ফ্রান্সের সমুদ্রসৈকতে ভেসে এসেছে শত শত মৃত পাখি

গিলেমোটআরএসপিবি ডট অর্গ

সম্প্রতি ফ্রান্সে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরের সৈকতগুলোতে ভেসে এসেছে শত শত মৃত সামুদ্রিক পাখি গিলেমোট। সমুদ্রের স্রোত পাখিগুলোকে সৈকতে ভাসিয়ে এনেছে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, তীব্র ঠান্ডা ঝড়ের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল পাখিগুলো। খাবার খেতে না পেরে ক্লান্তিতে এগুলো মারা গেছে।

গিলেমোট পাখির পিঠের দিকটা কালো, বুকের দিকে থাকে সাদা রং। কিছু প্রজাতির গিলোমোটের পা লাল। পাখিগুলো গভীর পানিতে ডাইভ দিয়ে মাছ ধরে। ১৪ ইঞ্চি লম্বা এই পাখির প্রজনন ঋতুতে দানায় সাদা দাগ দেখা যায়। মূল রং থাকে কালো। শীতকালে বুকের দিক পুরো সাদা আর ওপরে বাদামি এবং সাদা দাগযুক্ত রং থাকে। গিলেমোট কখনো বড় ঝাঁক বেঁধে ওড়ে না। এদের ডিমে দুটি দাগ থাকে। পাথরের খাঁজ বা ফাটলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা উড়তে না পারা পর্যন্ত প্রায় ছয় সপ্তাহ এখানে থাকে।

আরও পড়ুন

ফ্রেঞ্চ লিগ ফর বার্ডসের অনুমান, এই বছরের শুরু থেকে ফ্রান্সের আটলান্টিক উপকূলে পাঁচ শর বেশি কমন গিলেমোট পাখি মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কমন গিলেমোট হলো একরকম পেঙ্গুইন বা পাফিনের মতো সামুদ্রিক পাখি। সিএনএনের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মার্চ মাসের শুরুতে পাঁচ শ মৃত পাখি তীরে ভেসে আসে। তবে এবারই মৃত পাখি ভেসে আসার ঘটনা প্রথম না। অলাভজনক সংস্থা সি শেফার্ড ফ্রান্সের স্বেচ্ছাসেবক অ্যান্টোইন প্রেভেল বলেছেন, শীতকালে নিয়মিত গিলেমোটের মৃতদেহ সমুদ্রসৈকতে পাওয়া যায়। তবে গত সপ্তাহে যে পরিমাণ পাওয়া গেছে, তা অস্বাভাবিক।

শীতে ক্লান্ত গিলোমেট
ছবি: ইকোমেয়ার

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রে কঠিন পরিস্থিতির কারণে পাখিগুলো ক্লান্ত হয়ে মারা গেছে। ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের বিজ্ঞানী জেরোম ফোর্ট বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন ঝড় হয়। ঝড়ের তীব্রতাও বাড়ে। বিশেষ করে শীতের সময়ে ঝড় সামুদ্রিক পাখিদের অনেক বেশি আটকে ফেলে।’ এই পাখিগুলো সমুদ্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। পুরো জীবন সমুদ্রে কাটায়। নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ ধরে খায়। প্রজননের জন্য বাসা বাঁধে কোনো নির্জন ও নিরাপদ দ্বীপে। শুধু খাবারের অভাব হলেই উপকূলে ফিরে আসে।

মানুষের কারণে পৃথিবী এমনভাবে বদলে গেছে যে পরিযায়ী প্রাণীরা বিলুপ্তির মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামুদ্রিক পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাইক্রো প্লাস্টিক এবং রাসায়নিক দূষণের বিষক্রিয়াও পাখিদের দুর্বল করে দিতে পারে। আবার এই পাখিরা যে মাছ শিকার করে, সেগুলোও সহজে পাওয়া যায় না। এই মাছের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে পাখিগুলো সমুদ্র উপকূলে সরে এসে আশ্রয় নেয়।

পাথুরে টিলায় আশ্রয় খোঁজে গিলোমেট
উইকিমিডিয়া কমন্স

এই পাখিগুলো দুই বা তিন দিন খাবার ছাড়া বাঁচতে পারে না। শরীরে অল্প শক্তি জমা করে রাখতে পারে। বেঁচে থাকার জন্য এদের প্রায় নিয়মিত খাওয়ার প্রয়োজন হয়। গবেষকেরা বলছেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এমন ঝড়ের মধ্যে পাখিগুলো ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে পারে না। খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। না খেয়ে ক্লান্তিতে মারা যায়।

আরও পড়ুন

প্রকৃতিতে এমন গণমৃত্যু মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। যেমন ২০২২ সালের মে-জুন মাসে আফ্রিকার বতসোয়ানায় একটি বিপর্যয় ঘটে। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একসঙ্গে প্রায় ৩৩০টি হাতি মারা যায়। এক এলাকায় একসঙ্গে এত হাতির মৃত্যু এর আগে কখনো দেখা যায়নি। গবেষকদের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিষাক্ত সায়ানো ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি পান করে হাতির মৃত্যু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিতে বিষাক্ত সায়ানো ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। বতসোয়ানা হাতির নিরাপদ আবাস হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকান হাতির এক–তৃতীয়াংশ বসবাস করে এ দেশে। সংখ্যার দিক থেকে এ দেশে হাতি আছে ১ লাখ ৩০ হাজার। একক দেশ হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হাতি এখানে পাওয়া যায়। আইন করে হাতি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই হাতিরা এখানে তুলনামূলক নিরাপদ।

আরও পড়ুন

এর আগে ২০১৫ সালে কাজাকিস্তানের একসঙ্গে দুই লাখ সাইগা এন্টিলোপের মৃত্যু ঘটেছিল। যেগুলোও ব্যাকটেরিয়ার বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল। পাস্টেরেলা মালটোসিডা নামক ব্যাকটেরিয়াকে এই গণমৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা এমন গণমৃত্যুর হার কমাতে পারে।