তোমার কি ধারণা, মশা অন্যদের তুলনায় তোমাকেই বেশি কামড়ায়? যদি তা-ই হয়, তবে তুমি বিপদেই আছ। এই দুর্দিনে তোমার জন্য সহমর্মিতা জানাই। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কারও কারও জন্য ডেঙ্গু জীবননাশক। সে জন্য সবারই সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, মশা কামড়ানোর আগেই ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কিন্তু তোমার সঙ্গে তো মশার শত্রুতা নেই। তবু মশা তোমাকেই কেন বেশি কামড়ায়? মশা আসলে সব মানুষকেই কামড়ায়। তবে এটি সত্যি, কিছু মানুষকে অন্যদের তুলনায় বেশি কামড়ায় মশা। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বসে থেকে তুমি যদি দেখো, অন্যরা তেমন মশার কামড় খাচ্ছে না, কিন্তু তুমি বারবার হাত-পা নেড়ে মশা তাড়িয়ে চলেছ, তবে তোমার খানিকটা দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। তোমার দিকে মশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি আকৃষ্ট হয়। কেন তোমাকে বেশি কামড়ায়, তার একমাত্র বা নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি মূল বিষয় চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে কিছু জৈবিক দিক আছে, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না।
আমাদের শরীরের ঘ্রাণ আছে। সবার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ বের হয়। সবার ঘ্রাণ এক রকম নয়। কারণ, শরীর থেকে কয়েক ডজন বৈচিত্র্যময় অণু বের হয়ে একটা নির্দিষ্ট ঘ্রাণ বা গন্ধ তৈরি করে। ধরো, আম থেকে একটা ঘ্রাণ বের হলো। তুমি শুঁকে বলে দিতে পার না, এটা অমুক উপাদানের ঘ্রাণ। কয়েকটি উপাদানের ঘ্রাণ একসঙ্গে মিশ্রিত হয়ে একধরনের ঘ্রাণ আমাদের নাকে লাগে। শরীরের ব্যাপারও তেমন। সম্ভবত রাসায়নিক যৌগের এই স্বতন্ত্র মিশ্রণ মশাকে আকৃষ্ট করে। গবেষকেরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। সহজে বললে, কিছু মানুষের শরীর থেকে এমন ঘ্রাণ বের হয়, যা মশাকে আকৃষ্ট করে। এর মানে এই না, যে মানুষের কাছে যার গায়ের গন্ধ সুন্দর লাগে তার প্রতি মশারাও বেশি আকৃষ্ট হবে। মশা এমন সব গন্ধ পায়, যেগুলো মানুষ পায় না। ধরো, তোমার দুই হাতে বারবার কামড় দেওয়ার জন্য মশা এসে বসছে। অথচ তোমার হাত থেকে কোনো গন্ধ আসছে না।
মশারা সিবামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ত্বকের একটি মোমযুক্ত তৈলাক্ত পদার্থ সিবাম। ত্বককে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে এমন অণু থাকে, যা শরীরের গন্ধে অবদান রাখে।
এবার একটা ছোট্ট অনুমান করা যাক। তোমার রক্তের গ্রুপ কী? তোমার দাবি অনুযায়ী, মশা যদি তোমাকেই বেশি কামড়ায়, তবে হতে পারে তোমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’। কেন ‘ও’ গ্রুপের মানুষকে মশা বেশি পছন্দ করে, গবেষকেরা এর কারণ এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি।
তুমি কেমন করে শ্বাস নাও, এর ওপরও মশার আকর্ষণ নির্ভর করে। মশারা কার্বন ডাই–অক্সাইড খুঁজে বেড়ায়। আমরা যত বেশি শ্বাস ছাড়ি, তত বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড আমাদের চারপাশে থাকে। এটি শুঁকে মশা উড়ে আমাদের কাছে চলে আসে।
আবার ঘাম যদি আমাদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে কয়েক ঘণ্টা ধরে থাকে, তাহলেও মশা বেশি কামড়াতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু পারফিউম, সুগন্ধযুক্ত সাবান এবং লোশন বা সানস্ক্রিন মশাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তাই মশা আছে, এমন কোনো জায়গায় বাইরে সময় কাটালে সুগন্ধমুক্ত পণ্য ব্যবহার না করাই ভালো হবে।
কালো এবং গাঢ় নীলের মতো কিছু পোশাকের রং মশাকে প্রচণ্ড আকর্ষণ করে। উজ্জ্বল কমলা এবং লাল রঙের দিকেও মশা আকৃষ্ট হয়। তাই মশা এড়াতে হালকা রঙের পোশাক পরা যায়। সতর্কতার জন্য লম্বা হাতাযুক্ত জামা এবং ফুল প্যান্ট পরতে পারো। অডোমস ব্যবহার করা যেতে পারে। ফার্মেসিতে অডোমস ক্রিম পাওয়া যায়। মশার ব্যাট ব্যবহার করা যায়। মশার কয়েল ব্যবহার না করাই ভালো। কয়েলের ধোঁয়া সবার জন্য ক্ষতিকর। কয়েলের ভেতরে বিষাক্ত উপাদান থাকে। যেগুলো শ্বাসকষ্টসহ শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসতে পারে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখলে মশা কম আসে।
মশা তাড়ানোর একটি সাধারণ কৌশল হলো, একটি ফ্যান টেবিলের নিচে দিয়ে দেওয়া। যেহেতু মশা মেঝের কাছাকাছি থাকে এবং পায়ে কামড় দিতে পছন্দ করে। খুব বিরক্তিকর এই কীট খুব ভালোভাবে উড়তে পারে না। বাতাস দিলে এরা কাছে আসতে পারে না। তাই ফ্যানের নিচে ঘুমানো ভালো। সব থেকে ভালো সুরক্ষা দেয় মশারি। মশারি টানাতে অনেকেই আলসেমি করে। কিন্তু মশারিই সবচেয়ে কার্যকর। মশা থেকে বাঁচতে সুরক্ষার পর্যাপ্ত উপায় গ্রহণ করলে মশা তোমাকে কামড়াতে পারবে না। প্রাণঘাতি অনেক রোগ থেকে তুমি থাকবে নিরাপদ।