পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশজুড়ে রয়েছে বিশাল সাগর। এই সাগরের উপরিভাগ আমাদের পরিচিত। কিন্তু এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে অজস্র রহস্য। গভীর সাগরে এমনও স্থান রয়েছে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। যেখানে পানির চাপ অস্বাভাবিক বেশি। সেখানে এমন সব প্রাণী বাস করে, যাদের দেখলে অবাক হতে হয়। যেমন এদের আকার, তেমনি এদের বিচিত্র ক্ষমতা। সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা এমন অদ্ভুত এক প্রাণী ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ।
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার দেখতে কিছুটা ছোট। এর আকার লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। এরা অন্য সব মাছ থেকে আলাদা হয়ে উঠেছে শিকার ধরার কৌশলের জন্য। এরা নিজেদের দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ ও ওজনের দশগুণ বড় প্রাণীকে শিকার করে। এই শক্তিশালী শিকারীর হাতিয়ার হলো প্রকাণ্ড মুখ। মুখ ভর্তি রয়েছে রেজর ব্লেডের মতো ধারালো তীক্ষ্ণ দাঁত। যা দিয়ে অনায়াসেই শিকার ধরে গিলে ফেলে শিকার। এদের বৈজ্ঞানিক নাম চিয়াসমোডন নাইজার।
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ আটলান্টিক মহাসাগরের ব্যাথিপেলাজিক অঞ্চলে বাস করে। এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ১৩ হাজার ফুট নিচে পর্যন্ত। এখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বললেই চলে।
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছের শিকার ধরার ক্ষমতা সত্যিই অবিশ্বাস্য! কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে, নিজেদের দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ ও ওজনের দশগুণ বড় শিকার কীভাবে পেটের মধ্যে থাকে? শিকার যতই বড় হোক না কেন, এদের খেতে সমস্যা হয় না। কারণ, এদের পেট বেলুনের মতো। প্রয়োজন মতো ফুলে ওঠে। এদের বসবাসের এলাকার বাস্তুতন্ত্রই এদেরকে এমন অদ্ভুত শিকার ধরার কৌশল দিয়েছে।
ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ আটলান্টিক মহাসাগরের ব্যাথিপেলাজিক অঞ্চলে বাস করে। এই অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ১৩ হাজার ফুট নিচে পর্যন্ত। এখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বললেই চলে। তাই এখানে খাদ্যের অভাব থাকা স্বাভাবিক। এই পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এরা একবারে অনেক খাবার গিলে ফেলে। পরে ধীরে ধীরে হজম করে। এভাবে এরা টিকে আছে হাজারো বছর।
এই খাবার জমিয়ে রাখা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে ওঠে ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার জন্য। যতই খাবার জমিয়ে রাখতে পারুক না কেন, সীমা অতিক্রম করলে বিপদ হয় এদের। পাকস্থলীতে জমিয়ে রাখা অতিরিক্ত খাবার পচে গ্যাস তৈরি হয়, ফলে পেটে অসহ্য চাপ তৈরি হয়। অনেক সময় এই চাপ এত বেশি হয় যে মাছটি পাকস্থলী ফেটে যায়। পরে সমুদ্রের ওপরে ভেসে ওঠে।
বিজ্ঞানীরা এসব মৃতদেহ থেকে ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার নিয়ে জানতে পেরেছেন। এরা আটলান্টিক মহাসাগরের গভীর খাদে ডিম পাড়ে। ডিমের আকার হয় সাধারণত ১১ মিলিমিটারের মতো। ২০০৭ সালে গ্র্যান্ড কেম্যানের দ্বীপের কাছে এক দল জেলে খুঁজে পায় একটি ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার। এর পেটে স্নেক ম্যাককেরেল নামে একটি মাছের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। যার আকার ছিল ৮৬ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় সাড়ে চারগুণ শিকার ধরেছিল এটি।
নির্জন সাগরের গভীরে বাস করা ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার আশ্চর্যজনকভাবে অন্ধকারের সঙ্গে মিশে যায়। এদের শরীরে আঁশ তেমন নেই। আর কালো শরীরের কারণে এরা শিকারী কিংবা শিকার, কারও চোখেই পড়ে না। স্টিলথ বোমারু বিমানের মতো চলাফেরা করে এরা। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যার ফলে এদের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে।
সূত্র: আইএফএল সায়েন্স, উইকিপিডিয়া, ওশান টুইলাইট জোন