রোবট যদি বানাতে চাও

মডেল: সিজেল | ছবি: সুমন ইউসুফ

রোবট বলতেই অনেকের মনে হতে পারে মানুষের মতো হাত-পা-ওয়ালা একটা যন্ত্রের কথা। যে যন্ত্র আমাদের আদেশমতো নানা কাজ করে দেয়। সব সময় কিন্তু তা সত্য নয়। রোবট এমন এক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যা মানুষের নির্দেশ ছাড়াই আগে থেকে প্রোগ্রাম করে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী কোনো একটা কাজ করতে পারে। গুগলের চালকবিহীন গাড়ির কথা নিশ্চয় শুনেছ। দেখতে সাধারণ গাড়ির মতো, কোথায় যেতে হবে বলে দিলে চালক ছাড়া একাই চলে যেতে পারে। এটাও কিন্তু একটা রোবট। আমার কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা যন্ত্র বানিয়েছে, যেটা চালু করে দিলে ঘুরে ঘুরে ঘরটা পরিষ্কার করে দেয়, এটাও একটা রোবট, কিন্তু সেটা দেখতে মোটেও মানুষের মতো নয়। আবার রোবট হতে পারে মানুষের মতো দেখতেও, সেগুলোকে বলে হিউম্যানয়েড রোবট। কদিন আগে বাংলাদেশে যে সোফিয়া ঘুরে গেল, সেটা ছিল একটা হিউম্যানয়েড রোবট।

তোমরা যদি একটু খেয়াল করো, ভবিষ্যতে রোবটিকসের অফুরন্ত সম্ভাবনা দেখতে পাবে। মানুষের কায়িক শ্রম অনেক কমে আসবে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রকে দিয়ে অনেক কাজই করিয়ে নেওয়া যাবে। বিশেষ করে শিল্পকারখানাগুলোতে। বিদেশে এখন অনেক কারখানা আছে, যেগুলোতে প্রোডাকশনের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত হয়তো মানুষের হাতের কোনো ছোঁয়া লাগে না। কাঁচামাল দিয়ে সুইচ টিপে দিলে প্রোডাক্ট তৈরি হয়ে প্যাকেটজাত হয়ে চলে যায় বাজারে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সামনে অনেক কিছুই রোবট দিয়ে করানো হবে। এ জন্য দরকার হবে রোবটিকস জানা অনেক অনেক জনবল। তাই তুমি যদি বড় হয়ে রোবট বানাতে চাও, তাহলে তোমার জন্য চমৎকার সম্ভাবনাময় একটা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

মডেল: সিজেল | ছবি: সুমন ইউসুফ

রোবটিকস একটা ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিষয়। মূলত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস আর কম্পিউটার বিজ্ঞানের সমন্বয়। তাই রোবট বানাতে হলে তোমার থাকতে হবে বহুমুখী বিষয় শেখার আগ্রহ। বিশেষভাবে দরকার হবে সৃজনশীলতার। বড় হয়ে রোবটিকসে পড়তে হলে দরকার গণিতের শক্ত ভিত্তি। গাণিতিক যুক্তি ছাড়া রোবট বানানো যায় না। তাই রোবটিকসে কাজ করতে চাইলে এখন থেকে খুব ভালো করে গণিতটা আয়ত্ত করতে হবে।

রোবট বানাতে তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। আসলে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে তুমি যে ক্ষেত্রেই কাজ করো না কেন, তোমাকে অন্তত একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখে রাখতে হবে।

তবে এখন থেকেই যে তোমাকে রোবট বানাতে হবে তা নয়। তবে এখন থেকে নতুন কিছু শেখার আগ্রহটা গড়ে তুলতে হবে। গড়ে তুলতে হবে গণিতের শক্ত ভিত্তি। একটু-আধটু কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে হবে। আজকাল সারা পৃথিবীতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার ঘটছে। বুদ্ধিমান রোবট বানাতে ব্যাপকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হবে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রামিংয়েও তোমার কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হবে। সে জন্য এখন থেকেই এ নিয়ে কিছু পড়াশোনা করতে পারো।

আর রোবটিকসে আগ্রহ থাকলে এখন থেকেই টুকটাক কাজ শুরু করতে পারো তুমি। রোবটিকসে হাতেখড়ির জন্য শুরু করতে পারো আরডুইনোর মাধ্যমে ছোট ছোট প্রজেক্ট বানানো দিয়ে। আমাদের দেশে এখন বেসিক আরডুইনো শেখানোর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো থেকে শিখতে পারো। যেমন মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগারে তুমি আরডুইনো প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি নিতে পারবে। ইচ্ছে করলে বাসায় বসেও শিখতে পারো তুমি ইন্টারনেটের বিশাল জগৎ থেকে। নানা রকম টিউটোরিয়াল পাবে সেখানে। অনলাইনে পাবে তোমাদের বয়সের উপযোগী প্রোগ্রামিং শেখার কোর্স।

আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ থেকেই জীবনকে সহজ করার জন্য অত্যাধুনিক সব রোবট বানাবে তোমরাই।

অনুলিখন: ইবরাহিম মুদ্দাসসের