বর্তমানের কিশোর ২০৪০ সালে যে চাকরি করবে

এখন অনেক চাকরি আছে যা দশ-বিশ বছর আগে ছিল না। কারণ, প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। পনেরো-বিশ বছর পরে এই গতি আরও বাড়বে। বদলে যাবে মানুষের কাজের জগৎ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ কার্ল ফ্রেয়ের সহায়তায় বিবিসি ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা আর চাকরিক্ষেত্র কোনগুলো হবে তা অনুসন্ধান করেছে। সেই অনুসন্ধানের ফলাফল তুলে ধরা হলো কিশোর আলো পাঠকের জন্য।

প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্বতনে বদলে যাবে মানুষের কাজের জগৎছবি: বিবিসি

নবায়নযোগ্য শক্তিবিজ্ঞানী

বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের পাশাপাশি সৌর প্যানেল ইনস্টলকারীদের কাজের অভাব হবে না। বর্তমানে এই পেশায় লোকের চাহিদা বাড়ছে
ছবি: বিবিসি

রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টগুলোতে রাতে আলো জ্বালানোর জন্য সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হয়। গ্রামের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য হামেশাই দেখা যায় সৌর প্যানেল। এই প্রবণতা বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলছে। সবাই নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকছে। নবায়নযোগ্য শক্তি হলো, যে শক্তি আবারও ব্যবহার করা যায়, শক্তির উৎস দ্রুত শেষ হয়ে যায় না। যেমন সূর্যের তাপ, বায়ু, স্রোত ইত্যাদি।

যুক্তরাজ্যে ২০৫০ সালের মধ্যে বায়ু এবং সৌর ব্যবহার করে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের সচেতনতার কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি-বিশেষজ্ঞদের অনেক কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এই প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে এবং প্রযুক্তির উপকরণ তৈরি করতে নানা ধরনের লোক লাগবে। এখনকার কিশোরকে সম্ভাবনাময় এই ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে এখনই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের পাশাপাশি সৌর প্যানেল ইনস্টলকারীদের কাজের অভাব হবে না। বর্তমানে এই পেশায় লোকের চাহিদা বাড়ছে। তাই এই বিষয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হলে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়।

ভার্চু৵য়াল রিয়ালিটি ডেভেলপার

তোমার একটি থ্রিডি অ্যাভাটার এই ভার্চু৵য়াল মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াবে
ছবি: বিবিসি

আগামীতে এমন হতে পারে, অফিসে যাওয়া বা ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে মিটিং করার পরিবর্তে আমরা যুক্ত হব ভার্চু৵য়াল মহাবিশ্ব বা মেটাভার্সে। এই জগতে প্রবেশের জন্য তোমার দরকার হবে এক জোড়া ভার্চু৵য়াল রিয়ালিটি গগলস। তোমার একটি থ্রিডি অ্যাভাটার এই ভার্চু৵য়াল মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াবে। এখানে তুমি একা থাকবে না, জায়গাটা হবে জনবহুল। এই বিশ্বে তোমরা তখন সহকর্মীদের সঙ্গে ভার্চু৵য়াল ডেস্কের চারপাশে বসে সভা করবে।

মেটাভার্সের মতো ভার্চু৵য়াল জগৎ তৈরি করতে ডেভেলপারদের কোড লিখতে হবে। এআই আমাদের জন্য কিছু কোড লিখে দেবে; কিন্তু মানুষও এআইয়ের পাশাপাশি কাজ করবে। এআই হবে মানুষের সহযোগী। ২০৪০ সালে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি কোডার থাকবে। এআই সহকারী মূল কাজগুলো করতে পারবে; কিন্তু কোডিংয়ে সৃজনশীলতার অনেক জায়গা আছে।

ভার্চু৵য়াল মেটাভার্সের একজন ডেভেলপার হতে হলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি), গণিত আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারো।

