গান আমরা কে না ভালোবাসি? আর তা যদি হয় প্রিয় ব্যান্ডের, তাহলে তো কথাই নেই! কিন্তু কেমন হবে যদি একদিন হঠাৎ শুনতে পাও তোমার প্রিয় ব্যান্ড দলটি আর থাকছে না? ১৪ জুন এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় বিটিএস–ভক্ত-আর্মিসহ গোটা বিশ্বের সংগীতাঙ্গনকে। জুনের ১০ তারিখ নতুন অ্যালবাম ‘প্রুফ’ মুক্তি দেয় জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস। অ্যালবাম মুক্তির ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ ১৩ জুন ছিল ব্যান্ডটির নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঠিক এর এক দিন পর ১৪ জুন গত বছরগুলোর মতো এবারও ‘বিটিএস ফেস্তা’ নামের আড্ডা অনুষ্ঠানে একত্র হন ব্যান্ডটির সাত তারকা। আর সেখান থেকেই ‘বিটিএসের পথচলার এখানেই সমাপ্তি’—এমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
কোনো বিচ্ছেদ কিংবা বিরতি নয়, বরং দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি বিটিএস সদস্যরা এবার নিজেদের একক কাজে সমানতালে মনোযোগী হবেন বলে জানিয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়েই নতুন অধ্যায়ে পা দিতে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। নতুন এই অধ্যায়কে ‘বিটিএস চ্যাপ্টার-টু’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ভেঙে যাওয়ার গুজব সৃষ্টির কয়েক ঘণ্টার মাথায় বিটিএস ব্যান্ডের স্বত্বাধিকারী হাইব এক বিবৃতিতে জানায়, বিটিএস কোনো ধরনের বিরতি নিচ্ছে না। এই মুহূর্তে সদস্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রজেক্টে বেশি মনোনিবেশ করবেন।
ইউটিউবে প্রচারিত ‘বিটিএস ফেস্তা’ নামের সেই আড্ডা আয়োজনের পুরো সময়ে ব্যান্ডের সদস্যরা একে একে নিজেদের ভয়, ভীতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মন খুলে কথা বলেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্যান্ডের দলপতি আর এম। তিনি বলেন, ‘বিটিএসকে আমি সব সময়ই অন্য ব্যান্ডগুলোর চেয়ে আলাদা ভেবেছি। বিটিএস এবং আর্মিরা একটি পরিবারের মতো। কিন্তু কে-পপ ও পুরো আইডল সংস্কৃতির সমস্যা হলো, এটি আপনাকে নিজের মতো করে বড় হওয়ার সুযোগ দেবে না। আপনাকে গান কিংবা কিছু না কিছু চালিয়ে যেতে হবে।’ জনপ্রিয় এই তারকা আরও বলেন, ‘কখনোই ভাববেন না যে বিটিএস নেই। আমরা মনেপ্রাণে এক থাকতে চাই। আমরা আরও ভালো কিছু নিয়ে ফিরে আসব।’ এরপর একে একে ব্যান্ডের প্রত্যেক সদস্য নিজেদের ভেতরের না বলা নানা কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে নিজেদের আরও ভালোমতো গড়ে ভবিষ্যতে কীভাবে নতুন গান ভক্তদের উপহার দিতে পারেন—আলোচনা করেন সেটা নিয়েও। কোরিয়ান ভাষায় প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে ছিল ইংরেজি সাবটাইটেল। সেখানে একপর্যায়ে সদস্যদের মধ্যে নিজেদের বিশ্রামের স্বার্থে সাময়িক বিরতি নিয়ে কথা উঠে আসে। আর সেটি ইংরেজি সাবটাইটেলে ‘Hiatus’ বলে উল্লেখ করা হয়, যার অর্থ ‘বিচ্ছেদ’। আর বিভ্রান্ত এই শব্দের জেরেই শুরু হয় বিটিএস ভাঙনের গুজব। এরপরই বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে বিটিএসের ‘ডিসব্যান্ড’ নিয়ে বেশ কিছু খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে পরে সেগুলোর বেশ কয়েকটি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার মাধ্যমে সংশোধন করা হয়।
