সবার কি ৩২টি দাঁত থাকে?

জলহস্তীর দাঁত মোট ৪০টি

কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা জরুরি। রচনার ভাষায় বলা যায়, মানবজীবনে দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। খেয়াল করলে দেখবে, হুমকি দেওয়ার সময় প্রায়ই মানুষ অন্যের ৩২ দাঁত ফেলে দিতে চায়। দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকির মধ্যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ইচ্ছা প্রকাশ পায়। কিন্তু মানুষের দাঁত আসলে কয়টি? একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সর্বোচ্চ ৩২টি দাঁত থাকে। যাঁদের দাঁতের সংখ্যা ৩২, তাঁদের শেষ দাঁতটিকে বলাহয় উইজডম বা আক্কেল দাঁত। আক্কেল মানে হলো জ্ঞান। ধরা হয় যে যাঁরা পূর্ণবয়স্ক, তাঁরা নিশ্চয়ই সবকিছু বোঝেন। দুই জোড়া আক্কেল দাঁত উঠলে তাঁদের পূর্ণবয়স্ক মনে করা হয়। তাই তাঁরা যেহেতু জ্ঞানী আর বয়স্ক, তাঁদের অসম্মান করা যাবে না।

ছোটদের দাঁতের সংখ্যা ১ থেকে শুরু করে ২০টি হতে পারে। তাই বিশেষ হুমকিটি ছোটদের জন্য প্রযোজ্যই হবে না। বয়সের সঙ্গে ছোটদের দাঁতের সংখ্যা বাড়ে।

মানুষের ৩২টি দাঁতের মধ্যে আটটি দাঁত মাঝেমধ্যেই ভেঙে যায়। চিকিৎসকদের মতে, এই ভাঙা দাঁতের রোগীরা খুব সাধারণ কিছু খেতে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেন। কোনো কাপড় দাঁতে কাটতে গিয়ে ভেঙে যায় দাঁত। শক্ত কোনো খাবারে কামড় দিলেও খুট করে দাঁত ভেঙে যেতে পারে। এমনকি কলমের ক্যাপ চিবিয়েও কেউ কেউ দাঁত ভাঙে। তবে মানুষের দাঁত বেশ শক্তিশালী। অপব্যবহার করলে ভেঙে যেতে পারে।

অন্য প্রাণীদের দাঁতের কী অবস্থা? সব মেরুদণ্ডী প্রাণীর দাঁত থাকে। দাঁতের সংখ্যা, আকার, আকৃতি ও অবস্থান প্রজাতি অনুযায়ী আলাদা হয়। তবে মানুষ আর অন্যান্য প্রাণীর দাঁতের গঠন একই। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও খনিজ লবণের মিশ্রণে তৈরি হয় দাঁত।

হাতির দাঁত সাধারণত প্রতি ১০ বছরে একবার পড়ে যায়।

ছোটদের দাঁতে ক্যাভিটি হলে লোকে বলে, পোকা হয়েছে। মুখের লালার অম্লত্ব (অ্যাসিডিটি) কম হলে দাঁতে ক্যাভিটি হতে পারে। টুথপেস্টের মধ্যে থাকে ফ্লোরাইড নামের একটি উপকরণ। দাঁতের ক্যাভিটি দূর করে দাঁতকে ঠিক রাখে ফ্লোরাইড। কুকুর এই দিক দিয়ে ভাগ্যবান। কুকুরের মুখের লালার pH বা অম্লত্ব বেশি থাকে। তাই কুকুরের প্রায় কখনোই ক্যাভিটি হয় না।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে হাতির শুঁড়ের দুই পাশে দুটো লম্বা দাঁত থাকে। যার ওজন প্রায় পাঁচ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। মানুষের দাঁত যেমন ছোটবেলায় একবার পড়ে আবার গজায়। দ্বিতীয়বার ওঠার পরে সারা জীবন ধরে থাকে এই দাঁত। হাতির ক্ষেত্রে এই দাঁত সাধারণত প্রতি ১০ বছরে একবার পড়ে যায়। পরে আবার নতুন করে এক জোড়া গজায়। বন্য হাতির জীবনে ছয়বার পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটতে পারে। মানুষের দাঁত চিবাতে সাহায্য করে, হাতির দুই পাশের গজদন্ত কিন্তু মাটি খুঁড়ে পানি বের করার কাজে লাগে।

হাতির মতো আরেকটি বিশাল প্রাণী হলো নীল তিমি। হাতির চেয়ে বড়। পৃথিবীর বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণী নীল তিমি। তবে আকারে বিশাল হলেও এদের একমাত্র খাদ্য হলো ছোট একপ্রকার চিংড়ি। কারণ, নীল তিমির দাঁত নেই। আমরা নিশ্চয়ই নীল তিমির চেয়ে ভাগ্যবান। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য আমাদের দাঁত আছে।

আরও পড়ুন

বড় দাঁতের কথা বললেই আসে জলহস্তীর নাম। এরা খুব চালাক প্রাণী। যখন জলহস্তী মুখ খোলে, মনে হতে পারে যে এদের মাত্র চারটি দাঁত আছে। কিন্তু জলহস্তীর দাঁত মোট ৪০টি। প্রাণী হিসেবে এরা হিংস্র। তৃণভোজী হলেও শিকার করে বড়সড় প্রাণী খেয়ে ফেলার নজির আছে জলহস্তীর। পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়ে জলহস্তীর দাঁত আটটি বেশি।

আরমাডিলো

ছোটখাটো প্রাণীর মধ্যে আরমাডিলো খুব আকর্ষণীয়। দেখলে মনে হবে যেন একটা বড়সর ইঁদুর গায়ে বর্ম পরে আছে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে আরমাডিলোর দাঁত সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১০০টি! ভাগ্যিস আরমাডিলোর দাঁত ফ্লস করতে হয় না। চিকিৎসক যদি দাঁত ফ্লসের উপদেশ দিতেন আরমাডিলোদের, তাহলে বিপদই হতো। আর আরমাডিলোর সকালটাও হতো বেশ দীর্ঘ।

এ তো গেল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের দাঁতের কথা। দাঁতের দিক দিয়ে মেরুদণ্ডীদের হারিয়ে দিয়েছে অমেরুদণ্ডী প্রাণী। যেমন শামুক। শামুকের আছে প্রায় পঁচিশ হাজার দাঁত! যদিও এগুলো শামুকের জিহ্বার ওপরে থাকে। একটি শামুকের দাঁতের পরিমাণের ১ শতাংশ দাঁত থাকে ডলফিনের। প্রায় ২৫০টি। জীবনে একবারই ডলফিনের দাঁত গজায়। তবে ডলফিনের দাঁত শক্তিশালী রাখতে তাদের দাঁতে নতুন নতুন স্তর গজায়।

পকেট গোফার

দাঁতের নতুন স্তর গজানোর শীর্ষে রয়েছে ইঁদুরজাতীয় প্রাণী। ইঁদুরের দাঁত সব সময়ই বড় হতে থাকে। কাটাকাটি করে এরা দাঁত ক্ষয় করে। পকেট গোফার একধরনের ইঁদুর। মাটি খুঁড়ে গর্ত করে এরা বাস করে। এদের দাঁত আমাদের আঙুলের নখের মতো বড় হয়। ১ বছরে প্রায় ১৫ ইঞ্চি! এ কারণেই সারাক্ষণ কাটাকাটিতে ব্যস্ত থাকে পকেট গোফাররা।