আরও পড়ুন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিবিদ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি
প্রতীকী ছবি/এক্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সম্প্রতি একটা বিস্ফোরণ হয়েছে। সঙ্গে তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। নৈতিকতার প্রশ্ন সামনে আসছে। এআই দিয়ে অমুক কাজ করা কি ঠিক হবে? এআই দিয়ে ছবি বানিয়ে নিলে এই ছবির ক্রেডিট কার? এমন সহজ নৈতিকতার প্রশ্ন থেকে শুরু করে জটিল সব প্রশ্ন সামনে আসবে।

এখন এআই নিয়ে মানুষের উদ্বেগ হলো, এআই কি মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে? যদি হয় তবে ভালো হবে না খারাপ হবে? গুগল, মাইক্রোসফটসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখন এআই নীতিবিদদের নিয়োগ করে। যারা এআইয়ের অনৈতিক বা অনুপযুক্ত ব্যবহারের সম্ভাবনা কমাতে গবেষণা করেন।

এআই নীতিবিদদের চাহিদা এখন বাড়ছে। কারণ, এটি নতুন প্রযুক্তি। অনেক লোক এই বিষয়ে আগ্রহী। বিশেষ করে কীভাবে এআই নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা এখন অনেকের মাথাব্যথার কারণ। নিশ্চয়ই সামনের দিনগুলো হবে এআইময়।

এআই–নীতিবিদ হতে গেলে পড়তে হবে দর্শন, আইসিটি আর ব্যবসা।

আরও পড়ুন

অগমেন্টেড রিয়েলিটি শিল্পী

এমন প্রযুক্তি এখন আমরা ব্যবহার করি। এই প্রযুক্তিতে যে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়, তা স্ক্রিন, ভিআর হেডসেট ও জয়স্টিক ব্যবহার করে

রংতুলি ছাড়া আঁকাআঁকি করেন, এমন শিল্পীদের কথা নিশ্চয়ই তুমি জানো। গেমস ডিজাইনার ও আর্ট ডিরেক্টরদের মতো শিল্পীরা কম্পিউটার কোড ব্যবহার করে নকশা বা ডিজাইন করেন।

এআই প্রযুক্তি আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন যে প্রযুক্তি আছে, তার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করতে পারি। বাস্তব অনুভূতি দিতে পারে, এমন প্রযুক্তি এখন আমরা ব্যবহার করি। এই প্রযুক্তিতে যে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়, তা স্ক্রিন, ভিআর হেডসেট ও জয়স্টিক ব্যবহার করে। তুমি এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তব অনুভূতি পেতে পারো। বিশেষ চশমা আর সেন্সরের কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে বাস্তব অনুভূতি বেড়ে যাবে।

ভবিষ্যতের অগমেন্টেড রিয়েলিটির ডিজিটাল বিশ্ব এগিয়ে যাবে বহুদূর। এর নকশা করার জন্য এআই সাহায্য নেওয়া হবে। পাশাপাশি দরকার হবে শিল্পী ও সৃজনশীল মানুষ।

যারা শিল্পী হতে চায়, তারা প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। নিজের শিল্পীসত্তা ঘষামাজা করতে পারে।

এ ছাড়া ভবিষ্যতে দরকার হবে যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক। মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেতে মানুষ যোগব্যায়ামের মতো কার্যক্রমে সময় দেবে। ২০৪০ সালেও রেস্টুরেন্ট বা বাইরে খাওয়া আরও সুবিধাজনক হবে, প্রতিদিনের কাজ হবে। বাসায় খাবারের আয়োজনের ধারণা বদলে যাবে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা খাওয়ার ধারণা বদলে ফেলবে। রেস্টুরেন্টের জন্য প্রয়োজন হবে শেফ। দরকার হবে খাবার পরিবেশক। পেশা হিসেবে এই ক্ষেত্র বড় হয়ে উঠবে নিশ্চিত।

রান্না করতে পছন্দ করে যারা, প্রশিক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তাঁদের প্রস্তুতির সময় এখনই।

সূত্র: বিবিসি ইউকে

আরও পড়ুন