বিচিত্র ধরনের প্রাণে পরিপূর্ণ থাকে রেইনফরেস্ট। পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠের মাত্র ২ ভাগ এলাকাজুড়ে রেইনফরেস্ট থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের অর্ধেক উদ্ভিদ ও প্রজাতির আবাসস্থল এই রেইনফরেস্ট। নাম থেকেই বোঝা যায়, রেইনফরেস্টে অনেক বৃষ্টি হয়। আসলেই তা–ই। প্রতিবছর গড়ে ৭০ ইঞ্চি বা ১৭৮ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয় রেইনফরেস্টে। পৃথিবীতে অনেক ধরনের রেইনফরেস্ট রয়েছে। তবে বোঝার জন্য এগুলোকে মাত্র দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নাতিশীতোষ্ণ। তবে রেইনফরেস্টের আকার বর্ণনা করা কঠিন। কোথায় বনের শুরু আর কোথায় শেষ, তা সহজে স্পষ্ট করে বলা যায় না। একেকটি বন বেশ কয়েকটি দেশজুড়ে বিস্তৃত হতে পারে। তবে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট নিয়ে কারও মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তৃতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে যেগুলো আছে, তা নিয়ে চাইলে যেকেউ প্রশ্ন তুলতেই পারে। আমরা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচটি রেইনফরেস্ট সম্পর্কে জানব।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইনফরেস্ট এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট। প্রায় ৬০ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে আমাজন বিস্তৃত যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের চেয়েও বড়। এটিই যে সবচেয়ে বড়, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্টের চেয়েও এটি প্রায় ৩ গুণ বড়। ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়াসহ দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৯টি দেশজুড়ে রয়েছে আমাজন। পৃথিবীর মোট জীববৈচিত্র্যের প্রায় ১০ ভাগ রয়েছে শুধু আমাজনে। আমাজনের সবচেয়ে বেশি অংশ রয়েছে ব্রাজিলে, ৩০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের বেশি। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ব্রাজিলের বনের আয়তন দ্রুত কমে যাচ্ছে। ২০০১ সাল থেকে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার বন নিধন করা হয়েছে দেশটিতে। মূলত কৃষিকাজের জন্য ব্রাজিলে বন ধ্বংস হচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই শেষ হয়ে যেতে পারে আমাজন রেইনফরেস্ট। ১৯৭৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার বন হ্রাস পেয়েছে। এ বনে ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১ হাজার ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪০০ প্রজাতির উভচর ও প্রায় ৩ হাজার প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে।
এটি মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত। প্রায় ৩৭ লাখ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে এ বন বিস্তৃত। তবে অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে বনটির আয়তন আসলে ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার ক্যামেরুন, গিনি ও কঙ্গোর মতো ৬টি দেশজুড়ে রয়েছে এ বন। এখানে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১ হাজার প্রজাতির পাখি ও ৭০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তবে এ বনও রয়েছে হুমকির মুখে। শহরাঞ্চল বাড়ানো, খনি ও শিল্পায়নের ফলে মাঝেমধ্যেই বন কেটে সাফ করা হয়।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্ট নিউগিনি দ্বীপে অবস্থিত। এটি দুই ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক পাপুয়া নিউগিনির অংশ আর অর্ধেক ইন্দোনেশিয়ার। দুই দেশের প্রায় আট লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর অবস্থান। বিশ্বের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির কমপক্ষে পাঁচ ভাগ এই বনে বাস করে। তবে আগেই বলেছি, এসব রেইনফরেস্টের সঠিক আয়তন নিশ্চিত করা কঠিন। তবুও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এখানে তথ্য দিয়েছি। এ বনে প্রায় ১৩ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। শুধু অর্কিডই আছে প্রায় ৩ হাজার প্রজাতির। এ ছাড়া ২ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৮০০ প্রজাতির পাখি ও ১ হাজার ২১০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
প্রায় ৫ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে সুন্দাল্যান্ড রেইনফরেস্ট। এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ব্রুনেইয়ে রয়েছে এ বনের অংশ। আসলে ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা রেইনফরেস্ট রয়েছে। নিউগিনি ও সুন্দাল্যান্ড। দেশটির প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার শুধু রেইনফরেস্ট। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রেইনফরেস্টের দেশ ইন্দোনেশিয়া। তবে ২০০১ সাল থেকে প্রায় ১ লাখ বর্গকিলোমিটার বন হ্রাস পেয়েছে দেশটিতে। ইন্দোনেশিয়ার মোট আয়তন প্রায় ১৯ লাখ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকটাজুড়েই রয়েছে বন। এ বনে ২৫ হাজার প্রজাতির গাছ, ৮০০ প্রজাতির পাখি, ৪০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ৪৫০ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দীর্ঘতম নদী মেকংয়ের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই রেইনফরেস্ট। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ হাজার ৯০০ কিলোমিটার। এ নদীতে প্রায় ১ হাজারের বেশি মিঠাপানির মাছ রয়েছে। আর এ বনের আয়তন প্রায় আট লাখ বর্গকিলোমিটার। ২০ হাজার প্রজাতির গাছ, ১ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ ও প্রায় ৫০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে এ বনে। এ বনের বাঘের (প্যান্থেরা টাইগ্রিস) দেখাও মেলে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, ব্রিটানিকা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ওয়াইল্ড লাইফ ডট অর্গ ও পান্ডা ডট অর্গ