পিপের রহস্য

এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।

মা চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ফিসফিস করে বলল, ‘আমি কখনো ভাবিনি…ভেবেছিলাম আমি ছাড়া আর কেউ পিপের কথা জানবে না।’

তারপর সে ঘুরে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসল। একটু ধাতস্থ হয়ে বলল, ‘অদ্ভুত আচরণের জন্য দুঃখিত। এসো, কাছে এসে বসো। তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি আমি।’ মা আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।

জোয়ির বিড়াল সাসাফ্রাস

ধীরে ধীরে আমি মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। একেবারে বোকা বনে গিয়েছি। একটা জ্বলজ্বলে ব্যাঙ? তা-ও শুধু আমার মা-ই দেখতে পায়? ভাবতেই পেটের মধ্যে কেমন গুলিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়লাম মাটিতে। সাসাফ্রাসের গায়ে হাত বোলালাম। আমার কোলে এসে বসল ও। ধাতস্থ করলাম নিজেকে। মনে মনে ভাবছিলাম, মা এখনই সব বুঝিয়ে বলবে আমাকে।

‘তোমার নানাবাড়ির কথা মনে আছে?’

ওপরে-নিচে মাথা নাড়লাম ধীরে ধীরে। আদর করতে শুরু করলাম সাসাফ্রাসকে। কারণ, আমার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনি বেড়েই চলেছে।

‘তোমার বয়সে থাকতে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতাম। একদিন একা বসে পানিতে পাথর ছুড়ছি, হঠাৎ দেখি সূর্যের আলোয় কিছু একটা জ্বলে উঠল।’

‘বেগুনি ব্যাঙ?’ আন্দাজ করে বললাম আমি।

মা মাথা নাড়লেন। ‘ব্যাঙটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত উজ্জ্বল বেগুনি রঙে ঢাকা। এখানে–ওখানে কমলা রঙের ছোপ ছোপ দাগ। আগে কোনো দিন এমন কিছু দেখিনি আমি। প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, আমি একটা নতুন প্রজাতি ব্যাঙ আবিষ্কার করেছি!’

আবার মাথা নাড়লাম আমি। বললাম, ‘ব্যাঙ আমিও ভালোবাসি। কিন্তু এমন ব্যাঙ তো আমিও কোনো দিন দেখিনি।’

‘বেচারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল, নিশ্বাস নিতে পারছিল না। বুঝলাম, নিশ্চয়ই খুব অসুস্থ বা আঘাত পেয়েছে। ওকে সাহায্য করলাম আমি। খুব সাবধানে তুলে নিলাম। আমাদের শস্যাগারে একটা পুরোনো মাছের ট্যাঙ্ক খালি পড়ে ছিল। ওখানেই রাখলাম ব্যাঙটাকে। তারপর বোঝার চেষ্টা করলাম, ওর কী হয়েছে। বই পড়ে কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম। তারপরও আমি নিজে একটু পরীক্ষা করে ওর সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করলাম।’

‘সেবা করে ব্যাঙটাকে সারিয়ে তুললাম। ভেবেছিলাম, সম্পূর্ণ সুস্থ হলে ওকে আবার জঙ্গলে রেখে আসব। ট্যাঙ্কে হাত দিতেই ওটা লাফিয়ে আমার হাতে উঠে এল। হাতটা বের করে আনার পরই ঘটল আশ্চর্য ঘটনা। আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে আজব ঘটনা ছিল ওটা…’

বুঝলাম, মা আরও অদ্ভুত কিছু বলবে। আমার মা একজন বিজ্ঞানী। তাই সব সময় সে অদ্ভুত সব জিনিস দেখে। এটা যদি তার দেখা সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিস হয়, তাহলে নিশ্চয়ই তা অবিশ্বাস্য।

আমি ঝুঁকে পড়লাম, এতটা ঝুঁকলাম যে সাসাফ্রাস একঝটকায় মাটিতে পড়ে গেল। দ্রুত ওকে কোলে তুলে নিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছিল মা? কী দেখেছিল তুমি?’

মায়ের কথা অসম্ভব মনে হচ্ছে জোয়ির

ব্যাঙটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ’।

মুখে হাত চাপা দিলাম আমি। কী বলছে মা? মজা করছে আমার সঙ্গে? দেখে তো মাকে বেশ গম্ভীর মনে হলো। কিন্তু কথা বলা ব্যাঙ? মানতে পারছি না আমি। এটা সত্যি হতে পারে না!

‘আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম,’ মা বলে চলল, ‘বেচারা ব্যাঙটাকে প্রায় বাতাসে ছুড়ে মেরেছিলাম!’ বাতাসে থাকা অবস্থায় ব্যাঙটা বলল, ‘ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো, ছোট্ট মেয়ে! ভয় পেয়ো না। আমার নাম পিপ। তোমার সাহায্যের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

মাকে বাধা দিলাম আমি, ‘কিন্তু মা, এটা তো পাগলামি! ব্যাঙ! না, না, না, ব্যাঙ কথা বলতে পারে না।’

মা আমার হাঁটুর ওপর একটা হাত রেখে বলল, ‘আমিও প্রথমে তা–ই ভেবেছিলাম। কিন্তু ব্যাঙটা কথা বলতেই থাকল। ওটা স্বপ্ন ছিল না। আমার কোনো কল্পনাও নয়। সত্যিই পিপ নামের একটা ব্যাঙ আমার সঙ্গে কথা বলছিল।

‘আমার হাত এতটাই কাঁপছিল যে পিপকে একটা টেবিলের ওপর রেখেছিলাম। না হলে যেকোনো সময় হাত থেকে পড়ে যেত। তারপর ব্যাঙটা আমাকে বলেছিল, দিনের আলোয় ও কিছু একটা ফেলে গিয়েছিল। সেটাই খুঁজতে বেরিয়েছিল রাতের অন্ধকারে। আর তখন একটা প্যাঁচা ওকে আক্রমণ করে। আহত হয়ে পড়েছিল বনে। ওর পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তারপর তো আমি ওকে নিয়ে এলাম।’

জোয়ির মা ব্যাঙটা টেবিলের ওপর রাখছে, যাতে হাত থেকে পড়ে না যায়

‘সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর পিপ আমাকে বলল, “আমাদের বনে অনেক জাদুকরি প্রাণী আছে। মানুষ সাধারণত এদের দেখতে পায় না।”

তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, বনের সব আহত প্রাণীকে আমি সাহায্য করব কি না। আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। পিপ বনে গিয়ে সব প্রাণীর কাছে এ খবর ছড়িয়ে দেয়। আর তখন থেকেই আমাদের বনের জাদুকরি প্রাণীদের সাহায্য করছি আমি।’

মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল আমার। এটা ছিল অবিশ্বাস্য। বিজ্ঞানের যে বিষয় আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, তা হলো জাদু। আর আমার মা একবার আমাকে বলেছিল, আমাদের বাড়ির উঠানে জাদু আছে!

চলবে…

 

মূল: এশিয়া সিট্রো

রূপান্তর: কাজী আকাশ

ইলাস্ট্রেশন: মারিয়ন লিন্ডসে

 

*এশিয়া সিট্রো আগে ছিলেন শিক্ষক। চাকরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি পূর্ণকালীন লেখক। স্বামী, দুই সন্তান আর দুটি দুষ্টু বিড়াল নিয়ে দিন কাটে মার্কিন এই লেখকের। ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাক্রাস’ এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় সিরিজ। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে।