জানা-অজানা
ব্যালিস্টিক মিসাইল কীভাবে কাজ করে
মধ্যপ্রাচ্য এখন কঠিন সময় পার করছে। সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরান পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। পাল্টাপাল্টি এই হামলা নিজের দেশে বসেই চালানো হয়েছে। কেউ অন্য দেশে গিয়ে হামলা চালায়নি। বর্তমানে দূর থেকে আক্রমণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যেন হামলাকারীর ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। যেমন শত্রুদেশের আকাশসীমায় ড্রোন পাঠিয়ে বোমা বা মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়।
ব্যালিস্টিক মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক প্রযুক্তির এক বিস্ময়। দূরপাল্লায় হামলা চালানোর এই প্রযুক্তির মূলনীতি কিন্তু খুব সহজ। আমাদের সিলেবাসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এই মূল নীতি পড়ানো হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে ৩০০ বছর আগে স্যার আইজ্যাক নিউটনের বিখ্যাত সূত্র আবিষ্কারের ফলে। ‘প্রতিটি কাজের সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।’
এটি নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র হিসেবে পরিচিত। এই ধারণা থেকে থ্রাস্ট বা ধাক্কাকে ব্যাখ্যা করা যায়। এই ধাক্কার মাধ্যমেই ক্ষেপণাস্ত্র চলে। ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি বা প্রপেলান্ট একটি ইঞ্জিনে পোড়ানো হয়। প্রপেলান্ট পুড়ে যে উত্তপ্ত গ্যাস তৈরি হয়, তা একটি ফানেলের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের বেজে ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কায় ক্ষেপণাস্ত্র ওপর বা বিপরীত দিকে যাত্রা করে।
লিফট অফ করা বা বিপরীতে ধাক্কা দিয়ে ছুটে চলতে থ্রাস্ট ক্ষেপণাস্ত্রের ওজনের চেয়ে বেশি হতে হয়। থ্রাস্টের মাত্রা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। গ্যাস যে গতিতে বের হয়, প্রপেলান্ট বা জ্বালানির ধরন এবং পরিমাণ এবং কোন ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র চলতে থাকে যতক্ষণ না এর প্রপেলান্ট ফুরিয়ে যায়। চলার সময়ে এটি সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছে যাবে এবং একই গতিতে চলতে থাকবে। যতক্ষণ না অন্য শক্তি এর ওপর কাজ করে। যেমন মাধ্যাকর্ষণ বা বায়ু। প্রপেলান্ট পুড়তে থাকা সময়কে বলে বার্নআউট সময়। এই সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র যে বেগে পৌঁছায়, তাকে বলে বার্নআউট বেগ।
ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি কখন ফুরিয়ে যাবে, তা সঠিক গতি এবং লক্ষ্যে আঘাত নিশ্চিত করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেপণাস্ত্র স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো জ্বালানি ব্যবহার করে, যাকে বলে বুস্ট পর্যায়। এই পর্যায়ে ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ নির্দিষ্ট করা হয় এবং এটি পরিবর্তন করা যায় না। এই সময়কাল মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে।
বুস্ট পর্বের পরে ক্ষেপণাস্ত্রের ত্বরণ বন্ধ হয়। এরপর নিজ গতিবেগ দিয়ে চলতে থাকে। একে বলে মিডকোর্স পর্যায়। এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র আইসিবিএম। এটি যাত্রাপথের টার্মিনাল পর্বে আবারও বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এর আগে ২০ মিনিট পর্যন্ত মহাকাশের মধ্য দিয়ে যাত্রা করতে পারে।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সাধারণত শেষ মুহূর্তে কোথায় আঘাত করবে ঠিক করার সুযোগ থাকে না। নিক্ষেপের সময় ঠিক করে দিতে হয় কখন জ্বালানি শেষ হবে। গতি ঠিক করে দেওয়া, উৎক্ষেপণের কোণ এবং কোন দিকে যাবে, তাদের লক্ষ্যে আঘাত করে।
যদি জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার সময় একটু বেশি হয়, তবে ক্ষেপণাস্ত্র গতিতে বদলে গিয়ে লক্ষ্য অতিক্রম করে চলে যাবে। একইভাবে কম হলে গতি খুব ধীর হবে। লক্ষ্যে আঘাত করার আগেই পতিত হবে। লম্বা দূরত্বে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে ছোটখাটো ভুলও চূড়ান্ত লক্ষ্যে আঘাতের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব রাখে।