ভূত যে কত রকম আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। জাতভেদে এদের আবার চেহারাসুরত তো বটেই কাজকর্মও একদম আলাদা। বিদেশি ভূতদের মধ্যে ড্রাকুলা, ভ্যামপায়ার, রেথ, জেসি—এসব ভূতের নামডাক বেশি। আমাদের দেশে মেলে শাকচুন্নি, যখ, কন্ধকাটা, আলেয়া—এদের। তবে, সাহেব ভূতেরা একটু বেশি ভয়ংকর। সে তুলনায় দেশি ভূতেরা অনেক নিরীহ; এরা মানুষ মারলেও রয়ে-সয়ে মারে!
‘যক্ষ’ অর্থ ‘সম্পদরক্ষক’। কথ্য ভাষায় ‘যক্ষ’ হয়েছে ‘যখ’। শোনা যায়, কৃপণ লোক তাদের ধনসম্পদ রক্ষা করার জন্য কাউকে তার ধনসম্পদের সঙ্গে জ্যান্ত কবর দিত। ওই মানুষটিই নাকি পরে যখ হয়ে আগলাত ওই সম্পদ, শতাব্দীর পর শতাব্দী।
‘কন্ধকাটা’ ভূতেরা এহেন নামকরণের কারণ তার মুণ্ডু নেই। ‘স্কন্ধ’ হয়েছে ‘কন্ধ’। মুণ্ডুহীন এই ভূত দেখতে নাকি বেজায় বদখত। যেসব লোক মাথা কাটা পড়ে মারা যায়, তারাই নাকি কন্ধকাটা হয়। এদের নিজেদের মাথা না থাকলে কী হবে, হাতের নাগালে পড়লে মানুষের মাথা রক্ষাই নাকি দায় হয়ে পড়ে—এমনই ভয়ংকর ওই কন্ধকাটা। অনেক সময় শোনা যায়, রাতে ভূত কাউকে ডেকে নিয়ে গেছে পরিচিত মানুষের গলা নকল করে, তারপর মেরেছে ঘাড় মটকে। এদের নামই ‘নিশিডাকা’ ভূত।
‘কানাওলা’ ভূতের কাজ মানুষকে ভূত পথে নিয়ে ক্ষতি করে। রাতের বেলা একা বেরোলে অনেক সময়ই কানাওলার পাল্লায় পড়ে চেনা রাস্তাও বেমালুম ভুলে যায় মানুষ; একই জায়গায় বারবার ঘুরতে থাকে রাতভর। কপাল মন্দ থাকলে এভাবে দিগ্ভ্রান্ত করে কানাওলা মানুষকে নিয়ে যায় কোনো খাল-বিলে। তারপর ডুবিয়ে মারে পানিতে।
‘বোবা’ ভূত রাতে ভর করে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। তখন মানুষ তীব্র আতঙ্কে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু ভূতের কারসাজিতে মুখ দিয়ে একটা আওয়াজও বেরোতে পারে না।
‘মেছো ভূত’ এর নামেই পরিচয়; মাছ এদের খুব প্রিয়। রান্নাঘর থেকে কিংবা মাছ ক্রেতার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে মাছ ছিনতাইয়ে এরা সিদ্ধহস্ত।
‘আলেয়া’ থাকে জলায়। পুরোনো জলাভূমিতে রাতের বেলা দপ্ করে একটা আলো জ্বলে উঠে লাফ মারলেই বুঝতে হবে যে এটি হলো আলেয়ার কীর্তি।