ভাঙনের গুঞ্জন ওঠার পর বুধবার দলের অন্যতম সদস্য জাংকুক লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ ভি লাইভে এসে ভুল–বোঝাবুঝির সংশোধন করে বলেন, ‘আমরা আমাদের একক কাজগুলোতে মনোনিবেশ করার জন্য সময় চাইছি। তার মানে এই না, দল হিসেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দেব। আমি সেই ভুল–বোঝাবুঝি দূর করতে এসেছি। বিটিএস ফরএভার, আর্মি ফরএভার।’ এরপর তিনি এই কঠিন সময়েও পাশের থাকার জন্য আর্মি-ভক্তদের ধন্যবাদ জানান।
এরপরই উইভার্স অ্যাপে এই ভুল–বোঝাবুঝিকে ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ হিসেবে আখ্যা দেন দলনেতা আর এম। দীর্ঘ একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কয়েক দিন ধরে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিটিএসের ভেঙে যাওয়া নিয়ে অনেক গুঞ্জন দেখছি। এমনকি আমার ৯-১০ বছরের ক্যারিয়ারে এত ফোন কল আমি কখনো পাইনি। আমাকে অনেকেই বিটিএসের ভাঙন নিয়ে প্রশ্ন করছেন। আমরা আমাদের ভক্তদের সঙ্গে খোলা মনে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছি। তারা জানেন, আমরা কী বোঝাতে চেয়েছি। আমি সততার সঙ্গে বলতে চাই, এখনই কিছু শেষ হচ্ছে না।’
সাত সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে নিজেদের একক প্রজেক্টের জন্য কাজ শুরু করেছেন। আমেরিকান জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী চার্লি পুথের একক গান ‘লেফট অ্যান্ড রাইট’-এ প্রথমবারের মতো এককভাবে অংশ নিয়েছেন জাংকুক। গানটি মুক্তি পেয়েছে ২৪ জুন। এ ছাড়া জুলাইয়ের মাঝামাঝি সপ্তাহে আসতে পারে জে-হোপের একক এলবাম ‘জ্যাক ইন দি বক্স’। সেই সঙ্গে একই মাসের শেষের দিকে আমেরিকান এক সংগীত ফেস্টিভ্যালে একক শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। অন্যদিকে আরেক সদস্য ভি তাঁর তারকা বন্ধু দলের সঙ্গে ‘ইন দ্য সুপ’ নামের চার পর্বের একটি রিয়েলিটি শো-তে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে আগামী জুলাইয়ের ২২ তারিখ থেকে।
‘এটাই কি সেরাটুকু ছিল? কারণ, আমি আগামীর সেরাটা দেখতে চাই। সেই মুহূর্ত এখনো আসা বাকি।’ সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বিটিএসের নতুন গান ‘ইয়েট টু কাম’-এর শুরু ঠিক এ রকম। আসলেই যেন তাদের সেরাটা এখনো দেখা বাকি বিশ্ববাসীর। ‘বিটিএস চ্যাপ্টার-টু’র জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। সংগীতের দুনিয়ায় বিটিএস যে অনন্য, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ক্যাচি বিট, চমৎকার ভিজ্যুয়াল ও আকর্ষণীয় গানের কথা দিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ব্যান্ডটি মাতিয়ে আসছে পুরো বিশ্বকে। ভাঙছে একের পর এক রেকর্ড। আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, গ্র্যামি ও জাতিসংঘের সদর দপ্তরের পর এবার তাঁরা ঘুরে এসেছেন আমেরিকার হোয়াইট হাউস থেকে। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটির সাত সদস্য।
দক্ষিণ কোরিয়ার ছোট কয়েকটি শহর থেকে হোয়াইট হাউস—এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না বিটিএস সদস্যদের জন্য। তবু ব্যান্ডটি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘ ৯ বছর। বিটিএস চ্যাপ্টার–ওয়ান তো শেষ, এবার দেখার পালা চ্যাপ্টার টু-তে বিটিএস ভক্তদের জন্য কেমন চমক অপেক্ষা করছে। তত দিন পর্যন্ত উপভোগ করতে থাকো তাঁদের বিভিন্ন আয়োজন।