স্যার নিলস ওলাভ একজন মেজর জেনারেল। আধুনিক এই মেজর জেনারেল মানুষ নন, একটি পেঙ্গুইন। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত এই পেঙ্গুইনের পূর্ণ উপাধি মেজর জেনারেল স্যার নিলস ওলাভ তৃতীয়। সম্মান করে তাকে বলা হচ্ছে ‘বুভেট দ্বীপপুঞ্জের বীর’। পেঙ্গুইনের জগতে বিশ্বে সর্বোচ্চ খেতাবধারী এই পেঙ্গুইনকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস স্বীকৃতি দিয়েছে।
২১ বছর বয়সী কিং জাতের পেঙ্গুইন মেজর জেনারেল স্যার নিলস ওলাভ তৃতীয় যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ চিড়িয়াখানায় বাস করে। নাইটহুড খেতাবপ্রাপ্ত এই পেঙ্গুইন এ বছরের শুরুর দিকে নতুন পদ ‘মেজর জেনারেলে’ পদোন্নতি পেয়েছে। তবে পেঙ্গুইন হয়ে এত ক্ষমতা দিয়ে কী করে সে?
কিং জাতের পেঙ্গুইন চিড়িয়াখানার কাছে বিশেষ তাৎপর্য ধারণ করে। এ জাতের পেঙ্গুইন শুধু চিড়িয়াখানার মাসকট, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। এর সঙ্গে নরওয়ের রাজার বিশ্বখ্যাত দেহরক্ষী বাহিনী নরওয়েজিয়ান কিংস গার্ডেরও মাসকট এই কিং পেঙ্গুইন।
পেঙ্গুইনটি চিড়িয়াখানার তৃতীয় কিং পেঙ্গুইন। বর্তমানে সে কিংস গার্ডের অফিশিয়াল মাসকটের দায়িত্ব পালন করছে। এই ঐতিহ্য ১৯৭২ সালে শুরু হয়েছিল, যখন স্যার নিলস ওলাভ প্রথম মাসকট নিযুক্ত হয়। চিড়িয়াখানার প্রথম কিং পেঙ্গুইনটি ১৯১৩ সালে নরওয়েজিয়ান ব্যবসায়ী ক্রিশ্চিয়ান সালভেসেনের পরিবার থেকে উপহার হিসেবে চিড়িয়াখানারকে দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তিনটি পেঙ্গুইন স্যার পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ববর্তী পেঙ্গুইনের মৃত্যুর পর নতুন পেঙ্গুইনকে ‘নিলস ওলাভ’ নাম দেওয়া হয়।
১৯৬১ সালে নরওয়েজিয়ান কিংস গার্ডের মেজর নিলস এজিলেন এডিনবার্গ চিড়িয়াখানায় আসেন আর্মির ড্রিল ডিসপ্লে দেখতে। ডিসপ্লেতে পেঙ্গুইনের অংশগ্রহণ দেখে পেঙ্গুইনের প্রতি আগ্রহী হন তিনি। কিং পেঙ্গুইনের রাজকীয় মার্চ মেজর নিলস এজিলেনকে নরওয়েজিয়ান কিংস গার্ডের সৈন্যদের মার্চের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৭২ সালে এডিনবার্গে ফিরে আসার পর এগেলিয়ান রেজিমেন্টের জন্য একটি কিং পেঙ্গুইনকে সামরিক মাসকট হিসেবে নির্বাচিত করেন। মেজর নিলস এজিলেন ও নরওয়ের রাজা ওলাভ পঞ্চমের নামে পেঙ্গুইনটির নামকরণ করা হয় ‘নিলস ওলাভ’। কিন্তু মজার বিষয় হলো, স্যার নিলস ওলাভ তৃতীয় এখন সেই মেজর নিলস এজিলেনকে ছাড়িয়ে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছে।
পেঙ্গুইনটি এখন নরওয়েজীয় সেনাবাহিনীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ পদে আছে। ক্যারিয়ারের প্রতিটি ধাপে সে সাফল্য অর্জন করেছে। অসামান্য সেবা ও অনুকরণীয় আচরণের জন্য পুরস্কারসহ স্যার নিলস পেঙ্গুইন নরওয়েজিয়ান কিংস গার্ডের কাছে খুবই সম্মানিত। রয়্যাল এডিনবার্গ মিলিটারি মার্চে পারফর্ম করার জন্য শহরে যাওয়ার সময় প্রতি কয়েক বছর পরপর রক্ষীরা স্যার নিলসের সঙ্গে দেখা করেন।
এডিনবার্গ চিড়িয়াখানা প্রাণী দলের দলনেতা অ্যালিসন ম্যাকলিন বলেন, ‘যখনই কিংস গার্ড স্যার নিলসকে পরিদর্শনে আসে, তখন পেঙ্গিনটি যা করে, তা আসলেই চমকপ্রদ। পেঙ্গুইনটি হট্টগোল পছন্দ করে। শতাধিক পেঙ্গুইনের যত্ন নিতে পেরে খুব গর্বিত। স্যার নিলস চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব।’ স্যার নিলসের সম্মানে চিড়িয়াখানায় ৪ ফুটের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। হুবহু আরেকটি ভাস্কর্য অসলোর হুসেবি লেইরে নরওয়েজিয়ান কিংস গার্ড ঘাঁটিতেও স্থাপন করা হয়েছে।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সম্পাদক ইন চিফ ক্রেগ গ্লেনডে সম্প্রতি স্যার নিলসের রেকর্ড আপডেট করতে এবং তাকে একটি চকচকে নতুন সনদপত্র উপহার দিতে চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেছেন। ক্রেগ বলেছেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে আমার সময়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অনেক নাইটের মুখোমুখি হতে পেরেছি। যেমন স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, স্যার রানুলফ ফিয়েনস এবং স্যার ক্রিস্টোফার লি। তবে একজন নাইটই শুধু প্রতি ঘণ্টায় ৮ মাইল বেগে মুখে মাছ নিয়ে ৫০ মিটার গভীরতায় সাঁতার কাটতে পারে।’