ভদ্রতা বা শিষ্টাচার তোমাকে অন্যদের কাছে ইতিবাচক মানুষ হিসেবে পরিচিত করে তুলবে। তাই নিচের এই ভদ্রতাগুলো সব সময় মনে রাখবে।
বাসায় বা রেস্তোরাঁয় যেখানেই খাও, টেবিলের ভদ্রতাটুকু সবার করা উচিত। টেবিলে সবার জন্য খাবার না এলে কখনো খাওয়া শুরু করো না। সবার জন্য খাবার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। যতক্ষণ না টেবিলের সবাইকে খাবার পরিবেশন করা হয় এবং হোস্ট খাওয়া শুরু না করে, ততক্ষণ খাওয়া শুরুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভদ্রতার খাতিরে।
খাবারে লেবু চিপে নেওয়ার চল শুরু হয়েছে সেই ভিক্টোরিয়ান যুগে। তখনো কেউ পাশেরজনের লেবুর রসের ছিটা নিজের চোখে পছন্দ করত না। এখনো কেউ পছন্দ করে না। তোমার খাবার বা পানীয়তে লেবু চেপে ধরার সময় লেবুকে হাত দিয়ে ঢেকে রাখো। যেন তোমার লেবুর রস টেবিলে বসা অন্যদের গায়ে না লাগে। খাবার সময় অন্যদের কথা তো একটু ভাবতেই হবে।
খাওয়া শেষে খাবার পরিবেশন করা লোকদের কিছু টিপস দেওয়া স্বাভাবিক। তাঁরা কষ্ট করে সুন্দরভাবে খাবার টেবিল গুছিয়ে রাখেন, খাবার সার্ভ করেন। তাঁদের সম্মান জানানোর উপায় টিপস দেওয়া। যদি খাবার পরিবেশন খারাপ হয়, তবে ১০ শতাংশ টিপস দেওয়া যেতে পারে। ভালো পরিবেশনের জন্য দিতে পারো ১৫ শতাংশ টিপস। আর তোমার যদি বেশ ভালো লাগে, যদি মনে করো তাঁদের আচরণ ছিল খুব ভালো, তাঁরা বেশ সৌজন্য দেখিয়েছেন, তবে ২০ শতাংশ বা তার বেশি টিপস দেওয়া উচিত।
‘মেইল পেয়েছি’ বা ‘ধন্যবাদ!’। গ্রুপ ই-মেইলে এমন জবাব পেলে তোমারই বিরক্ত লাগবে। যারা এটা দেখবে, তারা মনে করবে, তুমি ই-মেইলের ভদ্রতাগুলো জানো না। এমন রিপ্লাই পাওয়ার পর বা ভবিষ্যতে তোমার ই-মেইল মনোযোগ দিয়ে তারা দেখবে না। যদি তোমার পরের ই–মেইলগুলোতে তাদের মনোযোগ পেতে চাও, তবে গুছিয়ে মেইল লেখা শিখে নাও। একটি সুন্দর ই–মেইল তোমার কাজ সহজেই সমাধা করে দিতে পারে। আবার গ্রুপ ই–মেইলের রিপ্লাই দিতে চাইলে আগে ঠিক করো, রিপ্লাইটা কার বা কাদের জানা জরুরি। যদি একজনকে উদ্দেশ্য করে রিপ্লাই দিতে চাও, তবে রিপ্লাইয়ে শুধু তাঁকেই রাখো। অকারণে রিপ্লাই অল দিয়ে অন্যদের বিরক্ত করো না।
বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে গিয়ে অনেক ছবি তুলেছ। দুর্দান্ত একটা গ্রুপ ছবি যদি তোলা হয়েও থাকে, তবু গ্রুপ ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সাবধান। সবাইকে আনন্দের মুহূর্ত দেখাতে চাইলে আগে ভাবো। কিছু না ভেবে গ্রুপ ছবিটি আপলোড করে দিয়ো না। অন্য কারও বা শিশুদের ছবি বিনা অনুমতিতে পোস্ট করবে না। আবার অনুমতি ছাড়া অনলাইনে কোথাও কাউকে ট্যাগ করবে না। কোনো ছবি বা কনটেন্ট তোমার কাছে মজার মনে হলেও যাঁকে পোস্টের কমেন্টে ট্যাগ করছ, তাঁর জন্য বিব্রতকর হতে পারে। যাঁকে ট্যাগ করতে চাইছ, তিনি হয়তো গোপনীয়তা পছন্দ করেন। তিনি হয়তো পাবলিকলি কোনো কমেন্টে মেনশন পেতে চান না। তাঁদের অনুভূতিকে সম্মান করা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আরেকটি মূল নিয়ম হলো, অনলাইনে এমন কিছু কখনোই বলা উচিত নয়, যা তুমি সামনাসামনি কাউকে বলতে পারবে না।
হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের মেসেজে অনেকেই ভয়েস মেইল পাঠায়। আসলে বেশির ভাগ মানুষ কখনো ভয়ে সমেইল শোনে না। লম্বা ভয়েস মেইল পাঠালে ধরে নেওয়া যায়, সেটা কারও কারও কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠবে। সবার ইনবক্সেই বেশ কিছু ভয়েস মেইল জমা থাকে, যেগুলো কখনো শোনা হয় না। বেশির ভাগ মানুষ এখন মেসেজ পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ, মেসেজ ‘সিন’ না করেও নটিফিকেশন হিসেবে পড়ে রেখে দেওয়া যায়। ৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটি মেসেজ পড়া যায়। সে ক্ষেত্রে কেন কেউ ৩০ সেকেন্ডের লম্বা ভয়েস মেইল শুনবে?
‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’ বলতে একটা বিষয় আছে। ধরো, তোমার কাছের কেউ তোমাকে বলল, এই কাজটা করে দাও। কাজটা তোমার পছন্দ না বা তুমি কাজটা করতে চাও না। তখন বাধ্য হয়ে কাজটায় হ্যাঁ তুমি বলতে পারো, তবে তুমি পরে যদি কাজটা না করো খুব খারাপ দেখাবে। যদি কোনো দায়িত্ব না নিতে চাও, তবে না বলে দাও। যখন নিশ্চিত হবে কাজটা তুমি করবে, ঠিক তখনই তুমি হ্যাঁ বলবে। আবার অনেকেই কাজ না করতে চাইলে বলে ‘দেখি’। কাউকে দেখি বলে অপেক্ষায় রাখা ভদ্রতা না। দেখি না বলে হ্যাঁ বা না বলে দাও।
আমাদের ফোনে এখন ২৪ ঘণ্টাই মেসেজ আসতে থাকে। কাজের বা পড়াশোনার স্বার্থে মেসেজ প্রচুর মনোযোগ দাবি করে। পড়াশোনা এবং সব কাজ সেরে সব রিপ্লাই দেওয়া সঙ্গে সঙ্গে সব সময় সম্ভব হয় না। মেসেজ পেলেই দেরি না করে উত্তর দেওয়া ভদ্রতা। যদি উত্তর দেওয়া সম্ভব না হয়, পরিচিত কেউ হলে অন্তত আট ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই উত্তর দাও। মেসেজে কোনো অনুরোধ পেলে কাজটা করা সম্ভব না হলেও উত্তর দাও। তাত্ক্ষণিক উত্তর দেওয়াই ভদ্রতা। ২৪ ঘণ্টা সময়ও নিতে পারো অপরিচিত কারো ক্ষেত্রে। তবে নিজের নিরাপত্তা আগে। যদি ভাবো এই অপরিচিত লোক তোমাকে বিপদে ফেলতে পারে বা স্ক্যামের কবলে পড়তে পারো, তবে উত্তর দিতে হবে না। কিন্তু সাধারণ কিছু মেসেজ পেলে তোমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরিচিত হলেও উত্তর দেওয়া উচিত।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট