চারপাশে এখন প্রচুর উঁচু দালান। এসব দালানে তো আর সব সময় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা সম্ভব না। তাই অধিকাংশ দালানেই লিফট থাকে। প্রতিদিনের জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লিফট। বিশেষ করে শহুরে মানুষের জীবনে। লিফটে চেনা-অচেনা নানা মানুষের সঙ্গেই আমাদের উঠতে হয়। ছোট একটা খুপরিঘরের মধ্যে ১০-১৫ জন মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। গন্তব্যে যেতে হয়তো এক মিনিটও লাগে না, কিন্তু অনেকেই অস্বস্তি বোধ করেন এই সময়টুকুতে। বিশেষ করে লিফটে অচেনা মানুষ থাকলে তো কথাই নেই। উসখুস একটা অনুভূতি হয়। তোমার কি এমন হয়? অস্বস্তি লাগে? লাগলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই এমন অস্বস্তি অনুভব করেন। কিন্তু কেন হয়? চলো, সেই কারণটাই জানি।
ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট ক্রিস্টিয়ান জ্যারেটের মতে, লিফটে অস্বস্তি লাগার বড় কারণ পারসোনাল স্পেস বা ব্যক্তিগত জায়গায় সংকট। ২০১৭ সালে পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব রোকলোর একদল গবেষক পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন মানুষের ওপর এক জরিপ চালান। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, অচেনা কোনো মানুষ তাঁদের কাছ থেকে ঠিক কত দূরে দাঁড়িয়ে থাকলে অস্বস্তিবোধ করেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীজুড়ে নানা সংস্কৃতির মানুষের উত্তর ছিল নানা রকম। মাঝামাঝি উত্তরটা ছিল, ১ মিটারের কম দূরত্বে অচেনা কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে তাঁরা অস্বস্তিবোধ করেন। ইংল্যান্ডের বাসিন্দারা এই উত্তর দেন। বুঝতেই পারছ, ১ মিটার দূরত্ব লিফটের মধ্যে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই কিছুটা অস্বস্তি লাগবে। তবে এটা কিন্তু মানুষ, সে কোন সমাজে বাস করছে, তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সবার ক্ষেত্রে এক রকম হবে না।
লিফটে অস্বস্তি লাগার আরেকটা কারণ হলো, সঠিক আদবকেতা বুঝতে না পারা। স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে তুমি এক রকম আচরণ করো, আবার চিকিৎসকের কাছে গেলে আরেক রকম আচরণ করো। বড়দের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। সহকর্মীর সঙ্গে এক রকম আদবকেতা মেনে চলতে হয়, গুরুজনের সঙ্গে আবার ভিন্ন রকম। ব্যাপারটা ইংরেজিতে হবে সোশ্যাল স্ক্রিপ্টিং। অচেনা মানুষটির সঙ্গে ঠিক কেমন আচরণ করতে হবে, তা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। বিশেষ করে লিফটের মধ্যে গায়ে গা লেগে দাঁড়ানো মানুষটার সঙ্গে আমার আদবকেতা কেমন হবে, তা বোঝা যায় না। ফলে একধরনের নীরবতা বিরাজ করে। অস্বস্তি লাগাটা আসতে পারে এখান থেকেও। ভালো খবর হলো, চাইলেই এ অস্বস্তি কাটানো যেতে পারে। গবেষকেরা মনে করেন, স্বাভাবিক আলাপচারিতা অস্বস্তিকর পরিবেশকে অনেকটাই হালকা করে দেয়। লিফটে অস্বস্তি লাগলে তাই সমসাময়িক সাধারণ বিষয় নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। এ জন্য বাড়াতে হবে সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন