ঠান্ডায় জমে গেছে মার্শমেলো

এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে রূপান্তর করছেন কাজী আকাশ।

সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠেই সাসাফ্রাসকে আদর করার জন্য হাত বাড়ালাম। সাধারণত ও আমার পায়ের পাশেই ঘুমায়। কিন্তু আজ সেখানটা ফাঁকা। ঠান্ডা হয়ে আছে ওর ঘুমানোর জায়গাটা। দ্রুত উঠে বসলাম। চারপাশটা খুঁজলাম। কিন্তু সাসাফ্রাস নেই।

‘সাসাফ্রাস?’ চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলাম, ‘সাসাফ্রাস?’

কোনো সাড়া–শব্দ নেই। ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিন ওকে পাশে পাই আমি। এখন কোথায় থাকতে পারে ও? নিশ্চয়ই আমাকে ছাড়া কোথাও গেছে!

জোয়ির বিড়াল সাসাফ্রাস

সাসাফ্রাস কি একা একা শস্যাগারে চলে গেল? তাড়াতাড়ি একটা জ্যাকেট আর টুপি পরে নিলাম। বাইরে নিশ্চয়ই প্রচণ্ড ঠান্ডা।

শস্যাগারের দরজা খুলে ডাকলাম, ‘সাসাফ্রাস? তুমি এখানে?’

সাসাফ্রাস দৌড়ে আমার কাছে এল না। বরং মার্শমেলোর ওখান থেকে একটা মিউ ডাক শুনলাম। সেদিকে তাকালাম আমি। ‘সাসাফ্রাস! তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছ! এখানে কী করছ তুমি? মার্শমেলোকে মিস করছিলে? দুষ্ট ছেলে!’

আদর করার জন্য সাসাফ্রাসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ওকে আদর করি আমি। কিন্তু আজ সাসাফ্রাস আমার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল না। ও ড্রাগনের পাশেই বসে রইল।

ওদের আদর করার জন্য কাছে গিয়ে বসলাম। একটা হাত মার্শমেলোর পিঠে রাখতেই আতঙ্কে লাফিয়ে উঠলাম। যেন বরফের ওপর হাত রেখেছি। মার্শমেলো এত ঠান্ডা হলো কীভাবে? ও নড়ছে না। ইশ্‌, নিশ্চয়ই কোনো ভুল হয়েছে আমার!

হঠাৎ মনে পড়ল, মার্শমেলো তো সরীসৃপ। এ জাতীয় প্রাণী নিজের শরীরে তাপ তৈরি করতে পারে না। আহ্‌, কী করে ভুলে গেলাম আমি?

হিটারের খোঁজে দ্রুত লাফিয়ে উঠলাম। সৌভাগ্যক্রমে একটা হিটার পেয়েও গেলাম। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি। হিটারটা ড্রাগনের দিকে মুখ করে চালিয়ে দিলাম।

মার্শমেলোর কাছে বসে আছে সাসাফ্রাস

বিষয়টা মনে রাখা উচিত ছিল আমার! মাত্র কয়েক মাস আগে আমার বন্ধু সোফি বেড়াতে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে তার পোষা প্রাণীটা রেখে গিয়েছিল আমার কাছে। ওটা ছিল একটা টিকটিকি। ওটাকে যখন আমার বাসায় নিয়ে আসে, তখন হিটারটা টেবিলের ওপরই রাখা ছিল। সোফি আমাকে বলেছিল, এই বাতির সাহায্যে তাপ তৈরি করতে হবে যাতে ওর পোষা প্রাণী ঠান্ডায় জমে না যায়। ব্যাপারটা অদ্ভুত লেগেছিল আমার কাছে। তাই ওর কাছে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। সোফি বলেছিল, ‘ওকে সব সময় উষ্ণ রাখার জন্য কিছু একটা করতে হবে। এরা শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী, তাই নিজেই শরীরে তাপ উৎপাদন করতে পারে না। তুমি যদি হিটারটা চালিয়ে রাখো, তাহলে ও সুস্থ থাকবে। না হলে অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারে।’

আরও পড়ুন

সোফি চলে যাওয়ার পর ব্যাপারটা নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ঠান্ডা রক্তের প্রাণী সম্পর্কে আমাকে আরও অনেক কিছু বলেছিল মা। ‘সরীসৃপ শীতল রক্তের প্রাণী। তবে সাসাফ্রাস কিংবা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীরা অর্থাৎ যারা খাবার খেয়ে শক্তি জোগায়, তারা উষ্ণ রক্তের প্রাণী। এ কারণেই আমরা গরমে ঘামি এবং ঠান্ডায় কাঁপি। ঠান্ডায় কাঁপলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

মার্শমেলোর শরীর গরম করতে হিটার চালিয়েছে জোয়ি

‘তবে সোফির টিকটিকির মতো সরীসৃপ প্রাণীগুলো নিজেদের উষ্ণ রাখতে পারে না। কারণ, খাদ্য থেকে পাওয়া শক্তি তাপ উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে না ওরা। নিজেদের শরীর উষ্ণ রাখতে কাঁপতেও পারে না শীতে। এ কারণে শীতল রক্তের প্রাণীরা সকালে সূর্যের আলোয় রোদ পোহায়। শরীর যথেষ্ট গরম হলে নিজেদের গন্তব্যে চলে যায়। রাতে আর শীতকালে উষ্ণ থাকতে এরা গুহা বা গর্তে বাস করে। গর্তের ভেতরের পরিবেশ হিটারের মতোই কাজ করে। শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

ভালো ব্যাপার হলো, আম্মু শস্যাগারে একটা ছোট হিটার রেখেছিল! মার্শমেলো এখন সুস্থ হয়েছে। শরীর গরম হওয়ায় একটু নড়াচড়া করতে শুরু করেছে। ড্রাগনটি মাথা তুলে তাকাল। উফ্‌, একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম আমি।

মার্শমেলো আরও কয়েক পা এগোল, তারপর হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে। আর উঠল না। শরীরের তাপমাত্রা যাতে ঠিক হয়, সে ব্যবস্থা করলাম। গত রাতে ওকে খাইয়েছি। এখন কী করব?

জোয়ির বন্ধুর পোষা প্রাণী গিরগিটি

মার্শমেলো চোখ পিটপিট করে অর্ধেক চোখ খুলে তাকাল। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। ওহ না! জাদুকরি প্রাণীটা কি মারা যাচ্ছে? এখন আমি কী করব, বুঝতে পারছি না। বুক ধড়ফড় করে উঠল আমার। পায়চারি করতে শুরু করলাম। আমার কিছু দরকার, কী দরকার, কী দরকার?..হ্যাঁ, মাকে দরকার!

চলবে…

মূল: এশিয়া সিট্রো

রূপান্তর: কাজী আকাশ

ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে

*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’ এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন