প্রাণীরা যোগাযোগের জন্য স্পর্শ করে, গন্ধ শুঁকে বা শব্দ করে। কখনো চোখ দিয়ে সংকেত দেয়। যেমন চোখের উজ্জ্বলতা, রং ও শারীরিক ভাষা ব্যবহার করে একটি প্রাণীকে সব ধরনের বার্তা পাঠাতে পারে। কিছু বার্তা পাঠানোর ধরন খুব স্পষ্ট বোঝা যায়। যেমন গরিলা নিজের শিশুর দিকে তাকিয়ে হাসে। আবার একরকম মেয়ে মাকড়সা আছে, যারা পুরুষ মাকড়সাকে আকর্ষণ করতে নিজের শরীরের ঘ্রাণ মিশিয়ে জাল ছড়িয়ে রাখে।
কেন প্রাণী যোগাযোগ করে
প্রভাব রাখতে নেকড়ের দল ডাকাডাকি করে (হাউল) নিজেদের টেরিটরি বা এলাকা ঘোষণা করতে। একে অপরকে ডাকতেও হাউল করে। এমনকি একটি নেকড়ে ডেকে উঠলে অন্যগুলো ডাকে। কারণ, তারা একটি প্যাক বা দলের অংশ হিসেবে নিজেকে মনে করে এবং সেটা ডাকের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
সঙ্গী খুঁজতে ডাকাডাকি
শুধু বালুর মরুভূমি হয় না, বরফেরও মরুভূমি হয়। এই মরুভূমিতে গরমের বদলে থাকে ঠান্ডা, যেখানে গাছ বা প্রাণী তেমন থাকে না। এমন বিশাল এক মরুভূমি হলো আর্কটিক অঞ্চল। এখানে মেরু ভালুক বাস করে। ভালুকের পরিমাণ খুব কম এবং জায়গাও অনেক বড়। তাই ভুলেও এক ভালুক অন্যটির সঙ্গে ধাক্কা খায় না বা সহজে দেখা হয় না। তাই ভালুক চলাচলের সময় নিজের শরীরের গন্ধ পথে রেখে যায়, যেন সঙ্গী ভালুক তাকে খুঁজে পায়।
এলাকা রক্ষা করতে
বাঘ বা বাঘজাতীয় প্রাণী নিজের এলাকা চিহ্নিত করতে এবং অন্য বাঘের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এড়াতে গাছে প্রস্রাব করে নিজের গন্ধ রেখে যায়।
বিপদ থেকে সতর্ক করতে
লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের লেখা বিখ্যাত বই ‘লিটল হাউস অন দ্য প্রেইরি’। এ বইয়ে প্রেইরি তথা প্রান্তরের কথা আছে। ঘাসের বিশাল বুনো এলাকা। এ এলাকায় এক জাতের কাঠবিড়ালি থাকে, নাম প্রেইরি কুকুর। কোনো বিপদ আছে বা বিপদ কত দ্রুত এগিয়ে আসছে, সেটা অন্যদের জানাতে প্রেইরি কুকুর বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক ডাক ডাকে।
ছানাদের যত্ন নিতে
পাখির ছানা মা-বাবার ঠোঁটে টোকা দেয়। এর মানে ‘আমাকে খাওয়াও!’
প্রতিযোগীদের ভয় দেখাতে
একটি পুরুষ গরিলা কতটা বড় ও শক্তিশালী, নিজের সক্ষমতা দেখানোর জন্য গরিলা নিজের বুক চাপড়ায়। এতে দলের সম্ভাব্য প্রতিযোগী ভয় পায়। দলনেতাকে চ্যালেঞ্জ করতে ভয় পায়।
জলহস্তী যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করে
০১. জলহস্তী যদি দাঁত দেখায়, তবে বুঝবে সে হুমকি দিচ্ছে।
০২. আরও বেশি চিন্তার ব্যাপার হবে যদি দাঁত দেখানোর সঙ্গে পানিও ছিটায়।
০৩. তুমি যদি দেখো, জলহস্তী মাথা নাড়ছে, সামনে-পেছনে নড়ছে, তবে পালানোর জন্য প্রস্তুত হও।
০৪. আর যদি গর্জন শুনতে পাও কিংবা জলহস্তী শরীর ঝাঁকাতে শুরু করে, তবে দ্রুত পালিয়ে যাও।
প্রাণীরা গন্ধ ছড়িয়ে যা বলে
মাদাগাস্কারের পুরুষ রিং-টেইলড লেমুররা দুর্গন্ধ ছড়ানোয় একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দেয়। যার দুর্গন্ধ বেশি, সঙ্গী তার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।
বেশির ভাগ প্রাণী (পাখি বাদে) ‘ফেরোমোন’ নামের রাসায়নিক ত্যাগ করে। এই রাসায়নিকের গন্ধ নিজ প্রজাতির অন্য সদস্যদের মধ্যে আবেদন সৃষ্টি করে। কখনো সঙ্গী খুঁজে পাওয়া, কখনো নিজের সীমানা বোঝানোর জন্য, কখনো প্রতিযোগিতা এড়ানোর জন্য গন্ধ ছড়ায়। এমনকি গন্ধ দিয়ে অন্য সদস্যরা বুঝতে পারে, প্রাণীটি কত বড় বা কতটা শক্তিশালী।
ফেরোমোন বাতাসে ভর করে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। অন্য প্রাণীরা বুঝতে পারে, আশপাশে তার নিজ প্রজাতির সদস্য আছে। সে সঙ্গী না প্রতিযোগী, তা-ও নির্দিষ্ট করে বুঝতে পারে প্রাণীরা।