সম্প্রতি গ্রহদানব বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায় প্রাণের খোঁজে মহাকাশযান পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশযান সংস্থা নাসা। গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জন এফ. কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্সের ফ্যালকন হেভি রকেটের সাহায্যে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা ক্লিপার নভোযান। এ মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে ইউরোপা ক্লিপার মিশন।
এই নভোযানে কোনো নভোচারী নেই। তারপরেও ক্লিপার নভোযানটির ভর ৬ হাজার ৬৫ কিলোগ্রাম। নভোযানটি ২০২৫ সালের ১ মার্চ পৃথিবীর ও ২০২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মঙ্গল গ্রহের মহাকর্ষ বলের সহায়তা নিয়ে ২০৩০ সালের এপ্রিলে ইউরোপায় গিয়ে পৌঁছাবে। তারপর ইউরোপাকে মোট ৪৯ বার ফ্লাইবাই (উপগ্রহটির চারপাশে ঘুরবে) করে ধ্বংস হয়ে যাবে। তার আগেই অবশ্য নিয়মিত সব তথ্য পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবে নভোযানটি।
শিরোনামেই বলা হয়েছে প্রাণের সন্ধানে এই মিশন পরিচালনা করা হয়েছে। তবে প্রাণ বলতে কিন্তু পৃথিবীর মানুষ, পাখি, বাঘ বা কুমিরের মতো প্রাণী খুঁজবে না। আসলে এ ধরনের প্রাণী ওই বৃহস্পতির চাঁদে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাহলে সেখানে কী খুঁজতে চাইছে নাসা?
আসলে প্রাণ মানেই যে শুধু বড় আকৃতির প্রাণী হতে হবে, তা কিন্তু নয়। সেখানে ক্ষুদ্র প্রাণীও থাকতে পারে। এমনকি ব্যাকটেরিয়াও। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীরা কি শুধু অনুমান করেই ৫০০ কোটি ডলার খরচ করে বসে আছেন?
ইউরোপার উদ্দেশে এটাই নাসার প্রথম মিশন হলেও এর আগে ভয়েজার ১ ও ২ প্রোব এসব গ্রহ, উপগ্রহের পাশ দিয়ে চলে গেছে সৌরজগতের বাইরে। তা ছাড়া ১৯৭২ ও ৭৩ সালে পাইওনিয়ার ১০ ও ১১ মিশন পরিচালনা করে নাসা। দুটি মিশনই বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করেছিল। তখন ইউরোপার কিছু ছবি তুলেছিল এই নভোযানগুলো। সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে বরফের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে অনেক আগেই। তাই এখন নির্দিষ্ট করে শুধু ইউরোপার উদ্দেশে যাচ্ছে ক্লিপার মিশন।
কিন্তু বরফের বিষয়ে কতটা নিশ্চিত হওয়া গেছে সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে? বিজ্ঞানীদের মতে, ইউরোপায় গভীর সাগর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ইউরোপার পৃষ্ঠের নিচে রয়েছে পুরু বরফের আস্তরণ। বরফের নিচে ৬০ মাইল গভীর সাগর থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যদি সত্যিই এমন গভীর সাগর থাকে ইউরোপায়, তাহলে তা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর সাগরের চেয়েও ১০ গুণ গভীর। এ কারণেই বিজ্ঞানীদের ধারণা করছেন, সেখানে প্রাণ থাকতে পারে।
তবে শেষ পর্যন্ত যদি ইউরোপায় কোনো প্রাণ খুঁজে পাওয়া না যায়, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। কারণ, এই মিশনে ইউরোপায় জীবনধারণে সক্ষম জায়গাও খুঁজে দেখা হবে। হয়তো এখনো সেখানে প্রাণ নেই তবে প্রাণ বেঁচে থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ আছে। আসলেই সেখানে কী আছে, জানতে হয়ত আমাদের আরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, নভোযানটি সেখানে পৌঁছাতে ২০৩০ সাল লেগে যাবে।
যে গ্রহের চাঁদে যাচ্ছে, সে গ্রহ নিয়ে কিছু না বললে কেমন হয়! বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। সৌরজগতে বাকি সব গ্রহের ভরের চেয়েও বৃহস্পতির ভর ২.৫ গুণ বেশি। এর মোট ৯৫টি উপগ্রহ আছে। তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে চাঁদের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। বর্তমানের ৯৫টি চাঁদের মধ্যে ইউরোপা চতুর্থ বৃহত্তম।
সূত্র: নাসা, লাইভ সায়েন্স, দ্য উইক জুনিয়র