লাখ লাখ বছর আগে পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেরিয়েছিল ডাইনোসর। এর মধ্যে কোনোটি ছিল শান্তিপ্রিয়, কোনোটি আবার অত্যন্ত ভয়ংকর—যেমনটা মুভিতে দেখা যায়। প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের চেয়ে ভয়ংকর প্রাণী পৃথিবীতে ছিল না। বিশালাকার দেহ, শক্তিশালী চোয়াল এবং ধারালো নখ এদের এই গ্রহের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণীতে পরিণত করেছিল। সে রকম সাতটি ভয়ংকর ডাইনোসর নিয়েই আজকের আলোচনা।
যারা জুরাসিক পার্ক মুভি দেখেছ, তাদের আর টিরানোসরাস রেক্সের সম্পর্কে হয়তো আলাদা করে বলতে হবে না। একে হয়তো তোমরা টি-রেক্স নামেই বেশি চেনো। এর ভয়ংকর গর্জন যেন বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। ট্রায়াসিক, জুরাসিক বা ক্রিটেসিয়াস যুগের যেকোনো স্থলচর প্রাণীর চেয়ে টি-রেক্স সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এদের মতো শক্তিশালী চোয়াল ছিল না আর কোনো প্রাণীর। ওজন ছিল প্রায় ৯ টন। ২০ ফুট লম্বা এই ডাইনোসর ছিল দ্রুতগামী। এদের শিকারের তালিকায় ছিল বড় তৃণভোজী ডাইনোসরও। ডাইনোসরদের মধ্যে এরাই ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর।
আকারে টি-রেক্সের চেয়েও বড় ছিল এই ডাইনোসর। ৫০ ফুট লম্বা এই স্পিনোসরাস ছিল উভচর প্রাণী। অর্থাৎ জল ও স্থল—উভয় জায়গায় ছিল এদের বিচরণ। এ কারণে অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর চেয়ে এরা বেশি সুবিধা পেত। এদের চোয়াল অনেকটা কুমিরের মতো। তবে হিংস্রতায় টি-রেক্সের সঙ্গে পেরে উঠত না স্পিনোসরাস।
‘জুরাসিক পার্ক’ বা ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে’ ভেলোসিরাপ্টরের জয়জয়কার। হঠাৎ করে হামলা করার জন্য এরা পটু। যদিও আকারে টি-রেক্সের চেয়ে অনেক ছোট এই ডাইনোসররা। তবে এদের গতি ও তীক্ষ্ণ নখের সাহায্যে নিজেদের আকারের চেয়েও বড় প্রাণী শিকার করতে পারত। সেই তালিকায় থাকত ডাইনোসরও। বুদ্ধিমত্তা এবং একসঙ্গে শিকারের কৌশল এদের সবচেয়ে বিপজ্জনক ডাইনোসরের খেতাব দিয়েছে।
নাম না বললে অনেকেই একে টি-রেক্স বলে ভুল করবে। আকারেও টি-রেক্সের মতো। টি-রেক্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এই ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্যের জিগানোটোসরাস। এদের বিশালাকার মুখ ও ধারালো দাঁত ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী এই প্রাণীটি আর্জেন্টিনোসরাসের (সবচেয়ে বড় ডাইনোসর) মতো তৃণভোজী প্রাণী শিকার করত। এ কারণেই জিগানোটোসরাস এতটা বিপজ্জনক।
এটাও যেন টি-রেক্স ও জিগানোটোসরাসের ছোট ভাই। আকারে এদের চেয়ে একটু ছোট হলেও কম ভয়ংকর ছিল না। এদের শিকারের পদ্ধতি ছিল অনন্য। এরা একসঙ্গে দল বেঁধে স্টেগোসরাসের মতো বিশালাকার ডাইনোসরকে কাবু করে ফেলত। এমন বড় ডাইনোসরকে যে প্রাণী শিকার করতে পারে, সেটাকে কম ভয়ংকর বলি কী করে!
এই ডাইনোসরের নামকরণ করা হয়েছে গ্রেট হোয়াইট শার্কের নামে। কারণ, আধুনিক বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের আগে হাঙর আবিষ্কার করেছিল। ফলে হাঙরের নামেই ডাইনোসরের নামকরণ করেন বিজ্ঞানীরা। এরা টি-রেক্সের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় ছিল। বিশালাকার তৃণভোজী ডাইনোসর শিকার করত এরা। এদের দাঁত ছিল অত্যন্ত ধারালো ও শক্ত। তখনকার দিনে এমন কিছু ছিল না, যাতে দাঁত বসাতে পারত না কারচারোডন্টাসরাস। কামড়ে ছিঁড়ে ফেলত যেকোনো ডাইনোসরের শক্ত চামড়া।
এরাও জিগানোটোসরাসের মতো দলবদ্ধভাবে শিকার করত। টার্গেট করত বড় তৃণভোজী প্রাণীকে। তারপর চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে শিকারকে হত্যা করত। ৩৩ ফুট লম্বা এ ডাইনোসর আর্জেন্টিনোসরাসকেও শিকার করতে ছাড়ত না। তবে একাকী এরা এতটা ভয়ংকর প্রাণী নয়, যতটা দলগতভাবে। শুধু একটা ম্যাপুসরাসের কথা বললে হয়তো ভয়ংকরের তালিকায় সেরা ১৫-তে এদের নাম থাকবে না। কিন্তু দলগতভাবে এদের সেরা শিকারির মর্যাদা না দিয়ে উপায় নেই।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস