টেকনোফোবিয়া কী, কীভাবে কাজ করে এই ভয়

টেকনোফোবিয়াছবি: ডিসকোভার ম্যাগাজিন

সাধারণত ভয় বোঝাতে ফোবিয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অনেকের অনেক রকম ভয় থাকে। কেউ হয়তো তেলাপোকা ভয় পায়, আবার কেউ ওপর থেকে নিচে তাকালে। তবে এসবের বাইরেও আছে আরও অদ্ভুত ধরনের ফোবিয়া। কিন্তু ফোবিয়া মানে শুধু ভয় বললে ভুল হবে। আসলে ফোবিয়ার কারণে কেউ অকারণে দুশ্চিন্তা করতে পারে, আতঙ্কিত হতে পারে বা হতে পারে বিরক্ত। মূলত অকারণে ভয় পাওয়ার প্রবণতাকে ফোবিয়া বলে। বইয়ের ভাষায় বলতে হলে, কোনো অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হওয়া, ভয় পাওয়া বা সেই ভয়কে অকারণে এড়িয়ে চলার প্রবণতাকে ফোবিয়া বলে।

ফোবিয়া নানা কারণে হতে পারে। জেনেটিক কারণেও হতে পারে। তবে বাবা-মায়ের যে ধরনের ফোবিয়া হবে, সন্তানের যে সেই একই ফোবিয়া হতে হবে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় বয়স বা শারীরিক অসুস্থতা মানুষকে দুর্বল করে তোলে। এতে সব পরিবেশে তাদের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন থেকেই জন্মায় ফোবিয়া। এছাড়াও অ্যাজমা বা ডায়বেটিস থেকে স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি ফোবিয়া হতে পারে।

ফোবিয়া সাধারণত তিন ধরনের হয়। সোশ্যাল ফোবিয়া (নিজেকে সমাজে মেলামেশার অনুপযুক্ত মনে করা), স্পেশাল ফোবিয়া (নির্দিষ্ট কোনো জিনিসে অকারণে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া) এবং অ্যাগারোফোবিয়া (খোলামেলা জায়গায় যেতে ভয় পাওয়া)। ফোবিয়া বা ভীতি থাকলে গলা, মুখ শুকিয়ে যেতে পারে, প্রচণ্ড ঘামও হতে পারে। এছাড়া বুকে ব্যথা, পেশিতে টান অনুভব করা, কাঁপুনি, বমি বমি ভাব, নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ঘোরা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

এই ফোবিয়া কিন্তু হাজার হাজার বছর আগে ফোবিয়া ছিল। তবে আমরা তা জেনেছি মাত্র কয়েকশ বছর আগে। প্রথম ফোবিয়ার কথা জানা যায় প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এবং চিকিৎসক হিপোক্রেটিসের লেখায়।

অনেক ধরনের ফোবিয়ার মধ্যে একটা হলো টেকনোফোবিয়া। প্রযুক্তি নিয়ে যে কোনো ভীতিই এই ফোবিয়ার মধ্যে পড়ে। যেসব মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন বা অস্বস্তিতে ভোগেন, তাদেরকে টেকনোফোবস বলা হয়। এরকম কয়েকটি টেকনোফোবিয়া নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

নেমোফোবিয়া

দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আর আলাদা করে বলতে হবে না। দিন দিন মোবাইলের কদর বেড়েই চলেছে। আমাদের ভালো বা খারাপের লাগা অনেকটাই নির্ভর করে মোবাইল ফোনের ওপর। তাই মোবাইলের বিকল্প নেই। মোবাইল সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কি না, হারিয়ে গেল কি না, চার্জ কি পর্যাপ্ত আছে—এসব নিয়ে আমরা অনেকে আতঙ্কে থাকি। গবেষকেরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়কে নেমোফোবিয়া বলছেন। যারা এই ফোবিবায় আক্রান্ত, তারা কিছুক্ষণ পরপর ঘুম থেকে জেগে মোবাইল চেক করে। কেউ ম্যাসেজ দিল কি না, বা মোবাইলটা আদৌ সুরক্ষিত আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে। অনেকেই ওয়াশরুমেও মোবাইল নিয়ে যায়। মোবাইলে কল এলে রিসিভ করার অস্থির হয়ে ওঠে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ভারতের ২৯ শতাংশ তরুণ এ ফোবিয়ার শিকার। ৭-১০ বছর আগেও এই লক্ষণের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু দিন দিন এটি বেড়েই চলছে।

সেলফিফোবিয়া

সেলফিফোবিয়া
ছবি: ইন্ডিয়া টুডে

মোবাইল ফোনে সেলফি আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সেলফির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সেলফি তোলা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু অনেকেই সেলফি তুলতে ভয় পায়। সেলফি তোলার এই ভয়কে সেলফিফোবিয়া বলা হয়। এই ফোবিয়াকে চিকিৎসকেরা এখনো রোগ হিসেবে ঘোষণা করেননি। তবে এই ফোবিয়া নিয়মিত বেড়েই চলছে। এই রোগে আক্রান্তরা সেলফি তুলতে গিয়ে মনে করেন, হয়তো দাঁড়ানো ঠিক হয়নি বা মুখের ভঙ্গি ঠিক নেই। অনেকেই মনে করেন, সেলফিতে তাকে সুন্দর দেখায় না। এ কারণে সেলফি তুলতে ভয় পায়।

টেলিফোনোবিয়া

টেলিফোনোবিয়া মোবাইল বা টেলিফোন সংক্রান্ত ফোবিয়া নয়। ফোন বাজলে রিসিভ করে কী বলবে এটা নিয়ে অনেকেই আতঙ্কে থাকে। এই আতঙ্কের নাম টেলিফোনোবিয়া। কানাডার ফোবিয়া বিশেষজ্ঞ মারলা ডেবলার বলেন, ‘এটি সমালোচিত হওয়া বা বকা খাওয়ার ভয়ে তৈরি হয়।’

সাইবারফোবিয়া

আজকাল কম্পিউটার ব্যবহার করে প্রযুক্তি খাতে আমরা অনেক এগিয়েছি। আমাদের রোজকার কাজ আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা কম্পিউটারে কাজ করার কথা শুনলেই ভয় পায়। তাদের মনে হয়, কম্পিউটার হয়তো তাদের আক্রমণ করবে। আবার অনেকেই মনে করেন, কম্পিউটারে না জেনে কোনো বোতাম টিপলে উদ্ভট কিছু ঘটে যেতে পারে। কম্পিউটারের এই ভীতিকে বলা হয় সাইবারফোবিয়া । ১৯৮৫ সাল থেকে সাইবারফোবিয়া দেখা যায়। ছোটদের মধ্যে এই ফোবিয়া বেশি দেখা যায়। তবে এই ফোবিয়ার জন্য ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। কারণ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ঔষধ সেবনে উলটো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

সূত্র: ফেয়ার অব নেট ও মেডিকেল নিউজ টুডে

আরও পড়ুন