যমজ ভাই-বোনদের মধ্যে একটা মজার ব্যাপার আছে। কে বড় আর কে ছোট—এ নিয়ে ব্যাপক খুনসুটি চলে তাদের। দুই মিনিট আগে জন্মে একজন দাবি করে সে বড়। আমাদের আশপাশে খুব কমই দেখা মেলে যমজদের। তাই হরহামেশা যমজদের এই খুনসুটি দেখি না আমরা। কিন্তু কিন্তু এমন এক শহর আছে, যেখানে এই ঝগড়া খুব বেশি। কারণ, এই শহরে খুঁজলেই পাওয়া যায় প্রচুর যমজ। শুধু শহরে নয়, পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে যমজ জন্মানোর হার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। যমজ অঞ্চলের কেন্দ্রে আছে নাইজেরিয়ার ইগবো-ওরা নামের এক ছোট শহর। স্থানীয় গোত্রপ্রধান জিমোহ টিটিলোয়ের মতে, ইগবো-ওরার প্রায় প্রতিটি পরিবারেই আছে যমজ সন্তান। এক মায়ের গর্ভে একসঙ্গে একাধিক শিশুর জন্ম হয়।
ইগবো-ওরা শহরের প্রবেশমুখে এক বড় পাথরের স্তম্ভে লেখা আছে, ‘যমজ সন্তানের দেশ’। ভ্রমণকারীদের গর্বের সঙ্গে স্বাগত জানায় এই ফলক। সত্যিই এই শহরে যমজের ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে এক জোড়া যমজ সন্তান আছে।
নাইজেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো বিশ্বের মধ্যে যমজ হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে। যদিও তাঁদের কাছে বর্তমান পরিসংখ্যান নেই। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে প্যাট্রিক নাইল্যান্ডার নামের একজন ব্রিটিশ ডাক্তার পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রতি ১ হাজার জীবিত জন্মের মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০ জোড়া ছিল যমজ।
বিশ্বের কিছু জায়গায় যমজ সন্তানদের অবজ্ঞা করা হলেও ইগবো-ওরাতে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়াকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়। এমন নয় যে শহরটি খুব ধনী, বরং উল্টো। অনেক পরিবার তাদের আয়ের জন্য কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। যমজ সন্তানের আগমনকে সম্মানজনক মনে করে উদ্যাপন করে তারা। এখানকার একজন অধিবাসী বলেছিলেন, ‘যমজ সন্তানের বাবা হওয়া আনন্দের বিষয়।’ অধিবাসীরা মনে করেন, যমজ সন্তান ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা বিশেষ উপহার। ১২ বছর ধরে ইগবো-ওরা সম্প্রদায় যমজ সন্তানদের উদ্যাপনের জন্য একটি বার্ষিক উৎসবের আয়োজন করছে। যেখানে প্রায় ১ হাজার জোড়া যমজ অংশ নেয়। এমনকি এই উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য লোকেরা ফ্রান্সের মতো দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণ করে। এই আয়োজন যমজ সন্তানদের জাঁকজমকপূর্ণ এক উদ্যাপন।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ইগবো-ওরাতে যমজ সন্তানের হার এত বেশি? বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁরা এখনো নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাননি। শহরের অনেকেই মনে করেন, নারীরা যে খাবার খান, তার সঙ্গে এর কিছু সম্পর্ক আছে। যমজ সন্তানের মা আলাকে ওলাউনমি মনে করেন, যমজ সন্তানের উচ্চ হারের কারণ হতে পারে আমলা নামে একটি স্থানীয় খাবার, যা ডিমের ময়দা থেকে তৈরি। কিন্তু কারণটি কেউই নিশ্চিতভাবে জানে না।
ইগবো-ওরার স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ জন ওফেমও মনে করেন, স্থানীয় মানুষেরা যে খাবার খান, তা একটি কারণ হতে পারে। তাঁর ধারণা যে তাঁদের ডায়েটে উপস্থিত নির্দিষ্ট হরমোন নারীদের গর্ভে একাধিক ডিম্ব ছাড়তে পারে। ফলে যমজ সন্তানের জন্ম হতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, শহরটিতে অভিন্ন যমজদের (আইডেন্টিকেল টুইনস) সংখ্যাও অনেক। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে হরমোনের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।