হাঙরের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে দুই হাত হারালেন পর্যটক
ক্যারিবিয়ান সাগরের টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ৫৫ বছর বয়সী কানাডিয়ান নারী নাথালি রস হাঙরের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে হাঙরের কামড়ের শিকার হন। ৬ ফুট লম্বা হাঙরটির আক্রমণে তিনি তার দুটি হাতই হারান। নাথালি সাগর পাড়ের অগভীর পানিতে সাঁতার কাটছিলেন। তিনি দেখেন স্রোতে ভেসে একটি হাঙর পাড়ের দিকে চলে এসেছে। কোনো কিছু না ভেবেই হাঙরটির সঙ্গে ছবি তুলতে যান তিনি। ঠিক তখনই হাঙরটি তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুই হাতে হাঙরের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তার দুটি হাতই হাঙরটি কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে।
টার্কস ও কাইকোস দ্বীপের পরিবেশ ও উপকূলীয় সম্পদ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ছবি তোলার জন্য এক পর্যটক অগভীর পানিতে যান। সেখানে প্রায় ৬ ফুট লম্বা একটি হাঙরের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। হাঙরটি কোন প্রজাতির ছিল, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাঙরের কামড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কানাডায় পাঠানো হয়েছে। রয়্যাল টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ পুলিশ ফোর্স এখন এই ঘটনাটি তদন্ত করছে।
এমনকি ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কানাডার পররাষ্ট্র অধিদপ্তর গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা জানিয়েছে, ‘আমরা পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি। নাথালি রসকে সহায়তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। ঘটনার পর সৈকতটি পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে হাঙরটি গভীর পানিতে চলে যাওয়ার পর ৯ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ সৈকতটি পুনরায় চালু করে পর্যটকদের জন্য।
টার্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ ক্যারিবিয়ান সাগরের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীরের আবাসস্থল। এই অঞ্চলে হাঙরের কামড়ের ঘটনা খুব কম দেখা যায়। তবে মাঝেমধ্যে এমন দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঙর যখন মানুষকে শিকার ভেবে ভুল করে, তখন এমন মারাত্মক আঘাত করতে পারে। বিশ্বজুড়ে হাঙর বিষয়ক তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল শার্ক অ্যাটাক ফাইল অনুসারে, গত বছর ৮৮টি সম্ভাব্য হাঙরের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৪টি ছিল উসকানিমূলক। অর্থাৎ যেখানে মানুষ হাঙরের কাছাকাছি যেতে চেয়েছিল। এর মধ্যে চারটি ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। গত বছর নথিভুক্ত কামড়ের ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল টার্কস ও কাইকোস দ্বীপের। তবে সেটিও এত মারাত্মক ছিল না।
হাঙর ট্যাগিং ও ট্র্যাকিং-এর কাজে যুক্ত নিউইয়র্কের মৎস্যজীবী ও সংরক্ষণবিদ ক্রিস স্টেফানো বলেন, হাঙরের কাছ থেকে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। হাঙর ফোনকে ছোট কোনো মাছ ভেবে ভুল করতে পারে। তিনি ছোট ও উজ্জ্বল চকচকে মাছের কথা উল্লেখ করে বলেন, হাঙর কিংবা সমুদ্রের যেকোনো শিকারি প্রাণী এটিকে মাছ ভেবে ভুল করতে পারে। হাঙর শুধু মানুষ দেখলেই ভাবে না যে ‘আমি ক্ষুধার্ত, একটু কামড় বসাই’। এমনটা সাধারণত ঘটে না।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইম