বলো তো, এক আর একে কী হয়? যদি তোমার উত্তর হয় দুই, তবে উত্তর সঠিক। তবে একটা ভিন্নমত আছে। এক আর একে এগারো হয়। একটু হেঁয়ালি শোনালেও বন্ধুদের সঙ্গে এ রকম করা যায়। ১১ আসলে একটি বিস্ময়কর সংখ্যা। এ সংখ্যা নিয়ে মানুষের বিশেষ কৌতূহল আছে। আর এ কৌতূহল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে একটি শহরের নাম, সলোথার্ন। এই শহরজুড়ে ১১ সংখ্যার ছড়াছড়ি। চলো, কিছু তথ্য জানা যাক।
সুইজারল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে সলোথার্ন শহরটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১১। জুরা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই শহরে বেড়াতে গিয়ে পর্যটকেরা কিছুক্ষণের জন্য থমকে যান। শহরের কেন্দ্রস্থল টাউন স্কয়ারের সামনের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হতে হয়। অন্য সব দেশের ঘড়িতে ১২টি কাঁটা থাকলেও সলোথার্নের ঘড়িতে আছে ১১টি কাঁটা। এই ঘড়িতে কখনো ১২টা বাজে না। শুধু ঘড়িতেই না, এই শহরের অন্য অনেক কিছুতেই ১১ সংখ্যাটির প্রভাব আছে।
জাদুকরি সংখ্যাটির এক অপূর্ব নিদর্শন সলোথার্ন শহরের সেরা শিল্পকর্ম সেন্ট উরসাস ক্যাথেড্রাল গির্জা। আঠারো শতকের মাঝামাঝি গির্জাটি নির্মাণে ১১ স্থানের ১১ ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। গির্জাটিতে আছে ১১টি ঘণ্টা। আছে ১১টি দরজা ও ১১টি জানালা, এমনকি ১১ দ্বারা বিভাজ্য গির্জার উচ্চতা ও সিঁড়িগুলোর সংখ্যা। এ ছাড়া আছে নকশাদার ১১টি বেদি। এগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, গির্জার প্রবেশমুখে ১১ নম্বর পাথরের ওপরে দাঁড়ালে ১১টি বেদি একসঙ্গে দেখা যায়। অবাক করা বিষয়, গির্জাটি নির্মাণে সময় লেগেছিল ১১ বছর (১৭৬২ থেকে ১৭৭৩)।
শহরটির কিংবদন্তি অনুসারে তৃতীয় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের প্রসিদ্ধ যোদ্ধা উরসুস ও ভিক্টর ১১তম থেবান বাহিনীর সৈন্য ছিলেন। ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হওয়ায় সালোডুরুমে (সলোথার্ন) শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল তাঁদের। এ ছাড়া সলোথার্নের ইতিহাস অনুযায়ী একাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই নগরীতে ‘ইলভ’ নামে একজন জার্মান অধিবাসীর আগমন ঘটেছিল, যিনি এ রকম একটি নগর নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলেও সলোথার্নবাসী এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন। এ কারণে সলোথার্ন দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান।
শহরের ১১ সংখ্যার অন্যান্য নিদর্শনের মধ্যে আছে শহরের ১১টি করে প্রবেশদ্বার, পৌরসভা, দুর্গ, মিনার ও ঝরনা। বর্তমানে সলোথার্নের বাসিন্দারা তাঁদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর মধ্যে আছে ১১টি করে জাদুঘর, ফোয়ারা, চ্যাপেল, গির্জা, সলোথার্ন ঘড়ি ও বিয়ার, এমনকি ১৪৮১ সালে সুইস কনফেডারেশন বা সুইজারল্যান্ডের ১১তম প্রদেশ হিসেবে সলোথার্নকে যুক্ত করা হয়। ১২১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় এই শহর থেকে ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। সলোথার্নবাসীর ১১ সংখ্যার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দুর্বলতা সৃষ্টি করেছে এক অনবদ্য দৃষ্টিনন্দন শহর, যার আকর্ষণে ভ্রমণপিপাসুরা সলোথার্নে ছুটে যান।