যখন গাড়ি ব্রেক করে, তখন শক্তি কোথায় যায়
যখন গাড়ির ব্রেক চাপ দেওয়া হয়, গাড়ির গতিশক্তি মূলত ঘর্ষণের কারণে রূপান্তরিত হয় তাপে। তবে নতুন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক গাড়িতে এই শক্তির কিছু অংশ সংরক্ষণ করা হয় ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য।
ধরা যাক, তুমি ১২০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে একটি গাড়ি চালাচ্ছ। হঠাৎ ট্রাফিক সিগন্যালে লাল বাতি জ্বলে উঠল, তখন তুমি কী করবে? তোমাকে দ্রুত ব্রেক চাপতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেমে যাবে। কিন্তু মজার বিষয় হলো একমুহূর্ত আগেও গাড়িতে অনেক শক্তি ছিল, তাহলে সেই শক্তি কোথায় গেল? উত্তরটি বোঝার জন্য আমাদের চলন্ত বস্তুর শক্তি এবং তা কীভাবে থামে, তা বুঝতে হবে।
কাইনেটিক এনার্জি বা গতিশক্তি কী?
একটি চলমান বস্তু কিছু শক্তি ধারণ করে। একটি চলন্ত ফুটবলের কথা ভাবো, যা একটি স্থির ফুটবলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তি ধারণ করে; এটি থামবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এই শক্তি হারিয়ে যায়। চলন্ত অবস্থায় কোনো বস্তুর যে শক্তি থাকে, তাকে বলা হয় গতিজনিত শক্তি বা কাইনেটিক এনার্জি।
যখন কোনো খেলোয়াড় তাঁর পা দিয়ে বলটি থামান, তখন বলের শক্তি তাঁর পায়ে সঞ্চারিত হয়। আর কিছু কিছু শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। খেয়াল করেছ নিশ্চয়, অনেক সময় গাড়ি ব্রেক করলে অনেক শব্দ হয়।
যখন একটি ক্রিকেট বল বা ফুটবল ঘাসের ওপর দিয়ে যায়, তখন গতিশক্তি ধীরে ধীরে ঘর্ষণের মাধ্যমে ঘাস শোষণ করে নেয়। তবে, এই বলগুলোর শক্তি খুব কম। কিন্তু একটি ভারী গাড়ি অনেক বেশি শক্তি ধারণ করে। তাই এই শক্তি খুব অল্প সময়ে শুধু ঘর্ষণের মাধ্যমে সড়কে বা রাস্তায় স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।
তুমি যদি দ্বিগুণ গতিতে চলো, তবে গতিশক্তি চার গুণ বেশি হবে। এসব শক্তি ব্রেক করার সময় নষ্ট করতে হবে, যাতে গাড়িটি থামতে পারে। ও আরেকটা ব্যাপার হয়তো জানো, শক্তি কখনোই ধ্বংস বা বিলুপ্ত হয় না, কেবল এর রূপ পরিবর্তিত হয়।
ব্রেক কীভাবে শক্তি রূপান্তর করে?
গাড়ি চালানোর শক্তি আসে পেট্রল বা গ্যাসোলিন থেকে, যা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খরচ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যে কাজটি হয়, তা হলো শক্তির একটি রূপান্তর—পেট্রলের রাসায়নিক শক্তি থেকে গাড়ির গতিশক্তি। গাড়ি থামানোর সময়, এই গতিশক্তি অন্য রূপে রূপান্তর করতে হয়, যেটা ঘটে তাপের মাধ্যমে।
অবশ্য বেশির ভাগ গাড়িতে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহৃত হয়। আপনি যখন ব্রেক চাপেন, তখন একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ব্রেক রোটরকে চেপে ধরে, এই রোটর গাড়ির চাকায় যুক্ত থাকে। এই চাপটা অনেক ঘর্ষণ এবং চাকার গতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। এর ফলে ব্রেক চাপলে রোটর ও প্যাডের মাধ্যমে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়।
শক্তির রূপান্তরটা কীভাবে হয়?
একেক বাহনের ব্রেক একেক রকম হয়, যেমন ট্রাকে এয়ার ব্রেক, আধুনিক গাড়িতে ডিস্ক ব্রেক এবং সাইকেলে রিম ব্রেক। এগুলো আলাদা হলেও ঘর্ষণের মাধ্যমে গতিশক্তিকে তাপে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটা কিন্তু একই রকম।
সাইকেলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্রেক চাপার পর রিম গরম হয়ে যায়, যেটা তুমি নিজেই অনুভব করতে পারবে।
গাড়ির ক্ষেত্রে ব্রেক করার ফলে সৃষ্ট তাপ কয়েক শ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তা কি জানো? বিশেষ করে ফর্মুলা ওয়ান গাড়ির ব্রেক প্যাড বিশেষ উপাদানে তৈরি, যা প্রচুর বাতাস প্রবাহিত হতে দেয় এবং দ্রুত তাপ অপসারণ করে।
হঠাৎ ব্রেক করার সময় গাড়ির ব্রেক থেকে শব্দও হয়, যা শক্তিটা শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার একটি উদাহরণ।
শক্তি পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব কি?
গাড়ির গতিশক্তি ব্রেক চাপ দিলে পরিবেশে হারিয়ে যায়। তবে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং আসার কারণে এই ঘটনায় নতুন পালাবদল এসেছে।
হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক গাড়িতে, চলন্ত গাড়ির শক্তি মোটরকে একটি জেনারেটরে রূপান্তরিত করে ব্যাটারিতে ফিরিয়ে আনা হয়। চাকার গতিশক্তি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা হয়। তবে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং ব্যবস্থায়ও অন্তত ৩০% শক্তি তাপ হিসেবে পরিবেশে নষ্ট হয়।
আমাদের উদ্ভাবন বা আবিষ্কার চলতে থাকবে, ব্রেক উন্নত হবে এবং গাড়ির ইঞ্জিন আরও আধুনিক হবে। তবে এটি সব সময় সত্য যে শক্তি কখনোই ইঞ্জিনে ‘সৃষ্টি’ হয় না এবং ব্রেকে ‘নষ্ট’ হয় না।
সূত্র: সায়েন্স এবিসি