মনে করো, তুমি পৃথিবীর দীর্ঘতম আমাজন নদীতে নিজের মতো নৌকা বাইতে বাইতে চলেছো। মাঝে চোখ রাখছো, আশপাশে কোনো অ্যানাকোন্ডা নেই তো? হঠাৎ খেয়াল করলে একটা কৌতূহলী গোলাপি ডলফিন তোমার নৌকার পাশে সাঁতার কাটছে। ব্যাপারটা কেমন হবে, বলো তো? নিশ্চয় মনে হবে, ভুল দেখছো? নাহ্, তুমি ভুল দেখোনি। এটা কোনো রূপকথার গল্পও নয়। পৃথিবীতে গোলাপি ডলফিন আসলেই আছে। আর এর বাস আমাজন নদীতে। আমাজন নদীর ডলফিনের আরেক নাম ‘বোটো’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইনিয়া জিও ফ্রোন্সিস’। এটি ডলফিনের বংশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৮ ফুট বা ২ মিটার এবং ওজন প্রায় ৪৫০ পাউন্ড বা ২০৪ কেজি। আমাজন নদীর ডলফিন শুধু আকারের জন্য আলাদা নয়।
মিঠাপানির ডলফিন আছে পাঁচ প্রজাতির। এর মধ্যে বোটো ডলফিন একটি প্রজাতি। দক্ষিণ আমেরিকার নদী ও মৌসুমি বন্যার কারণে সৃষ্ট অস্থায়ী হ্রদগুলোয় বিকশিত হয়। কখনো কখনো এদের রং আশ্চর্যজনকভাবে গোলাপি হয়। যদিও জন্মগতভাবে এরা ধূসর। তবুও এই প্রজাতির পুরুষ সদস্যদের সহজে শনাক্ত করা যায়। কারণ, বড় হতে হতে শরীরে গোলাপি আভা ফুটে ওঠে। এদের রং কখনো কখনো সম্পূর্ণ গোলাপি, আবার কখনো চাপা ধূসর হয়। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় ডলফিনদের মারামারির কারণে তৈরি হওয়া ক্ষতস্থানের কোষকে। খেলার লড়াই বা সঙ্গী অধিকারের জন্য এরা মারামারি করে। এই থেকে সৃষ্টি হয় ক্ষত। ধারণা করা হয়, এ থেকে আসে গোলাপি রং।
মেয়ে ডলফিনের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হলো গাঢ় রঙের ডলফিন। একটি তত্ত্ব আছে, এই রঙের ডলফিন আশপাশের পানির সঙ্গে সহজেই মিশে যায়। ভারী বৃষ্টির সময় আমাজন নদীসহ অন্যান্য নদীগুলো একটি ঘোলাটে লাল-গোলাপি বর্ণে পরিণত হয়। এই রঙের সঙ্গে ডলফিনের রং মিশে যায়। এই ডলফিন লবণ পানির ডলফিনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। নদীর ডলফিনের গোলাপি রং ছাড়াও আরেকটি বৈশিষ্ট্য আছে, যা সামুদ্রিক ডলফিন থেকে এদের আলাদা করে। সামুদ্রিক ডলফিনের পিঠের দিকে একটি পৃষ্ঠীয় পাখা থাকে। আর নদীর গোলাপি ডলফিনের পিঠের দিকে থাকে কুঁজ। এরা বেঁচে থাকে ১০ থেকে ৩০ বছর। শিকার করার সময় এরা দল বেঁধে কাজ করে। দেখা গেছে, প্রায় ৩৫টি গোলাপি ডলফিন একসঙ্গে শিকার ধরতে ছুটে। এই ডলফিনের জীবন এখন হুমকির মুখে। ২০২৩ সালে নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় মারা গেছে ১৫৪টি ডলফিন। এটিই এক বছরে মারা যাওয়া সর্বোচ্চ সংখ্যা।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস