চলো গাছ লাগাই স্কুল আঙিনায়

এ বছর গরমের তীব্রতা কতখানি বেড়েছে, তা কি আর বলে বোঝাতে হবে! শেষ পর্যন্ত তো এমন হলো, প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে স্কুল পর্যন্ত বন্ধ ছিল কিছুদিন। এখন আমরা বুঝতে পারছি, ঘরে ফ্যান কিংবা এসির বাতাসে স্বস্তি মিললেও প্রকৃতির গরম কমানোর জন্য চাই বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ। অনেক তো হলো পরীক্ষার খাতায় রচনা কিংবা অনুচ্ছেদে ‘বৃক্ষরোপণ’ নিয়ে লেখা। এবার চলো, নিজেদের স্কুলের আঙিনাতেই ‘বৃক্ষরোপণ’-এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাই।

শুরুটা যেভাবে হতে পারে

মনে পড়ে, আমাদের সময় আমরা ক্লাসের সবাই নিজেরা চাঁদা তুলে কোনো এক বর্ষায় চারা কিনে লাগিয়েছিলাম স্কুলের আঙিনায়। কুমিল্লা সদরের জয়নাল আবেদীন ট্যালেন্টস প্রিক্যাডেট স্কুল—আমাদের স্কুল। এখনো যখন স্কুলে বেড়াতে যাই, গাছগুলো দেখে অন্য রকম প্রশান্তি পাই। সেই দিনের ছোট্ট গাছগুলো আমাদের চেয়েও বড় হতে হতে আকাশ ছুঁতে চলেছে! আমাদের জীববিজ্ঞান ক্লাস নিতেন প্রিয় কামরুল হাসান স্যার। এখন সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন জিরুইন বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। কামরুল স্যারের আন্তরিক সহযোগিতায় বৃক্ষরোপণের কাজটা খুব সহজভাবে করতে পেরেছিলাম আমরা।

বৃক্ষমেলা থেকে গাছ কিনে নিতে পারো
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

দেখো দেখি কাণ্ড, শুধু নিজের কথাই বলে যাচ্ছি! তোমরাও চাইলে তোমাদের প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে পরামর্শ করে বৃক্ষরোপণের চমৎকার উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে পারো। স্যারদের সহযোগিতায়, নিজেরা টিফিনের থেকে বাঁচিয়ে জমানো টাকা থেকে চাঁদা তুলে, স্কুলের বিভিন্ন ক্লাবের সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের স্কুল আঙিনায় বৃক্ষরোপণের অভিযানে নামতে পারো। এই জুন মাস থেকেই বর্ষা শুরু। এখনই গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। ঢাকায় বড় আকারে বৃক্ষমেলা বসে আগারগাঁওয়ে (পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে)। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি জেলা শহরেই বসবে বৃক্ষমেলা। বৃক্ষমেলায় পেয়ে যাবে তোমাদের পছন্দসই গাছের এক বিশাল সংগ্রহশালা। এ ছাড়া স্থানীয় নার্সারি তো আছেই, নার্সারি মামাদের বলেও তোমাদের পছন্দের সব গাছ সংগ্রহ করতে পারো।

এবার চলো, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন গাছ রাখা যায় স্কুলের আঙিনায় বৃক্ষরোপণ তালিকায়:

আরও পড়ুন

ফলদ গাছ

ফলের শুরুতেই আসে আম, জাম, কাঁঠালের কথা। স্কুল প্রাঙ্গণ বড় হলে, গাছ রোপণের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকলে প্রতিটি শ্রেণির জন্য একটি করে আম, জাম, কাঁঠাল রোপণ করা যায়। গাছে যখন ফল হবে, তখন স্কুলজুড়ে ফলের উৎসব করা যাবে। অন্যান্য ফলের মধ্যে রোপণ করা যায় পেয়ারা, পেঁপে, আমড়া, সফেদা, জামরুল, আতা, শরিফা, কামরাঙা, করমচা, তেঁতুল, আমলকী, বরই, মালবেরি বা তুঁত ফল, অরবরই, জলপাই। চাইলে মাঠের এক কোনায় কলাগাছের চাষও হতে পারে।

ফুলের গাছ

যদি চাও স্কুল ক্যাম্পাস ম-ম করুক ফুলের মিষ্টি সৌরভে, রোপণ করতে পারো সুগন্ধি ফুলের গাছ। গোলাপ, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, কামিনী, বেলি, শিউলি, বকুল। ফুল কুড়িয়ে বেলি, শিউলি বা বকুল ফুলের মালাও গাঁথতে পারো ক্লাসের ফাঁকে কিংবা টিফিনের অবসরে।

গোলাপি অলকানন্দা

কিছু ফুল আছে খুব কম যত্নেই বাঁচে আবার বছরের বারো মাসজুড়েই ফুল দেয়। তেমন বারোমাসি ফুলের তালিকায় রাখতে পারো নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী, অপরাজিতা, চায়নিজ টগর, জবা, কাঁটামুকুট, অলকানন্দা, করবী, মরিচা ফুল, ল্যান্টানা।

লতানো ফুলের মধ্যে আছে বাগানবিলাস, মধুমালতী, মাধবীলতা, ঝুমকোলতা, কুঞ্জলতা, অনন্তলতা, নীলমণিলতা, পারুললতা, অপরাজিতা, অলকানন্দা, মর্নিং গ্লোরি, গোল্ডেন শাওয়ার।

রাখতে পারো টকটকে লাল, গোলাপি কিংবা সাদা রঙের করবি ফুল। স্বর্ণ উজ্জ্বল হলুদ রঙের চন্দ্রপ্রভা, লাল বা সাদা বকফুল। শ্বেত বা রক্তকাঞ্চন। পুর্তলিকা, ব্লুডেইজি, রেইন লিলি, অ্যামারলিস লিলি, গ্রাউন্ড অর্কিড। শীতের সময় ঠাঁই দিতে পারো শীতকালীন ফুল গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী, ডায়ান্থাস, দোপাটি, পিটুনিয়া, জারবেরা, কসমস।

আরও পড়ুন

শহীদ মিনার ঘিরে গাছ

তোমরা কি জানো, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে আছে রক্তে আগুনলাগা কোন সে রঙিন ফুলের গাছ? হুম। ঠিক ধরেছ। আছে পলাশ ফুলের গাছ। তোমরাও তোমাদের ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাশে রোপণ করতে পারো রক্তলাল পলাশ ফুল, কৃষ্ণচূড়া ও শিমুল ফুল। বর্ষার ফুল কদম আর সোনালু ফুলও রাখতে পারো এক সারিতে।

কৃষ্ণচূড়া

শোভাবর্ধনকারী গাছ

সবুজের মাঝে ছোপ ছোপ হলুদ বা খয়েরি রঙের রঙিন ক্রোটন বা পাতাবাহার, লতানো মানিপ্ল্যান্ট, সাদাটে সবুজ বা হলদেটে সবুজ পাতার লাকি ব্যাম্বু, সাদা ফুলের পিস লিলি, অ্যারেকা পাম, স্পাইডার প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্টসহ নানা পাতাবাহারগাছ যেমন স্কুল মাঠে রোপণ করা যাবে, আবার বারান্দার টবেও ঠাঁই দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

বজ্রপাতের আঘাত ঠেকাতে গাছ

প্রতিবছর পত্রিকার পাতায়, টিভি পর্দায় খবর আসে দেশের নানা প্রান্তে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতের আঘাতে। স্কুলের কোনো এক অংশে যদি লম্বা কোনো গাছ থাকে তাহলে তা বজ্রপাত প্রতিহত করতে পারে। তাল ও নারকেলগাছ খুব উঁচু হয় বলে বজ্রপাতের আঘাতে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাল ও নারিকেলগাছও অল্প কিছু থাকা ভালো। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের বিপরীতে অবস্থিত রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আছে তেমনই এক নারকেলগাছের সারি। নিশ্চয়ই গাছগুলো স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর বজ্রপাতের আঘাত ঠেকাতে নির্ঘুম দাঁড়িয়ে আছে।

পাখিদের জন্য গাছ

স্কুলের পুরোটা সময় থাকে তোমাদের কোলাহলে মুখর। সেই মুখরতায় যদি যোগ করতে চাও পাখিদের কলকাকলি, তবে বেশি করে সব রকমের ফলের গাছ রোপণ করা চাই। যদি চাও বুলবুলি আসুক, মালবেরি বা তুঁতফল আনো। যদি চাও টিয়া পাখি আসুক, তো কামরাঙাগাছ রোপণ করো। আর যদি চাও সব রকমের পাখি আসুক, তবে স্কুলের কোনো এক অংশে একটি বটগাছ লাগাও। বটগাছ বড় হবে, বটের ফল খেতে সব পাখি এসে হাজির হবে কিচিরমিচির করে। তোমরাও ক্লান্ত দুপুরে বটের ছায়ায় জিরাবে, বৈশাখের মেলা বসাবে, স্কুলের নানা আয়োজনও হতে পারে এই বটবৃক্ষের ছায়ায় বাঁধানো বটতলার মঞ্চ থেকে।

আরও পড়ুন