আমরা কথা বলার সময় জিব, ঠোঁট, দাঁত ও মুখের অন্যান্য অংশ ব্যবহার করে শব্দের বিভিন্ন রূপ তৈরি করি। কিন্তু ময়না-টিয়া বা পাখির তো মানুষের মতো মুখ নেই। শক্ত ঠোঁট আছে, যা আবার কথা বলার কাজে লাগে না। এমনকি এদের ভোকাল কর্ড বা স্বরযন্ত্র নেই। তাহলে কীভাবে এরা এত স্পষ্টভাবে মানুষের কথা অনুকরণ করে কথা বলতে পারে?
পৃথিবীর বিশাল প্রাণিজগতে ভাষা তৈরির অসাধারণ ক্ষমতা কেবল দুই প্রজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ—মানুষ এবং পাখি। ময়না, টিয়া, শালিক, কাকের মতো কিছু পাখি যদিও মানুষের কথা অনুকরণ করে বলতে পারে, তবু তোতা পাখির ভাষা শেখা ও বলায় দক্ষতা অন্য পাখির তুলনায় অনন্য। এদের এই অসাধারণ ক্ষমতার রহস্য কী?
এই রহস্য সমাধান করেছেন কণ্ঠবিশেষজ্ঞ একদল বিজ্ঞানী। রহস্যটা লুকিয়ে আছে পাখিদের গলায়, যেখানে ‘সিরিঙ্কস’ নামক এক অসাধারণ অঙ্গ থাকে। সিরিঙ্কস হলো পাখির গলায় অবস্থিত ইংরেজি অক্ষর ওয়াই (Y) আকৃতির একটি বিশেষ অঙ্গ। এটি ফুসফুস ও শ্বাসনালির মাঝখানে অবস্থিত। পাখিরা যখন শ্বাস নেয়, তখন বাতাস শ্বাসনালি দিয়ে সিরিঙ্কসের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় সিরিঙ্কস কাঁপলেই তৈরি হয় শব্দ।
বাজরিগর ছোট আকারের তোতা পাখির একটি প্রজাতি। এরা এদের সুন্দর রঙিন পালক, মজার আচরণ এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য পরিচিত। বাজরিগর পাখি প্রায় দুই হাজারের বেশি শব্দ মনে রাখতে পারে।
সিরিঙ্কসের কম্পন নিয়ন্ত্রণের জন্য পাখিরা স্থিতিস্থাপক পেশি এবং নরম রিং আকৃতির হাড় ব্যবহার করে। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই এরা ঠোঁট না নাড়িয়েও বিভিন্ন ধরনের শব্দ তৈরি করতে পারে। টিয়া, ময়না, তোতা, কাকাতুয়া, এসব পাখির সিরিঙ্কসের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অনেক উন্নত। ফলে এরা মানুষের মতো স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। এমনকি মানুষের কথাও অনুকরণ করতে পারে। আর যেসব পাখি মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে না, এরা সিরিঙ্কসের কারণে এত সুন্দরভাবে ডাকে বা গান গাইতে পারে।
বাজরিগর ছোট আকারের তোতা পাখির একটি প্রজাতি। এরা এদের সুন্দর রঙিন পালক, মজার আচরণ এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য পরিচিত। বাজরিগর পাখি প্রায় দুই হাজারের বেশি শব্দ মনে রাখতে পারে।
পাখিরা এদের চারপাশের পরিবেশ থেকে শব্দ শেখে। শ্রবণ ও অনুকরণের মাধ্যমে এরা নতুন শব্দ এবং ভাষা রপ্ত করে। এদের শব্দ শেখার ক্ষমতা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার একটি জনপ্রিয় বিষয়। পাখিরা এদের মা–বাবা এবং অন্য সঙ্গীদের ডাক শুনে এবং এদের অনুকরণ করে। কঙ্গো আফ্রিকান গ্রে প্যারট আফ্রিকান তোতা পাখির একটি প্রজাতি। এদের অসাধারণ কথা বলার দক্ষতার জন্য বিখ্যাত এরা। মানুষের মতো স্পষ্ট ও সাবলীলভাবে কথা বলার ক্ষমতা এদের অন্যান্য তোতা পাখির থেকে আলাদা করে তোলে।
পাখিদের শব্দ শেখা, কথা বলা, গান গাওয়া, বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করা এবং মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষমতা এদের অনন্য করে তোলে। পাখিরা আমাদের পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের কর্তব্য পাখিদের রক্ষা করা, এদের বাসস্থান রক্ষা করা। আমাদের উচিত পাখিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
সূত্র: অডাবন ডট অর্গ, ভক্স ডটকম, উইকিপিডিয়া