আজকের গল্পটা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর ভাই-বোনদের নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদকে আমরা সবাই চিনি। তিনি অনেক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। নাটক আর সিনেমাও আছে অনেকগুলো। তাঁর ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালও বিখ্যাত সাহিত্যিক, শিক্ষক। দুজনেরই ছেলেবেলার গল্প নিয়ে বই আছে। তাঁদের আরেক ভাই আহসান হাবীব। বিখ্যাত কার্টুনিস্ট, লেখক এবং উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক।
এই তিন ভাই তোমার খুব পরিচিত হওয়ার কথা। তুমি হয়তো এঁদের ভক্ত। হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন ২০১২ সালের জুলাই মাসে। অন্য দুই ভাই প্রতিবছর নানা রকম বই লিখে আমাদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। লেখক হিসেবে এই তিন ভাইকে তুমি নিশ্চয়ই চেনো। তুমি কি জানো, তিন ভাইয়ের আছে তিন বোন। বড় বোন কলেজে বাংলা পড়াতেন। নাম সুফিয়া হায়দার। পরের বোন মমতাজ শহীদ। বাটিক-টাইডাই-জান্টিং নিয়ে যিনি দুটি বই লিখেছেন। কাপড়ের রং কীভাবে কী করা লাগে—এসব। হুমায়ূন আহমেদের মতে, তাঁর এই বোন এই বই নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে দিয়ে রেখেছে। মাঝেমধ্যে বই বিক্রির টাকা তুলে চটপটি খান। পরের বোন শিখু। তো আজকের গল্প এই ভাই-বোনদের পুতুল খেলা নিয়ে।
মমতাজ শহীদ একটা বই লিখেছেন তাঁর দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। বইয়ের নাম ‘আমার দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদ’। বইয়ের নামটা হুমায়ূন আহমেদ নিজে দিয়েছেন। মমতাজ শহীদ দাদাভাইকে বইয়ের নাম দিয়ে দেওয়ার জন্য জোড় দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠির দাবি অনুযায়ী একটা নাম দিয়েছেন। সঙ্গে সুন্দর একটা ভূমিকা।
বইটিতে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ছোট ছোট ঘটনা বর্ণনা করেছেন লেখক। অবধারিতভাবে অন্য সব ভাই-বোন, বাবা-মায়ের গল্প এসেছে। এর মধ্যে তোমার হয়তো কিছু গল্প আগে থেকেই জানা। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নিজের বইয়ে লিখেছেন। কিছু গল্প মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন।
বইয়ের প্রথম গল্প বা ঘটনাটি পুতুল খেলা নিয়ে। শিরোনাম ‘অর্ডারলি আব্দুর রউফ’। ঘটনাটা এ রকম—বড় বোন সুফিয়া ও মেজ ভাই ইকবাল তখন একই ক্লাসে পড়তেন। ক্লাস ওয়ান বা টু—এ রকম হবে। তাঁদের মধ্যে খুব মিল ছিল। এতই মিল যে এই দুজন মিলে একটা দল। তাঁরা দুজন আলাদা পুতুল খেলতেন। রান্না-রান্না খেলতেন। তাঁদের খেলা দেখে বইটির লেখক মমতাজ শহীদ অনেক কষ্ট পেতেন। তাঁর দুই ভাই-বোন কাগজ কেটে কেটে খেলেন, কী বানান, তাঁকে দেখান না, খেলায় নেন না। এটি দেখে দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদের মায়া হলো। তিনি মমতাজ শহীদকে বললেন, ‘আচ্ছা, আমি তোর সঙ্গে খেলব। কিন্তু খেলাটা কীভাবে খেলতে হয় আগে দেখে আসি।’
দেখা গেল, লেখকের ভাইয়া, মানে মুহম্মদ জাফর ইকবাল হয়েছেন অর্ডারলি। বলে রাখি, তাঁদের বাবা ফয়জুর রহমান ছিলেন পুলিশের কর্মকর্তা। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তাঁর কাজ করে দেওয়ার জন্য ছিল আব্দুর রউফ নামের একজন অর্ডারলি। তো খেলার মধ্যে ভাইয়া সেজেছেন অর্ডারলি। আসল আব্দুর রউফের মতো করে গেছেন বাজার করতে। পুতুল খেলার বাজার যেমন করে, তেমন। মিথ্যা মিথ্যা বাজার।
হুমায়ূন আহমেদ খেলা দেখে বোনকে বললেন, আমি তোর রৌফ (রউফকে তাঁরা বলতে রৌফ) ভাই। বল কী কী বাজার করে আনতে হবে?
মমতাজ শহীদ বললেন, চাল, মরিচের গুঁড়া আর পান লাগবে। যেগুলো মূলত বালু, ইটের গুঁড়া আর খেলার পান বা পানের মতো দেখতে গাছের পাতা। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘আচ্ছা। তুই শুধু অর্ডার করবি। বলবি, চাল লে আও, ডাল লে আও। দেখ আমি পারি কি না।’ আব্দুর রউফ ছিলেন উর্দুভাষী। চাল, ডাল আর পানের সঙ্গে ‘লে আও’ যুক্ত করে দিলেই হয়ে গেল আব্দুর রউফের মতো করে বলা উর্দু ভাষা!
মমতাজ শহীদ অর্ডার দিলেন। চাল লে আও! মরিচ লে আও! পান লে আও!
হুমায়ূন আহমেদ গেলেন খেলনা বাজার করতে। দীর্ঘ সময় পর বাজার নিয়ে ফিরলেন। দেখা গেল, তিনি বালু না এনে এনেছেন ঘরের সত্যিকার চাল। ইটের গুঁড়া না এনে এনেছেন সত্যিকার মরিচের গুঁড়া। আর মায়ের খাওয়ার পান থেকে পান ছিঁড়ে নিয়ে এসেছেন!
আর্ডারলি রউফের (হুমায়ূন আহমেদের) বাজার দেখে বড় বোন সুফিয়া হায়দার আর মেজ ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল হেসে কুটিকুটি। আর মমতাজ শহীদের তো মাথা খারাপ অবস্থা। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ ‘ড্যাম কেয়ার’।
বাকি গল্প জানতে হলে পড়তে হবে ‘আমার দাদাভাই হুমায়ূন আহমেদ’। বইটি বের হয়েছে অবসর প্রকাশনী থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন আহসান হাবীব। মুদ্রিত মূল্য ২২৫ টাকা।