বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কীভাবে নির্ধারিত হয়

ধনসম্পদের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য জিডিপি যথেষ্ট নয়ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

একটি দেশ কতটা ধনী, তা কীভাবে নির্ধারণ করেন অর্থনীতিবিদেরা? তাঁরা কি প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক ব্যালান্স আর বার্ষিক আয় যোগ করে দেখেন নাকি প্রতিটি বাড়ি, গাড়ি এবং প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য গণনা করেন? আসলে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। চলো, ব্যাপারটা একটু সহজে বোঝার চেষ্টা করি।

৭৫ বছর ধরে একটি দেশের সম্পদ নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP)। এটি আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যানবিদ সাইমন কুজনেটসের একটি উদ্ভাবন। জিডিপি হলো একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত সব পণ্য ও সেবার মোট মূল্য। অর্থাৎ কোনো দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম যত বড়, তার জিডিপি তত বেশি। এ কারণে জিডিপি বেশি মানেই দেশটি ধনী—এমনটা ভাবা হয়।

কিন্তু সব সময় জিডিপির সাহায্যে একটি দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধি বোঝা যায় না। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ধনসম্পদের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য জিডিপি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডার্ক ফিলিপসের মতে, ‘শুধু উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে ধনী দেশ নির্ধারণ করলে দেশের মানুষের প্রকৃত জীবনমান বোঝা সম্ভব হবে না। কারণ, জিডিপি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূল্যায়ন করে, জীবনযাত্রার মান, পরিবেশগত প্রভাব বা সামাজিক উন্নয়নকে নয়।’

আরও পড়ুন

জিডিপি হিসাব করা হয় কীভাবে? জিডিপি গণনার একটা সহজ সূত্র আছে। জিডিপি = ভোগ + সরকারি খাতের মজুরি + বেসরকারি বিনিয়োগ + রপ্তানি – আমদানি। এই সূত্রের মানে হলো, একটি দেশের মানুষ, শিল্প এবং সরকার কী পরিমাণ খরচ করে, তার সঙ্গে রপ্তানি যোগ করে আমদানি বাদ দিলে জিডিপি পাওয়া যায়।

মাথাপিছু আয়ে ছোট দেশগুলো এগিয়ে
ছবি: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস

তবে সমালোচনা থাকলেও এখনো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মাপার প্রধান সূচক হিসেবে জিডিপিকেই ব্যবহার করা হয়। তাই আমরা জিডিপি অনুযায়ী শীর্ষ ১০টি ধনী দেশ ও মোট অর্থের পরিমাণ দেখে নিই। ফোর্বসে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের সর্বোচ্চ জিডিপিসম্পন্ন ১০টি

একটি দেশের মোট জিডিপি বেশি হলে তা অর্থনৈতিক শক্তির ইঙ্গিত দেয়, তবে সেটি দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক অবস্থার চিত্র নয়। তাই আরও নির্ভুলভাবে বোঝার জন্য মাথাপিছু জিডিপি, মানে প্রত্যেক ব্যক্তির জিডিপি (GDP per capita) হিসাব করা হয়। মাথাপিছু জিডিপি বের করতে একটি দেশের মোট জিডিপিকে তার মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়। মাথাপিছু জিডিপিতে শীর্ষ ১০ দেশ দেখে নিই।

আরও পড়ুন

খেয়াল করলে দেখবে, মাথাপিছু আয়ে ছোট দেশগুলো এগিয়ে। কিন্তু কেন? কারণ, মাথাপিছু জিডিপি বের করতে একটি দেশের মোট জিডিপিকে তার মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়। তাই ছোট দেশগুলোর জনসংখ্যা কম হওয়ায় মাথাপিছু জিডিপি বেশি হয়। এ ছাড়া মোনাকো, লুক্সেমবার্গ, আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলো ‘কর স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত। মানে এই দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য করের হার খুব কম। ফলে অনেক কোম্পানি এখানে নিজেদের ব্যবসা স্থাপন করে, যা জিডিপি বাড়িয়ে দেয়। যেমন আয়ারল্যান্ডের করহার মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। তাই অনেক বড় প্রতিষ্ঠান যেমন অ্যাপল, গুগল ও ফেসবুক আয়ারল্যান্ডে তাদের কার্যালয় খুলেছে। কিন্তু এতে সেখানকার সাধারণ মানুষের খুব বেশি লাভ হয় না। কারণ, এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের খুব সামান্য অংশই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়।

সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস

আরও পড়ুন