মৌমাছি পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। এই বিদ্যুত কি আমরা কাজে লাগাতে পারি?

ইংল্যান্ডের একটি ফিল্ড স্টেশনে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন এলার্ড হান্টিং ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের নিয়মিত কাজ এটা। সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু তারপরও একটা মনিটরে ধরা পড়ে বায়ুমণ্ডলের অপ্রত্যাশিত অবস্থা। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এমনটা হওয়ার কথা নয়। ঝড় হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। তাহলে কেন এই অদ্ভুত অবস্থা?

বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন গবেষকেরা। বেশ কিছু সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তাঁরা দেখতে পান একঝাঁক মৌমাছি। প্রথমে বিষয়টা আমলে নেননি কেউ। কিন্তু প্রত্যাশিত কিছু না পেয়ে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন মৌমাছিগুলোকে। কারণ, মৌমাছি বা অন্যান্য পোকা যে সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, তা গবেষকেরা জানতেন।

মৌমাছির ঝাঁক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তাঁরা। আর তাতেই বেরিয়ে আসে অবাক হওয়ার মতো তথ্য। মৌমাছির ঝাঁক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, তা আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী।

মৌমাছি
ছবি: নিউ সায়েন্টিস্ট

মৌমাছি ওড়ার সময় অল্প হলেও বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে, এটা গবেষকদের জানা ঘটনা। কারণ, কম মাত্রার বৈদ্যুতিক চার্জ পৃথিবীর সব জায়গায় রয়েছে। চার্জ মূলত দুই ধরনের হয়। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ। বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। মৌমাছি ওড়ার সময় প্রতি সেকেন্ডে ২০০ বারের বেশি ডানা ঝাপটায়। এতে বাতাসে থাকা অণুর সঙ্গে ঘর্ষণ হয় এবং ধনাত্মক চার্জ সংগ্রহ করে। এই ধনাত্মক চার্জ মৌমাছিকে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত পরাগকে আকর্ষিত করতে সহায়তা করে।

বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট করা দরকার। তোমার বাসায় নিশ্চয়ই চিরুনি আছে। আর মাথায় তো চুল আছেই। এবার চিরুনি দিয়ে কিছুক্ষণ মাথা আঁচড়াও। এরপর কিছু ছোট ছোট কাগজের টুকরার কাছে চিরুনিটি ধরো। দেখবে কাগজগুলো চিরুনিকে আকর্ষণ করছে। কারণ, মাথা আঁচড়ানোর কারণে চিরুনিতে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হয়েছে। তাই চিরুনি ওই কাগজের ছোট টুকরাগুলো আটকে রাখতে পারে। একই কাজ করে মৌমাছি। এগুলো যখন বাতাসে উড়তে থাকে, তখন স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ফলে ফুলের পরাগের সঙ্গে মৌমাছি আটকে থাকতে পারে। এ ছাড়া এভাবে একটি মৌমাছি অন্য মৌমাছিদের বোঝাতে পারে, ‘আমি এই ফুলের মধু ইতিমধ্যে সাবাড় করেছি। তোমরা অন্যটায় যাও।’ কিন্তু কত শক্তিশালী বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে মৌমাছি?

আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের গবেষকেরা এই পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাঁরা মৌমাছির চাকের আশপাশে ক্যামেরা স্থাপন করে অপেক্ষা করেন মৌমাছির ফিরে আসার। একই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন তিনটি মৌমাছির ঝাঁক। গবেষকেরা দেখেছেন, মৌমাছির ঝাঁক প্রতি মিটারে ১০০ থেকে ১ হাজার ভোল্ট পর্যন্ত বৈদ্যুতিক চার্জ উৎপাদন করতে পারে। ঝাঁকের ঘনত্ব যত বেশি, চার্জ উৎপাদন হবে তত বেশি। এই চার্জ বজ্রমেঘের চেয়ে আট গুণ বেশি শক্তিশালী।

তাহলে কি এই বিদ্যুৎ আমরা কাজে লাগাতে পারি? উত্তর হলো, না। কারণ, একটি এলইডি লাইট জ্বালাতেই প্রায় ৫০০ কোটি মৌমাছি লাগবে। একটি লাইট জ্বালাতে এত মৌমাছি নিশ্চয় কেউ জড়ো করতে চাইবে না। তবে সাধারণত বাতাসে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক চার্জ থাকে, মৌমাছির ঝাঁক উড়ে যাওয়ার কারণে তা বেড়ে যায় অনেক বেশি।

মৌমাছির এই বৈদ্যুতিক চার্জ আসলে কোনো উদ্দেশ্য পূরণ করে কি না, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে চান তাঁরা।

সূত্র: স্মিথসোনিয়ানম্যাগ ডটকম, দ্য উইক জুনিয়র, পপুলার সায়েন্স