পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বাস। মানুষ এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। মানুষসহ আরও প্রায় ১২ লাখ প্রজাতির প্রাণী আছে পৃথিবীতে। এর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বিপজ্জনক? আরও স্পষ্ট করে বললে, কোন প্রাণীটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি হত্যা করে? সে প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে, একটা ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া দরকার।
হলিউডের বেশির ভাগ সিনেমায় দেখানো হয়, মানুষের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী সিংহ, কুমির, সাপ বা বাঘ। কিন্তু তোমাকে জানিয়ে রাখি, পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যেগুলোর কারণে তোমার ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ মারা যায়। আবার উল্টোটাও হয়। তুমি হয়তো ভাবছ, হাঙরের আক্রমণে পৃথিবীতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। কেননা, হলিউডের অনেক সিনেমার ভিলেন হাঙর। কিন্তু এটা আসলে ঠিক নয়। হাঙরের আক্রমণে প্রতিবছর মাত্র মারা যায় ৭০ জনের মতো মানুষ। তাহলে আমাদের জন্য কোন প্রাণী সবচেয়ে হুমকিস্বরূপ?
মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী মশা। মশার আক্রমণে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। কী ভাবছ, সামান্য মশার কারণে প্রতিবছর এত মানুষ মারা যায়! মশাকে তো তুমি চট করে এক থাবড়া মেরে মেরে ফেলতে পারো। এ জন্য কোনো জেল–জরিমানারও ভয় নেই। তাহলে মশা কীভাবে বিশ্বব্যাপী এত মানুষ মেরে ফেলছে?
আসলে এই ক্ষুদ্র মশাই পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী। এরা ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। রোগে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে তোমাকে একটা মজার তথ্য দিই। সব মশা কিন্তু মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়। শুধু স্ত্রী মশা মানুষকে কামড়ায়। ডিম পাড়ার জন্য প্রচুর শর্করার দরকার হয় এদের। আর মশা সেই শর্করার অভাব পূরণ করে আমাদের রক্ত দিয়ে। রক্ত খেতে না পারলে মশা ডিম পাড়তে পারবে না। তাই স্ত্রী মশাই শুধু মানুষকে কামড়ায়। আর পুরুষ মশা বিভিন্ন ফুলের মধু ও গাছের মিষ্টি নির্যাস খেয়ে বেঁচে থাকে।
মশা সম্পর্কে আরও একটা মজার তথ্য দিই। আইসল্যান্ডে ও অ্যান্টার্কটিকায় কোনো মশা নেই। আইসল্যান্ড পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে মশা নেই। কেন নেই, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটা পড়তে পারো। আর অ্যান্টার্কটিকায় অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে মশা বাঁচতে পারে না। অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মেরুর গড় তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মানুষের পক্ষেই সেখানে বেঁচে থাকা মুশকিল, মশা বাঁচবে কীভাবে!