বইয়ের দুনিয়া
ছাপা বইয়ের দিন কি শেষ, গবেষণা যা বলছে
একটা সময় ছিল, বই বলতে শুধু কাগজের বই বোঝাত। কিন্তু সে দিন বদলে গেছে। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি এখন ইলেকট্রনিক বইও পাওয়া যায়। সংক্ষেপে যাকে ই–বুক বলে। হাতে ধরে কাগজের বই পড়ার পরিবর্তে মুঠোফোন বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসে ই–বুক পড়া যায়।
কাগজের বইয়ের চেয়ে ই–বুকে কিছু সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে অসুবিধাও। প্রথমে একটু এই সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নিই। তারপর আমরা গবেষণালব্ধ ফলাফলে যাব। অর্থাৎ খুঁজে দেখব, ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশের মানুষ কোন মাধ্যমের বই বেশি কিনেছেন।
ই–বুকের সুবিধা
১. বই বহন করার ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়;
২. যত ইচ্ছা তত ই–বুক মুঠোফোন বা কম্পিউটারে রাখা যায়;
৩. দাম তুলনামূলক কম। প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগ;
৪. চাইলে নিজের পছন্দমতো ফন্ট ছোট বা বড় করে পড়া যায়;
৫. পছন্দের কোনো কোটেশন দাগিয়ে রাখা যায় কলম ছাড়াই।
ই–বুকের অসুবিধা
১. মোবাইল বা কম্পিউটারের আলোয় চোখে সমস্যা হতে পারে;
২. হাতে ধরে কাগজের বই পড়ার মতো আনন্দ পাওয়া যায় না;
৩. বই পড়ার মাঝে অন্য অ্যাপে চলে যাওয়া বা মনোযোগ হারানো;
৪. ডিভাইসে চার্জ না থাকলে বই পড়া যাবে না;
৫. ই–বুক পড়ার ডিভাইস মুঠোফোন বা কম্পিউটারের অনেক দাম।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, কাগজের বই ও ই–বুক—উভয়ের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এখন তোমার পছন্দমতো তুমি কাগজের বই বা ই–বুক পড়তে পারো।
তবে ‘স্ট্যাটিস্টিকা মার্কেট ইনসাইটস: মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাডভার্টাইজিং’ বিভিন্ন দেশের মানুষের বই কেনার একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, কোন দেশের মানুষ ২০২৩ সালে কেমন বই কিনেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জন কাগজের বই কিনলেও ২০ জন কিনেছেন ই–বুক। আবার জাপানে শতকরা ৪১ জন কাগজের বইয়ের বিপরীতে ১৯ জন ই–বুক কিনেছেন। কিন্তু চীনে কিন্তু হিসাবটা বদলে গেছে। চীনে যেখানে কাগজের বই কিনছেন ২৪ জন, সেখানে ই–বুক কিনছেন ২৭ জন। অর্থাৎ চীনে কাগজের বইয়ের তুলনায় ই–বুকের চাহিদা বেশি। ভারতে শতকরা ২৬ শতাংশ মানুষ এখনো কাগজের বই কেনেন। আর মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ কেনেন ই–বুক।
বাংলাদেশেও বর্তমানে ই–বুক জনপ্রিয় হচ্ছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ই–বুক পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। যদিও দেশে ই–বুকের বাজার এখনো যথেষ্ট ছোট, কিন্তু সেটি হয়তো কাগজের বইয়ের বাজার ছাড়াতে সময় লাগবে না। ইতিমধ্যে চীনে কিন্তু সে পরিবর্তন দেখা গেছে।
তবে এখনই ভয়ের কিছু নেই। এই গবেষণায় ১০টি দেশের এক বছরের বই কেনার হিসাব দেখানো হয়েছে। সেখানে শুধু একটি দেশে কাগজের বইয়ের তুলনায় ই–বুকের জনপ্রিয়তা বেশি। ধীরে ধীরে হয়তো মানুষের ই–বুকের দিকেই ঝুঁকবেন। এর একটি বড় কারণ বহনযোগ্যতা ও দাম। দিন দিন কাগজের দাম বাড়ছে, আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বইয়ের দামও। ফলে নতুন বই যদি ই–বুক আকারে প্রকাশ করা হয়, তাতে কাগজও বাঁচে, আবার দামও কমে।
কোম্পানিটি এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বইয়ের বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। তাদের ধারণা, ২০২৪ সালে বইয়ের বাজারের আয় পৌঁছে যাবে ৯১.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০২৯ সালের মধ্যে ইবুক পাঠকের মাধ্যমে আয় বেড়ে হবে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বইয়ের বাজারে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের।
যে মাধ্যমেই পড়ো না কেন, পড়তে হবে এটা নিশ্চিত থাকো। এখন যে মাধ্যমে তোমার পড়লে সুবিধা হয়, সে মাধ্যমে পড়ো। তবে পড়াটা শেখা ও আনন্দের জন্য হওয়া উচিত।
২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশের বই পড়ার হিসাব
সূত্র: স্ট্যাটিস্টিকা ডটকম