এই ফিনো, ফিনোওওও, আরে এই ব্যাটা ফিনো!
অদ্ভুত তো! এত ডাকছি কিন্তু কোনো পাত্তাই নেই। এবার পেছন দিকে তাকিয়ে আরেকবার ডাকলাম, ফিনো!
সে আমার ডাকটা শুনে কেবল নিজের একটা চোখ কোনোমতে খুলে পিটপিট করে তাকাল। এরপর বিশাল একটা হাই তুলে মাথাটা অন্যদিকে ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল! যেন আমার উদ্দেশে বলল, ‘অযথা কেন এত ডাকাডাকি কলো, বাপু! দেখছ না শুয়ে একটু জিরোচ্ছি। আমার জিরোনো তো তোমাল সহ্য হয় না, কারণে–অকারণে শুধু ডাকাডাকি। জানি তো, কাছে গেলেই গলা লেপ্টে ধরে ফোনটা বের করে সেলফি তুলবে! এসব আমার পোষায় না। শুধু যখন মাছটা আর মাংসটা আনবে, তখনই শুধু ডাকবে, সে পর্যন্ত আমি নড়বই না।’
এই হলো আমার অলস গুণধর বিড়াল ফিনো। তোমাদের পোষা বিড়ালটাও কি এমন, তোমার কথার একটুও পাত্তা দেয় না?
প্রায় আট মাস ধরে ফিনো আমার সঙ্গেই আছে, এত আদর দিচ্ছি, খাওয়াচ্ছি, পরাচ্ছি (বিড়ালের গলার ফিতা বা বো আরকি!)। সেই আমিই কিনা ডাকলে সে একটু পাত্তা দিতেও রাজি না। তখন হয়তো মন খারাপই হয়, কিন্তু সে তার মতো ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। আচ্ছা, সব বিড়ালই কি এমন, তার মালিক ডাকলে কোনো সাড়া দেয় না, কেবল ক্ষুধা পেলেই পেছনে ছুটে বেড়ায়?
গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালদের দেমাগি আচরণটাও বাড়তে থাকে। জাপানি একদল বিজ্ঞানী ঘরে পালিত ২০টি বিড়ালকে প্রায় ৮ মাস নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে পরীক্ষা–নীরিক্ষা করে দেখেছেন, বিড়াল ঠিকই তার মালিকের গলার স্বর আলাদাভাবে চিনতে পারে। সব সময় সাড়া কিংবা নড়াচড়া না করলেও হয়তো হালকা করে কান নাড়ায়, লেজ নাড়ায় অথবা কোনোমতে একটু চোখ খুলেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে। গবেষণা শেষে ফলাফল এমন পাওয়া গেছে যে কোনো বিড়াল যখন তার নাম ধরে মানুষকে ডাকতে শোনে, তখন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বিড়াল শুধু মাথা ঘোরায়, ৩০ শতাংশ বিড়াল শুধু কান নাড়ায় আর মাত্র ১০ শতাংশ বিড়াল সাড়া দেয় মিউ মিউ ডেকে কিংবা লেজ নাড়িয়ে! আর কোনো অপরিচিত মানুষের ডাকে তারা আরও বেশি নির্লিপ্ত থাকে।
একই গবেষণা তোমার পোষা বিড়ালটির ওপরও করে দেখবে নাকি!
বিড়াল অনেকটাই স্বাধীনচেতা প্রাণী, সে তোমার ডাকে সাড়া দেবে কি না, এটা তার মেজাজ বা মুডের ওপর নির্ভর করে। কেউ ডাকার সময় সে যদি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে, যেমন ধরো, শিকার খোঁজা, গা চুলকানো...তাহলে তার সাড়া পাওয়ার আশা না করাই ভালো। কুকুর আবার এদিক থেকে বেশ এগিয়ে, তাদের ডাকামাত্র তারা ছুটে হাজির হয়। আর বিড়াল কিনা বাঘের মাসি, নাকউঁচু স্বভাব তো তার একটুখানি থাকবেই৷
তবে তুমি যদি চাও, তোমার বিড়ালটি তোমার অনুরাগী হোক, তাহলে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিই! সব সময় খাবার দেওয়ার সময় ওর নাম ধরে ডেকে খাবার দেবে, আর বেশি বেশি আদর করবে। আরেকটা মজার বিষয় জানিয়ে রাখি, ওদের মিউ মিউ ডাককে আমরা মানুষেরা যেভাবে আন্দাজ করে কিছু একটা ধরে নিই, বিড়ালরাও আমাদের ভাষাকে এভাবেই কিছু একটা ধরে নেয় আর খুব নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা মনে রাখে। এই লেখাটি লেখার সময় ফিনো দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে ম্যাঁও ম্যাঁও করে ডাকল। আমি জানি আসলে সে বলল, ‘এই গলমে তো আর পালি না বাপু, লেখালেখি লেখে আমাল জন্য তালাতালি একটা মিল্কশেক নিয়ে এসো!’
আমার ফিনো আবার ‘র’ উচ্চারণ করতে পারে না আরকি!