নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, হেলিকপ্টার যেখানে অবতরণ করে, একটি বড় বৃত্ত থাকে সেখানে। আর বৃত্তের ভেতরে লেখা থাকে ইংরেজি অক্ষর H। যে দেশের হেলিপ্যাডই হোক না কেন, সব জায়গায় হেলিপ্যাডে H লেখা থাকে। ল্যান্ডিং বোঝাতে L কিংবা পার্কিং বোঝাতে Pও লেখা যেত। তা না করে সব সময় কেন শুধু H-ই লেখা থাকে?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চলো জেনে নেওয়া যাক হেলিপ্যাড আসলে কী? মূলত যেখানে হেলিকপ্টার অবতরণ করে বা নামে সেই জায়গাকে হেলিপ্যাড বলে। জানিয়ে রাখা ভালো যে হেলিপ্যাডে নামে শুধু হেলিকপ্টার। বিমান নামে রানওয়েতে। বিমান আর হেলিকপ্টারের মধ্যে পার্থক্যও বিস্তর। বিমান অনেক গতিতে অবতরণ করে রানওয়েতে। মানে বিমান অবতরণ করার পরও রানওয়ে ধরে অনেক দূর এগিয়ে যায় এর গতির কারণে। রানওয়ে ছাড়া বিমান অবতরণ সম্ভব নয়। কিন্তু হেলিকপ্টারের এই দায় নেই। যেখানে খুশি সেখানেই অবতরণ করতে পারে। আবার অবতরণ করার পর বিমানের মতো অনেকখানি পথ এগিয়ে যেতে হয় না। দরকার শুধু একটি হেলিপ্যাড।
হেলিপ্যাডে সাধারণত দুটি রং ব্যবহার করা হয়। ভালো করে খেয়াল করলে দেখবে, হেলিপ্যাডের চারপাশে একটি বৃত্ত থাকে। এই বৃত্তের রং থাকে হলুদ। আর বৃত্তের মাঝে যে বড় H লেখা থাকে, এটার রং সাদা। পাইলটেরা যাতে দূর থেকে দেখেও হেলিপ্যাড চিহ্নিত করতে পারেন, সে জন্য হলুদ ও সাদা রং ব্যবহার করা হয়। H–এর পরিবর্তে অন্য কোনো চিহ্ন ব্যবহার করলে হয়তো দূর থেকে অতটা ভালো করে দেখা সম্ভব হতো না। তা ছাড়া হেলিকপ্টার বলো আর হেলিপ্যাডই বলুন, শুরুটা কিন্তু H দিয়েই। তবে আরও একটা বড় কারণ আছে এই H লেখার পেছনে। এই চিহ্নের সাহায্যে নির্দেশ করে কোন দিকে মুখ করে অবতরণ করবে হেলিকপ্টার।
মূলত বিত্তশালীরা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। নিজস্ব হেলিকপ্টারও থাকে অনেকের। তাঁদের সময়ের মূল্য অনেক। দ্রুত যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হয় তাঁদের। যেহেতু সময় বাঁচাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন, তাই এ ব্যাপারটি মাথায় রেখেই হেলিপ্যাডে H লেখা থাকে। পাইলটরা এই চিহ্নের মাধ্যমে সহজে বুঝতে পারেন, অতিথিরা নেমে কোন দিকে যাবেন। সেদিকে মুখ করেই অতিথিদের নামানো হয়। তাঁদের জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থাও থাকে। উদ্দেশ্য একটাই—সময় বাঁচানো। তাঁরা নেমেই যাতে সোজা গন্তব্যের দিকে রওনা হতে পারেন। এতে সময়ক্ষেপণেরও কোনো ভয় থাকে না।
তোমার মনে হতে পারে, H তো দেখতে দুই পাশ থেকে একই রকম। তাহলে কোন দিকে মুখ রেখে অবতরণ করবে, তা পাইলট কীভাবে বুঝবেন? আসলে যখন H এভাবে লেখা থাকবে, তখন বুঝতে হবে হেলিকপ্টারটি এভাবে ওপরে নিচের দিকে করে অবতরণ করবে। আমরা বোঝার সুবিধার্থে এটিকে পূর্ব–পশ্চিম বলে ধরে নিতে পারি। তাহলে এভাবে থাকা মানে পাইলট পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে হেলিকপ্টার অবতরণ করবেন। আবার চিহ্নটি যদি অনুভূমিকভাবে থাকে অর্থাৎ উত্তর–দক্ষিণ দিকে অবস্থান করে, তাহলে বুঝতে হবে হেলিকপ্টারটির মাথা থাকবে উত্তর বা দক্ষিণ দিকে। অর্থাৎ, এই চিহ্নটির মাধ্যমে সহজে বোঝানো সম্ভব হয়, ঠিক কোন দিকে মাথা রেখে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করবে।
হেলিপ্যাড সাধারণত কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে মাঝেমধ্যে দুর্গম এলাকায় বা পাহাড়ে কাঠের তৈরি হেলিপ্যাডও দেখা গেছে। এ ছাড়া বৃত্তের চারপাশে হলুদ রঙের পরিবর্তে ভিন্ন রংও ব্যবহার করা হয়। অনেক হেলিপ্যাডে বৃত্তের ভেতরেও রং করে দেওয়া হয়। এতে দূর থেকে পাইলটদের হেলিপ্যাড চিনতে সুবিধা হয়।