতি সামান্য হয়, সেখানে এমন ঘটনা দেখা যায়। পৃথিবীতে বজ্রপাত প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ১০০ বার এবং বছরে ৩০০ কোটি আঘাত হানে।
তবে ওয়াইল্ড ফায়ার বা বনে অগ্নিকাণ্ডের বেশির ভাগ কারণ মানুষের কার্যকলাপ। এই অগ্নিকাণ্ডের ৯০ শতাংশের বেশি ঘটে মানুষের অসাবধানতার কারণে। যেমন ক্যাম্পার বা হাইকারদের অসতর্কতা বা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে। কিছু আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয় বন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে। যাকে বলে ‘নিয়ন্ত্রিত পোড়ানো’ (Controlled burn)।
বন্য আগুন সাধারণত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সারফেস ফায়ার, ক্রাউন ফায়ার ও গ্রাউন্ড ফায়ার। মাটির উপরিভাগে কম তীব্র আগুনকে বলে সারফেস ফায়ার। জ্বালানির ওপরের স্তরকে আংশিক ধ্বংস করে। তবে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি জমলে এবং শুষ্ক পরিবেশ বা খরা যদি থাকে, তবে এটি দ্রুত ছড়াতে পারে। ক্রাউন ফায়ার গাছের উপরিভাগে সংঘটিত হয়। গাছের নিচের অংশ থেকে বেয়ে বেয়ে (ল্যাডার ইফেক্ট) আগুন ওপরের দিকে ওঠে। এভাবে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। গ্রাউন্ড ফায়ার খুব কম দেখা যায়। তবে এ ধরনটি খুব ধ্বংসাত্মক। সব উদ্ভিদ ও জৈব পদার্থ একদম ধ্বংস করে ফেলে। মাটির ওপর কিছুই থাকে না। লস অ্যাঞ্জেলেসে এ ধরনের আগুন দেখা গেছে।
আগুনের তীব্রতা কেমন হবে আর কতটা ছড়াবে, তা নির্ভর করে মূলত কী ধরনের শুকনা জ্বালানি আছে। আর্দ্রতা বেশি না কম তারও ভূমিকা আছে দাবানলে। নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত উপায়ে জমা হওয়া জ্বালানি পুড়িয়ে অনেক সময় আগুনের ঝুঁকি কমানো হয়।